মনে হয় আমি একজন ব্যর্থ মা

সমস্যা:
আমার মেয়ের বয়স ১৪+। ক্লাস টেনে পড়ে, ছাত্রী হিসেবে খুবই ভাল। সব সময় ফার্স্ট হয়। এছাড়া যে কোনো প্রতিযোগিতা যেমন-বিতর্ক, ছবি আকাঁ এগুলোতে পারদর্শী। বেশ কিছুদিন আগে জানতে পারি ওর একটি ছেলের সাথে অ্যাফেয়ার আছে এবং সেই ছেলেটি কোনোভাবেই ওর যোগ্য না কিন্তু যতটুকু বুঝতে পারছি ছেলেটির জন্য সে সবকিছু ছাড়তে রাজী আছে। আমরা নিশ্চিত সামনে ও অনেক ভাল ক্যারিয়ার গড়তে পারবে কিন্তু ছেলেটির সাথে বিয়ে হলে ক্যারিয়ার তো দূরের কথা পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যাবে। আমার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমার কোনো কিছু ভাল লাগে না প্রচন্ড কান্না পায়। মনে হয় suicide করে ফেলি। মনে হয় আমি একজন ব্যর্থ মা। কোনো কিছুই আমাকে আর আনন্দ দেয় না। আমি এখন কি করতে পারি, কি করে আমার মেয়েকে ওই পথ থেকে ফেরাবো এবং নিজে সুস্থ জীবন যাপন করব দয়া করে জানালে খুবই উপকৃত হব।
 
পরামর্শ:
প্রথমে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি মাকে। অনেক সময় মেয়ের এ ব্যাপারগুলো মায়েরা গোপন করে কিন্তু আপনি বুঝতে পেরেছেন আপনার মেয়ে একটি সমস্যায় জড়িয়ে গেছে। আর এই সমস্যটা যদি চলতে থাকে তাহলে আপনার মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে, তাই মেয়ের ভবিষ্যৎ কিভাবে উজ্জ্বল করা যায় সে ব্যাপারে আপনি সাহায্য চেয়েছেন। আপনি যে বয়সটির কথা বলেছেন ১৪+ এটা হল বয়ঃসন্ধি কাল। এসময় ছেলেমেয়েদের কিছু হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে, মানসিক পরিবর্তন ঘটে যার জন্য আশেপাশের জিনিষগুলোর প্রতি তাদের একটা আগ্রহ তৈরি হয়, বিশেষ করে পৃথিবীর অজানা জিনিষগুলোর প্রতি ওদের আগ্রহ বেশি থাকে। সেক্সুয়াল ব্যাপারটির ক্ষেত্রেও বিপরীত সেক্স এর প্রতি তাদের একটি আলাদা আগ্রহ জন্মায় । বয়ঃসন্ধি কালে চট করে একজনকে ভাললাগা ভালবাসার ব্যাপারটি খুব তাড়াতাড়ি ঘটে যায়। এ সময় ছেলেমেয়েরা একটা emotional ট্রানজেকশনের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে ।এ সময় যদি কেউ emotionally কোনো ধরনের কথা বলে তখন সে মনে করে যে ব্যক্তিটি তাকে খুব importance দিচ্ছে । তার প্রতি ওর অনেক emotional bondage, অনেক আগ্রহ তৈরি হয় এবং মনে করে ঐ ব্যক্তিকে নিয়ে সে তার জীবনের সবকিছু পাড়ি দেবে কিন্তু এটা যে ক্ষণিকের একটা সময় সেটা সে বুঝতে পারে না কারণ সে বয়স তার হয়নি। সুতরাং বাবা-মা এ ব্যাপারটা নিয়ে মেয়েকে বকাঝকা না করে বয়সের সাথে যে এই ধরনের একটা পরিবর্তন ঘটতে পারে সে ব্যাপারটা নিয়ে এবং ছেলেটির সাথে জড়িত থাকলে কি কি ক্ষতি হতে পারে, তার জীবনটা খারাপ দিকে যেতে পারে, কেন যেতে পারে, ছেলেটি ভাল কি ভাল না অর্থাৎ ছেলেটির যেসব জিনিষ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন, সেগুলো নিয়ে বন্ধুর মত খোলামেলা আলোচনা করে বোঝাতে পারেন। আস্তে আস্তে মেয়েটা হয়ত বুঝতে পারবে। রাগারাগি চাপাচাপি করলে অনেক সময় বাচ্চারা বোঝে না ওরা মনে করে  অভিভাবক তার উপর এটা চাপিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে মা নিজেকে দোষারোপ করার কোনো কারণ নেই যে আপনি একজন ব্যর্থ মা বরং আপনি একজন সফল মা কারণ আপনার মেয়ের যে ছোটখাট পরবির্তনগুলো ঘটেছে সেগুলো আপনি খোঁজখবরের মধ্যে রেখেছেন এমনকি মেয়ের ভালবাসার ব্যাপারটিও খোঁজখবরের মধ্যে রেখেছেন।আসলে বাচ্চাদের বুঝানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অনেক সময় প্রত্যাশা থাকে যে আমি যেভাবে বলব আমার বাচ্চা সেভাবে বুঝে যাবে। কিন্তু আশেপাশের পরিবর্তনের সাথে বাচ্চারা অনেক সময় adjust করে ফেলে, বন্ধু-বান্ধবদের থেকে অনেক সময় উৎসাহ উদ্দীপনাটা পায়। তো এক্ষেত্রে সবকিছু খোলামেলা আলোচনা করলে মেয়েটা হয়তবা বুঝতে পারবে  না হলে  সরাসরি একজন বিশেষঙ্গের পরামর্শ নিতে পারেন অথবা পরিবারের সবাই ভালবাসা দিয়ে বুঝিয়ে যদি মেয়েটিকে না বোঝাতে পারেন তাহলে আপনারাও সরাসরি একজন বিশেষঙ্গের সাথে আলোচনা করতে পারেন যে আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে মেয়েটিকে কতটুকু সাহায্য করতে পারেন। আমি মনে করি আপনার মেয়ের সমস্যা এই সময়ের সমস্যা, বয়সের সমস্যা এবং এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
পরামর্শ দিচ্ছেন,
ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ


দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য ও বিয়ে
Next articleমানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তরুণদের ভাবনা
চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট। অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here