সমস্যা(প্রশ্ন):
একটা বিষয়ে একটু পরামর্শ দিলে উপকৃত হবো। বাইপোলার ডিজঅর্ডারের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সেলিংও কি জরুরি ?
আমার বন্ধুর ছেলের বয়স ১৯ বৎসর। গত এক বছর ধরে এই মানসিক রোগের জন্য ঝুনু সামসুননাহার আপার চিকিৎসাধীন আছে। কিছুটা উন্নতি হলেও একজন ছাত্রের যেটা করা প্রয়োজন সেই লেখাপড়াটা পুরোপুরিই বাদ দিয়ে বসে আছে ছেলেটি। তার পিতা-মাতার একটিই ছেলে। এই সন্তানের সুস্থতা নিয়ে যারপরনাই চিন্তিত অভিভাবক। এই পর্যায়ে জানাচ্ছি ছেলেটিকে ডা. মোহিত কামাল, ডা.শাহাবুদ্দীন মো. মুজতবা, ডা.নিজাম, ডা. মামুনসহ আরো কয়েকজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়েছে। সঠিক পরামর্শ দিয়ে উপকার করবেন আশা করি । আল্লাহ হাফেজ।
পরামর্শ
আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই। শুরুতেই বলি আপনার প্রশ্নের দুটি অংশ আছে। ছোট করে হলেও দুটোরই আলাদা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছি।
শুধু বাইপোলার নয়, যেকোনো রোগেরই কাউন্সেলিং দরকার আছে। রোগটি কী, কেন হয়, তার প্রকৃতি কেমন, রোগীর কী করতে হবে, অভিভাবকদেরই বা কী করা উচিত, চিকিৎসার ধরন কেমন, কেনইবা চিকিৎসা লাগবে, এসব জানাও কাউন্সেলিংয়ের অংশ।
‘বাই পোলার অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার’ রোগটির পুরো নাম। এখানে ‘বাই’ শব্দের অর্থ দুই, ‘পোলার’ শব্দের অর্থ মাথা। অর্থাৎ এটি একটি দুই মাথার রোগ। ‘অ্যাফেকটিভ’ বলতে মুড বা মন মেজাজকে বুঝানো হয়ে থাকে।
এই রোগটি দুই মাথার একটি মর্জি বা মেজাজ জনিত রোগ। আর একটু সহজ করে বললে, এভাবে বলা যায় যে এ রোগটি মনের দুটি দিক নিয়ে গঠিত হয়। এক দিকে থাকে ‘ম্যানিয়া’, যেখানে সব কিছুতেই বেশি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশি খুশি, বেশি ভালো থাকা, ঘুমের দরকার নাই, খাবারের দরকার নাই, প্রচুর শক্তি, টাকা খরচের ইচ্ছা, ঘোরাঘুরি করার ইচ্ছা, রঙিন ও ফিটফাট জামা কাপড় পড়ার ইচ্ছা, অনেক কিছু করে ফেলার ইচ্ছা, বড় বড় লোকদের সঙ্গে জানাশুনা আছে, জীবনের অনেক কিছু করে ফেলবে এমন ভাব তৈরি হয়। অন্যদিকে থাকে, সব কিছুতেই খারাপ হওয়ার আশঙ্কা। মন খারাপ বা ‘বিষন্নতা’। কিছুই ভালো লাগে না, মরে যেতে মন চায়, কিছুই করতে মন চায় না, সব কিছুতেই হতাশা।
এই রোগটির মূল চিকিৎসা আসলে ওষুধ দিয়েই হয়। মনের দুই অতিরিক্ত অবস্থাকে মাঝামাঝি ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। মনটাকে উপর ও নিচে থেকে টেনে মাঝখানে রাখাই এ ধরনের রোগের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য থাকে। সঠিক চিকিৎসা হলে এ রোগে আক্রান্ত একজন মানুষ সম্পূর্ণ ভালো থাকতে পারে। তাঁরা সব ধরনের কাজই করতে পারে।
আপনার প্রশ্নের অন্য অংশে আছে, সঠিক পরমর্শের কথা। পরামর্শ অনেকখানি দেওয়াই হয়ে গেছে। আর যেটি বলতে চাই সেটি হলো, ঘন ঘন ডাক্তার পরিবর্তন করা ভালো হবেনা। তাতে চিকিৎসা পদ্ধতিও ব্যহত হতে পারে।
রোগটির বিষয়ে ভালো করে জেনে চিকিৎসা করালে বাইপোলারের রোগী প্রায় স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর কিছুটা হলেও দিতে পেরেছি। ভালো থাকবেন।
পরামর্শ দিচ্ছেন
ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
দৃষ্টি আকর্ষন
মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে info@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।