কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা নিজেদের ভুল সহজভাবে স্বীকার করতে দ্বিধা বোধ করেন এবং বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করে এটাই বোঝাতে চান যে তাদের দ্বারা কোন ভুল সংঘটিত হয়নি। কেন তাদের মাঝে এমন মনোভাব কাজ করে এটাই আজ জানার প্রয়াস করবো।
মানুষের মাঝে ভুল করে সেটি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানোর মানসিকতা অত্যন্ত প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যায়। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত, যে কোন প্রকারেই হোক, ভুল করে সেটি স্বীকার করে নেওয়ার বদলে এসব মানুষ বিভিন্ন ভাবে নিজের মতের প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করেন এবং দেখাতে চান যে তাদের দ্বারা কোন প্রকার ভুল সংঘটিত হয়নি। বিভিন্ন কারণে মানুষের মাঝে এমন মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। নিচে তেমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হল।
১) বিচারে অসংগতি
মানুষের বিচার ব্যবস্থায় অসংগতির ফলে অনেক সময়ই ব্যক্তি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়। এটি হল এক ধরণের মানসিক অস্বস্তি যা একজন ব্যক্তি একের অধিক স্ববিরোধী বিশ্বাস, ধারণা বা নীতি ধারণ ও বহন করে। এ ধরণের মানসিক অসংগতি দূর করে পুনরায় সংগতি ফিরাতে তাকে তার সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় নয়তো তাদের আচরণ। ব্যক্তি প্রতিনিয়ত তাদের আচরণের সাথে তাদের ধারণা বা মানসিকতার সংগতি রক্ষায় প্রয়াস করে যায় যেন মানসিক এই অসংগতি এবং মানসিক চাপ হ্রাস পায়। যখন একজন মানুষের দ্বারা কোন ভুল হয় অর্থাৎ আচরণে অসংগতির সৃষ্টি হয় তখন সে তার এই আচরণ বা ভুলকে শুধরে না নিয়ে বা মেনে না নিয়ে নিজের বিচারকে পরিবর্তন করে এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে এই সমস্যার সমাধান করার প্রয়াস করে। আর এমন মানসিকতাই তাকে ভুল স্বীকারে বাধা প্রদান করে।
২) অস্বস্তি এড়ানোর প্রচেষ্টা
এই মানসিকতা একজন ব্যক্তিকে নতুন বা সংশোধিত ধারণাকে পূর্ব থেকেই তাদের মাঝে সঞ্চিত ধারণা হিসেবে প্রকাশ করতে উৎসাহিত করে। এ ধরণের প্রবণতা ভুল করার পেছনের কারণ বা ধারণাগুলিকে প্রতিষ্ঠিত ধারণার সাথে অদল বদলের প্রবণতা সৃষ্টি করে। ভুল করার কারণকে স্বীকার না করে সেটিকে অন্য যুক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে যাতে সৃষ্টি হওয়া অস্বস্তি এড়ানো যায়।
৩) ভুল ধারণা
নিজের সম্পর্কে এই ভুল ধারণা একজন মানুষকে নিজের সক্ষমতার বাইরের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। এই প্রবণতা থেকেই একজন মানুষ ভুল করে এবং সেটি নিজের অসক্ষমতা হিসেবে মেনে নিতে পারেনা এবং অস্বীকার করে।
৪) অহম
অহম একজন মানুষকে বিবেক বর্জন করতে বাধ্য করে। যখন সে কোন ভুল করে এবং সেটি স্বীকৃত হয়ে যায়, তখন অহংকারের আবেশে সে তার ভুলকে স্বীকার করতে অস্বীকার করে। এটিকে সে নিজের দুর্বলতা হিসেবে নেয় এবং জিদের বসে নিজের যুক্তিতেই অনড় থেকে ভুল স্বীকারে অস্বীকৃতি জানায়।
৫) অজ্ঞতা
অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের ভুল স্বীকারে অস্বীকৃতি জানানোর মানসিকতার পেছনে ব্যক্তির অজ্ঞতা কাজ করে। একজন অজ্ঞ মানুষ চোখের সামনে থাকা সত্যকেও অস্বীকার করে। তারা তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে অজ্ঞ হয় এবং এর থেকে ভালো কিছু করার সামর্থ্য তাদের থাকেনা। ফলে ভুল স্বীকার করার সামর্থ্য ও তাদের থাকেনা।
একজন ব্যক্তি তার মাঝে থাকা এসব মানসিক সীমাবদ্ধতার কারণে নিজের করা কোন ভুলকে অস্বীকার করে। তার মাঝে যেমন ভুল স্বীকার করার সাহস এবং আত্মবিশ্বাস থাকেনা তেমনি অজ্ঞানতার কারণে তারা এই নেতিবাচক মানসিকতাকে ত্যাগ করতেও অসমর্থ হয়। তাই সর্ব প্রথম আমাদের চিন্তাভাবনা উন্নত করতে হবে, এবং ভালো কাজ করার প্রয়াস করতে হবে। নিজেদের মাঝে ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে পারলেই এই নেতিবাচক মানসিকতা থেকেও মুক্ত হতে পারা যাবে। এতে আমাদের আচরণ, অনুভূতি এবং ব্যক্তিত্বও উন্নত হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে