একজন আর একজনকে ভালোবাসার পূর্ব শর্ত হলো বিশ্বাস। ভালোবাসার অনেক কিছুই বাস্তবতার সাথে মেলানো ও ব্যাখ্যা করা যায় না। ভালোবাসা নিয়ে অনেক গুণীজনের অনেক বিখ্যাত উক্তি বিদ্যমান। কিন্তু ভালোবাসা কি কখনো মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে? আজকে এই অংশ নিয়ে অতি সামান্য আলোচনা করার চেষ্টা করব।
একদিন বহিঃ বিভাগে কর্তব্যরত অবস্থায় ১৮-২০ বছরের একটি সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে তার মা ঢুকলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনার কি অসুবিধা”? মেয়েটি উত্তর দিলেন তার কোনো অসুবিধা নাই, তার মা জোর করে তাকে নিয়ে এসেছে। মা কি জন্য জোর করে নিয়ে এসেছেন, জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন একটি ছেলে তাকে ভালোবাসে এ জন্যই তার মা তাকে নিয়ে এসেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাবতে থাকলাম ভালোবাসা কি ডাক্তার দেখিয়ে সারানো যায়? পরে আবার ভাবতে থাকলাম ছেলেটি হয়তো বখাটে বা ছেলেটিকে মেয়েটির পরিবারের লোক পছন্দ করে না ইত্যাদি। আমার স্যার মায়ের সঙ্গে কথা শুরু করলেন, আমি মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকলাম। আস্তে আস্তে জানতে পারলাম মেয়েটি বিশ্বাস করে যে ছেলেটি তাকে ভালবাসে তাকে সে কোনোদিন দেখে নাই, শুধু পরিচয় গল্পচ্ছলে শুনেছে মাত্র। মেয়েটির পরিবারের লোকজন প্রাথমিক ভাবে সত্য মনে করে ছেলেটির সাথে যোগাযোগ করে ও জানতে পারে ছেলেটি বিবাহিত এবং ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির এইসব বিষয়ে কোনোদিন কোনো কথাই হয় নাই। আমরা আরও আনুসাঙ্গিক তথ্য উপাত্য জানার পর মেয়েটির সাথে আবার কথা বলতে গেলে জানতে পারলাম ছেলেটি মেয়েটিকে আসলেই অনেক ভালোবাসে কিন্তু সামাজিক অবস্থার কারণে কাউকে বলতে পারছে না এবং ওই মেয়েটি ছাড়া ছেলেটির জীবন অসম্পূর্ণ থাকবে। আমরা এবার মা ও মেয়েকে একসঙ্গে বসিয়ে মেয়ের বিশ্বাসকে ভুল বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা করলাম কিন্তু সকল তথ্য উপাত্ত্যকে অগ্রাহ্য করে মেয়েটি তার বিশ্বাসে অনড় রইলেন। এই অবস্থাই হল ভালোবাসার ভ্রান্ত বিশ্বাস বা Delusion of Love বা Erotomania বলে।
এটা মানসিক রোগের লক্ষণ একটা। প্রধাণত মেয়েদের বেশি হতে দেখা যায়। রোগীরা বিশ্বাস করতে থাকেন তাকে এমন একজন ভালোবাসে যে কিনা অনেকটাই রোগীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকেন। সাথে সাথে রোগীরা বিশ্বাস করতে থাকেন রোগী যতটুকু ছেলেকে ভালবাসেন ওই ছেলেটা রোগীকে আরও বেশি ভালবাসেন এবং রোগী ছাড়া ছেলেটার জীবন অসম্পূর্ণ থাকবে। সামাজিক বা পারিপার্শ্বিকতার জন্য তার ভালোবাসার মানুষ তার কাছে আসতে পারছেন না।
পরবর্তীতে অনেককে পেয়েছি যাকে সালমান খান ভালোবাসে, শাহরুখ খান ভালোবাসে। তখন আর মেলাতে কষ্ট হয়নি।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।