ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে বাস্তবতা কী ভুলে গিয়েছি

আমি নাঈম, আমার বয়স ১৭। আমি শুচিবায়ুগ্রস্ত, তরল জাতীয় পদার্থ আমার শরীরে লাগলে অথবা ধুলা জাতীয় ময়লা লাগলে অস্থিরতা বোধ হয়। বাসায় কোনো একটা জিনিস উল্টে থাকলে, সেটা সোজা করতে হয়-হোক সেটা পাপোষ বা জুতা কিংবা মগ-জগ। অন্যদিকে আমার ইনসমনিয়া, সোশ্যাল ফোবিয়াও আছে। বয়স ১৮ হতে যাচ্ছে, ২০১৫ সাল থেকে ঘরোয়া আসক্তি ও ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে বাস্তবতা কী ভুলে গিয়েছি। আচরণগত দিক দিয়ে খুব বদমেজাজি হয়ে উঠেছি। মানসিক চেতনা, ক্লান্তি দূর করার কোনো উপায় থাকলে, ঔষধ থাকলে আমাকে জানান। আমি, Indever/Nextrial/Disopan (ক্লোনাট্রিল) সেবন করি। মনের উল্লম্ফনতা বাড়াতে Frenxit কেমন কাজ করে?
অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ: তোমার OCD ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসা-পদ্ধতি থেকে আমার মনে হচ্ছে তুমি হয়তো কোনো মনোরোগবিদ্যা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছ। এখানে যে তোমাকে শুধু ঔষধ খেয়েই যেতে হবে তা নয়, OCD-তে চিকিৎসার অংশ হিসেবে সাইকোথেরাপিটাও খুব জরুরি।
সাইকোথেরাপির মধ্যে কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, কগনেটিভ থেরাপি, বিহেভিয়ার থেরাপি এমন অনেক ধরনের সাইকোথেরাপি আছে যেটা তোমার OCD-তে কাজে লাগতে পারে। যদি তুমি বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে থাকো তাহলে অবশ্যই উনার কাছে ফলোআপে যাও আর যদি এখনো না দেখিয়ে থাক তাহলে অবশ্যই তোমার উচিত হবে একজন মনোরোগবিদ্যা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে তোমার অসুখটা কী সেই রোগটা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া।
চিকিৎসা-পদ্ধতিতে মেডিসিন এবং সাইকোথেরাপিসহ আরো অনেকগুলো জিনিস কাজ করতে পারে। পরিবারের লোকজনের সাহায্যও প্রয়োজন হতে পারে। তোমাকে আগে তোমার রোগটা সঠিকভাবে বুঝতে হবে তাহলে তুমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবে। OCD রোগটা একটু দীর্ঘমেয়াদি রোগ। যার কারণে দীর্ঘমেয়াদে ঔষধ খেতে হয়, চিকিৎসা করতে হয়। তুমি শুধু ঔষধ-নির্ভর হতে চাচ্ছ ঔষধের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান করতে চাচ্ছ, কিন্তু ঔষধ দিয়ে সব সমস্যার সমাধান আসবে না। চিকিৎসার যে পদ্ধতিগুলো আছে সবগুলোর সমন্বয়ে হবে তোমার চিকিৎসা। তোমাকে অবশ্যই চিকিৎসকের মতামত অনুযায়ী চলতে হবে আর ঔষধ-নির্ভর না হয়ে, তোমার চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন-পরিবর্ধন করাও জরুরি-সেটা সাইকোথেরাপির মাধ্যমে হয়ে থাকে। ইনসোমেনিয়া, সোশ্যাল ফোবিয়া আলাদা চিকিৎসা না। এমনও হতে পারে OCD-এর অংশ হিসেবে এই জিনিসগুলো আসতে পারে। সুতরাং তোমার সুনির্দিষ্ট ডায়াগনোসিস, সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা এবং সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চলতে হবে তাহলেই তুমি তোমার সমস্যা থেকে বের হতে পারবে। ধন্যবাদ।

Previous articleমাদকের হাতেখড়ি উৎসবে-পার্বণে
Next articleবিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে সাইকেল র‌্যালি
প্রফেসর ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ
চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট। অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here