আমরা বেশ ছোটবেলা থেকে দেখেছি আমাদের আশেপাশে কারো মানসিক কোনো অসুবিধা হলে তাড়াতাড়ি করে বিয়ে করিয়ে দেওয়া হত। ভাবা হত বিয়ে করিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক হত বা না হত সেটা মিলিয়ে দেখার মত চোখ তখন আমার ছিল না। দেখাও হয় নি। তবে এই ধারণা আমাদের সমাজে বেশ দেখা যায় এবং আমরা এটা ভাবতে পছন্দ করি যে, জোয়ান বয়সে বিয়ে করিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
হাসপাতালে ভর্তি, গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীর অভিভাবকদের বলতে শুনেছি, স্যার বাড়ি গিয়ে বিয়ে করিয়ে দিব ঠিক হয়ে যাবে। আবার অনেকে সতর্কতার সাথে জিজ্ঞাসা করেন, স্যার বাড়ি নিয়ে কি বিয়ে দিয়ে দিব? ভালো হয়ে যাবে। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রে এমন ধারণা পোষণ করতে দেখেছি। অনেকে দ্বিতীয়বার ভর্তির পর বলেন, স্যার আগেরবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে বিয়ে করিয়ে দিয়েছি, ভাবছিলাম ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ের পর তো আবার বাইড়া গেলো। সবার মধ্যে না হলেও বেশ বড় অংশের মধ্যে এমন দেখা যায়।
অন্যভাবে নতুন সমস্যা আমরা দেখতে পাই। রোগীর পক্ষ থেকে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে, বিয়ের আগে আমাদের কিছুই বলে নি। আমরা জানতাম না। আমরা অনেক সময় ফিরতি প্রশ্ন করি জানলে কি বিয়ে করতেন? তখন বেশ আপত্তিকর অবস্থার অবতরন হয়।
পেশাগত অবস্থার কারণে আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সময় আমার ছাত্রছাত্রীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বিয়ে জীবনে স্ট্রেস এর কারণ কিনা। বেশিরভাগই বলেছিলেন বিয়ে জীবনের একটি সুখকর মুহূর্ত। এই ঘটনা আমাদের সবার অবস্থা প্রকাশ করে না তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই উত্তর আমাকে শঙ্কিতই করেছিল।
কয়েকটা অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
১) বিয়ে দিলে মানসিক রোগ ঠিক হয়ে যাবে।
২) মানসিক রোগীদের বিয়ের আগে না জানিয়ে বিয়ে দেওয়া।
৩) মানসিক রোগীদের বিয়ে নিয়ে আমাদের মনোভাব।
৪) বিয়ে নিয়ে আমাদের সাধারণ ধারণা।
বাস্তবতা
আমাদের আচরণ, মনোভাব গুলো বিজ্ঞান এবং গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে তুলনা করলে আমরা নিজেদের অবস্থা কিছুটা আন্দাজ করতে পারব। গবেষণায় দেখা গেছে, বিয়ে আমাদের জীবনে একটি অন্যতম স্ট্রেস। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, নতুন জীবন সঙ্গী, নতুন দায়িত্ব, নতুন অভ্যাস সহ আরও অনেক কিছুই এই স্ট্রেস এর কারণ। সুখকর মুহূর্ত হওয়া সত্ত্বেও এটি স্ট্রেস হতে পারে। এর সাথে সাথে গবেষণায় আরও দেখা গেছে, স্ট্রেস মানুষের মানসিক রোগ বাড়ায়। স্ট্রেস প্রভাবিত করে না এমন গবেষণা ফলাফল পাওয়া গেছে বলে আমার জানা নাই। সুতরাং, বিয়ে কখনোই মানসিক রোগের ওষুধ হতে পারে না। আমাদের সমাজে প্রচলিত এই ধারণা পরিবর্তন অতি জরুরি।
উল্লেখ্য বাকি অংশ গুলো বেশ স্পর্শকাতর। তাই এ ব্যাপারে এখানে আলোচনা করতে চাই না। শুধু এতো টুকু বলতে চাই যে, বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার এবং আমাদের চিন্তা চেতনা বিজ্ঞানের সাথে একটু মিলিয়ে নিলে ভালো ফলাফলই পাওয়া যাবে, খারাপ নয়।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।