নিয়মিত মাদক গ্রহণের ফলে ব্যক্তির মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় পরিবর্তন দেখা দেয়, যার ফলে ব্যক্তি পরবর্তীতে পুনরায় গ্রহণ করেন এবং ধীরে ধীরে তিনি স্থায়ীভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ৬৮ লক্ষ মাদকাসক্ত রয়েছে, যার অধিকাংশ পুরুষ (৮৪%)। মাদকাসক্তদের ৯০% ই কিশোর, যুবক ও ছাত্র-ছাত্রী এবং এদের ৫০ লক্ষ ইয়াবা আসক্ত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে আজ বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। আর্ন্তজাতিক মাদক বিরোধী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগ সেমিনারটির আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল। চেয়ারপার্সন হিসেবে ছিলেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব।
অনুষ্ঠানে মনোরোগবিদ্যা বিভাগের বিশেষ কার্যক্রম ডি-এডিকশন ক্লিনিকের সমন্বয়ক সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান মাকসুদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এদিন ডি-এডিকশন ক্লিনিকের ওয়েব সাইট (www.addictionclinicbsmmu.com) এরও উদ্বোধন করা হয়।
ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান মাকসুদ বলেন, মাদকাসক্তরা এমনিতেই নিজে থেকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহ দেখান না। তাই আউটডোরে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের জন্য চিকিৎসা নেওয়া আরো কঠিনসাধ্য। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদেরকে আরো সহজে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। ডি-এডিকশন ক্লিনিকের মাধ্যমে মাদকাসক্ত সহ ইন্টারনেট ও অন্যান্য আসক্তির চিকিৎসা সেবাও প্রদান করা হয় বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, মাদক আমাদের সমাজে মহামরী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য সকলের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-এডিকশনের উপর গবেষণা কার্যক্রম চালু করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার বলেন, মাদক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই এর চাহিদা কমানো এবং যোগান বন্ধে সমাজের সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে কাজ করতে হবে। তিনি সায়েন্টিফিক বিষয়গুলি মানুষের সামনে নিয়ে আসার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারপরও আমাদেরকে শিক্ষা, গবেষণা ও সেবায় এগিয়ে যেতে হবে। মনোরোগবিদ্যা বিভাগের ডি-এডিকশন ক্লিনিক উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন মাদকাসক্তির মত ইদানিংকালে ফেসবুক এবং ইন্টারনেট আসক্তিও ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। এটা নিয়েও আমাদেরকে কাজ করতে হবে। নিজের বক্তব্যেরর পর ডি-এডিকশন ক্লিনিকের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন তিনি।
এরপর মাদকাসক্তি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. তৈয়বুর রহমান রয়েল, কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের রেসিডেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম এবং বিএসএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সালেহ্ উদ্দিন।
তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর এবং প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনায় আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এম কামরুল হাসান-এ্যাডভাইজার স্পেশালিস্ট ইন সাইকিয়াট্রি, এএফএমআই, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট , অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দিন, বিভাগীয় প্রধান, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মহসিন আলী শাহ্, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলাগিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড মিটর্ফোড হাসপাতাল এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোয়েবুর রেজা চৌধুরী।
অনুষ্ঠানটিতে বৈজ্ঞানিক সহযোগী হিসেবে ছিল ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটিডে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএসএমএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের ফেস-এ রেসিডেন্ট ডা. সায়েদুল ইসলাম সাইদ।