প্রতিবন্ধীদের হাত হোক কর্মের হাতিয়ার:মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানের মায়ের কথা

0
84
প্রতিবন্ধী
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশই কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী। তাই আমরা কিছু কিছু অভিভাবক ও শুশীল সমাজের কিছু সুজন ব্যক্তি সমীক্ষা আলোচনা করে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণার্থে নিন্মোক্ত সুপারিশগুলো কার্যকর করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরছি।

সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বাসস্থান, যৌন নির্যাতন, সাংস্কৃতিক, তথ্য ও আইনি সহায়তা এবং স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য উন্নয়ন বিষয়ক কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে চাই।

জীবন চলার সার্বিক সহায়তা প্রদান এবং সেবা প্রদান করে প্রতিষ্ঠাগত সামর্থ উন্নয়নের মাধ্যমে যথেষ্ট সহায়তা করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে ভৌত উন্নয়নও অতি জরুরী, তাই সবার আগে একটা প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র দরকার। যেখানে দাড়িয়ে আমরা আমাদের দাবী দাওয়াগুলো শিক্ষা ও কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে পারি।

তবে এই সুপারিশগুলোর কোনটিই কেবল আমাদের মত সাধারণ লোকবল দিয়ে কার্যকর করা পুরোপুরি সম্ভব নয় এবং সফলও হবেনা। তবে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মন্ত্রণালয়, সচিব ও কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা পেলে কার্যকর করা সম্ভব হবে। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি সর্বতোভাবে।

খাদ্য: সমন্বিত উদ্যোগের ফলে মাঠ পর্যায়ে কৃষি উৎপাদনে সয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যদিও অপর্যাপ্ত ভূমি জনগণের খাদ্য উৎপাদন করে স্বাবলম্বি হওয়ার পথে বাধা। তবুও সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন করে তাদের কৃষিতে কর্ম দক্ষতা বাড়াতে হবে। সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ করে তুলতে হবে।

স্বাস্থ্য: প্রতিবন্ধীদের ধরন চিহ্নিত করে রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসা দিতে হবে। কারণ প্রতিবন্ধীদের রোগের ধরনের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। তারা শারিরীক এবং মানষিকভাবে বিপর্যস্ত সাথে স্বাস্থ্যঝুকিও। প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের সেবা কেন্দ্রে নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা ও পুনর্বাসন সেবা মূলধারার স্বাস্থ্য সেবার সাথে যুক্ত করতে হবে।

শিক্ষা: শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের সরকার বাজেটের একটা বিরাট অংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্ধ দিচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা এবং সুনির্বাচিত শিক্ষা যে শিক্ষা দ্রæত প্রবৃদ্ধি অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে সেই শিক্ষাই দিতে হবে যে শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি ও ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী।

প্রতিবন্ধীদের প্রাথমিক পর্যায়ে সাক্ষরতা ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা তারপর কারিগরি শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষাসহ মৌলিক শিক্ষা একীভূত করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের হৃদয়ে জ্ঞানের সমাবেশ ঘটিয়ে একবিংশ শতাব্দীর চাহিদা মত মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে সংখ্যাগত সাফল্য বাড়লেও প্রতিবন্ধীদের বেলায় তার গুণগত মান মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের শিক্ষার মান ও দৃষ্টিভঙ্গি উদার করতে সবাই এগিয়ে আসতে হবে। এটা করুনা নয় এটা তাদের মৌলিক অধিকার। কারণ শিক্ষাই মানব সম্পদের গুণগত মানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে এবং শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে।

কর্মসংস্থান: প্রতিবন্ধীদের প্রথমত, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরী করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সঠিক কারিগরি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে দক্ষ মানব সম্পদ রূপে গড়ে তোলা হবে। আত্মকর্মসংস্থানে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশী। তাই তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রতিবন্ধীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এর বাইরেও যেমন- সেলাই প্রশিক্ষণ, গাভী লালন-পালন, মৎস্য চাষ ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে তারা আনুষ্ঠানিকখাতে ভাল ও বেশী মজুরী পায়। তখন তারা একটি সুন্দর ও সুষ্ঠ কর্ম পরিবেশ তৈরি করে ইচ্ছেমত নির্ভয়ে কাজ করতে পারবে। যেহেতু তারা সমাজে সকল ক্ষেত্রেই অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়।

যৌন নির্যাতন: ঘরের বাইরেও প্রতিবন্ধীরা অহরহ নির্যাতনের স্বীকার হয়। সামাজিক লোক লজ্জার ভয়ে তারা নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির পরিস্থিতির যথেষ্ট তথ্য গোপন রাখে। তাই সঠিক তথ্য ফুটিয়ে তোলে ধরতে না পারায় দোষী ব্যক্তির বিচার হয় না। আমরা যারা সচেতন তারা সঠিক তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দোষীদের বিচারের সম্মুখীন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করব। কিন্তু তার আগে আমাদের নির্দিষ্ট কাঠামোগত স্থান পেতে হবে। সেখানে থাকবে সঠিক নীতিমালা, নজরদারী ও সহায়তা। তাদের সঠিক স্বীকৃতির ব্যবস্থা করলে তাদের মর্যাদা বাড়বে।

সাংস্কৃতিক: প্রথমে তাদের প্রধান সংস্কৃতির স্থানগুলোতে সংরক্ষণের মাধ্যমে অবাধ বিচরণের সুযোগ দিতে হবে। ক্লাসিকেল ও ঐতিয্যবাহী লোক সংগীত ও দেশাত্মবোধক সংগীতের সৃজনশীলতার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বৈচিত্রতা আনতে হবে। প্রতিবন্ধীদের প্রফুল্ল থাকার জন্য ও মনোরঞ্জনের জন্য নাচ-গানের ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।

তথ্য ও প্রযুক্তি: প্রতিবন্ধীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বন্ধুত্ববাদের বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। যাতে তারা মানবিক উন্নয়নে সহায়তা পায় প্রযুক্তিগতভাবে সহায়তা করেও তথ্য ও প্রযুক্তি জগতে তাদের বিচরণ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার গুরুত্ব অপরিসীম।

আইনি সহায়তা: প্রতিবন্ধীদের আইনগত সহায়তা জরুরী। তারা কেউ কেউ আত্মীয় পরিজন বিবর্জিত হওয়ায় আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে সক্ষম নন। তারা বিচরন করেন নিরাপত্তাহীনতায় যার ফলে যৌন ও শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারিত হয়েও আইনের আশ্রয় নিতে পারেনা। আইনের আশ্রয় না নেওয়ার ফলে মানসিক যন্ত্রনায় ভোগেন। তাই প্রতিবন্ধীদের আইনি সহায়তায়ও পদক্ষেপ নেওয়ার জরুরী সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে আইনের যথাযোগ্য মর্যাদা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি না হয় এবং আইনের অধীনে প্রণীন বিধিমালা প্রয়োগ করা হয়।

বহুমুখী বিষয়: উপরোক্ত সংখ্যাগুলো ছাড়াও তাদের সার্বিক সহায়তার জন্য আলোচনা সভা, সেমিনার, সিস্পোজিয়াম প্রদর্শনের মাধ্যম হবে আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি ইউযনিয়নে একটি করে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। কিছু কিছু সুজন ইতিমধ্যে কাজ করছে কিছু দাবী নিয়ে তারাও সফলতা লাভ করছে। আমাদেরও সুনির্দিষ্ট অভিলক্ষে পৌছাতে কৌশলগত ভাবে কার্যাবলী সুবিন্যাস্ত করতে হবে। সেবাকে নতুন উদ্বাভনীর মাধ্যমে মেধাকে ডিজিটালইজেশন করতে হবে। ফলে সেবা পৌছে যাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে।

আমাদের একটু সচেতনার অভাবে কেন এই অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষগুলো খড় কুটার মত ভেসে বেড়াবে আমাদের সরকারের প্রতিটি কাজে উন্নয়নের জোয়ার। কিছু কিছু মানুষ বিভিন্ন দাবী দাওয়ার জন্য পথে নেমেছে আন্দোলন করছে যেমন:- মাদক বিরোধী আন্দোলন, জঙ্গী বিরোধী আন্দোলন, আবার শিশু শ্রম আন্দোলন। এ আন্দোলন কিছু সফলও হচ্ছে।

প্রাচীনকালে দাসপ্রথা বিরোধী আন্দোলন, সতীদাহ প্রথা এবং কন্যা সন্তান হত্যার বিরুদ্ধেও সামাজিক আন্দোলন ছিল। এই প্রচলিত নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে কিছু সুজন রুখে দাড়িয়ে ছিল ফলে তা একেবারে নির্মুল হয়েছে। আমরাও নিরলসভাবে পরোক্ষ ও প্রত্যাক্ষভাবে কাজ করে নিষ্ঠাবান করে তাদের গড়ে তুলব। তাদের গড়ে তোলাই হবে আমাদের দৃঢ় অঙ্গিকার। আমাদের পরিধি যেন হয় সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী এবং সুদুরপ্রসারী।

লিখেছেন: দেলোয়ারা বেগম রেনু (নরসিংদী জেলার এই সংগ্রামী নারীর সন্তান মানসিক ভারসম্যহীন। তিনি নিজ উদ্যোগে কাজ করছেন প্রতিবন্ধী উন্নয়নে।)

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

 

Previous articleফোবিয়া বা আতঙ্ক
Next articleমনের শক্তিকে কাজে লাগাবেন যেভাবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here