গর্ভাবস্থায় অনেক নেতিবাচক সমস্যার মধ্য দিয়ে তিনি দিনাতিপাত করে গেছেন

সমস্যা:
আমি চট্টগ্রাম থেকে আপনাকে লিখছি। আমার মেজো বোন বয়স ২৮ বছর। গত ১০ মাস আগে ২য় বারের মত গর্ভবতী হোন। উল্লেখ্য যে উনার স্বামী বিদেশ থাকেন।
আমার বোনের স্বামী সিদ্ধান্ত নেন যে এইবার সন্তান হলে উনি তাঁর বড় ভাই নিঃসন্তান দম্পতিকে দিয়ে দিবেন। এই নিয়ে আমার মেজো বোনের সাথে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং উনার পরিবারের জা ও শাশুড়ির সাথে আমার বোনের সম্পর্কের অবনতি হয়। এর পর গর্ভবতী অবস্থায় ৬ মাসের সময় উনি দেশ ত্যাগ করেন।
কিন্তু ইতোমধ্যে আমার বোনের মানসিক স্বাস্থ্যের ভীষণ অবনতি হয়। যে গাইনী ডাক্তারের সাথে নিয়মিত চেকআপে ছিল ওনাকে বিষয়টা অবহিত করলে উনি বলেন এই অবস্থায় মানসিক চিকিৎসা সম্ভব নয়। বাচ্চার জন্মের পর আপনারা মানসিক ডাক্তার দেখাবেন কারণ এই অবস্থায় বাচ্চার উপর প্রভাব পড়তে পারে।
গত ১৩ এপ্রিল, ২০১৭ মেজো বোনের একটি মেয়ে সন্তান হয় উল্লেখ্য উনার ১ম বাচ্চাটি ছেলে। এখন উনি কিছুই চিনতে পারেন না এমনকি বাচ্চাকে দুধ পর্যন্ত খাওয়াতে অস্বীকার করেন। কারও সাথে কোনো কথা বলেন না। ডাকলে সাড়া দেন না। মাঝে মধ্যে হাসেন এবং অজানা কাকে ইঙ্গিত করেন কিছুই বুঝা যায় না। খাওয়া দাওয়া নিজে করতে পারেন না এমনকি ওয়াশরুমে গেলে অনেকক্ষণ বসে থাকেন।
মেজো বোনের স্বামী এখন তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন এবং টাকা পয়সা দিচ্ছেন। কিন্তু উনার পরিবারের সাথে তেমন কোনো  যোগাযোগ নেই। এখন আমরা কোন ধরনের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে ভালো হবে জানাবেন।
পরামর্শ:
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান প্রশ্নের জন্য। সন্তান জন্মদান জীবনের একটি অতি কাঙ্ক্ষিত অধ্যায় হলেও সাধারণভাবে প্রেগন্যান্সি ও প্রসবোত্তর পিরিয়ডে সকল নারীকে অনেক ধকলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যেমন: হরমোন জনিত পরিবর্তন, বাচ্চা ধারণ জনিত শারীরিক পরিবর্তন, এককভাবে পারিবারিক দায়িত্ব মোকাবেলা বা স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি। এর উপর আছে প্রসব প্রক্রিয়া, অনাগত সন্তানের সুস্থতা, পরিবারের বউ থেকে মা হিসাবে রূপান্তরসহ অনেক মনোসামাজিক বিষয়ে এডজাস্টমেন্ট এর প্রশ্ন।
এই কেসটা স্টাডি করলে আমরা দেখতে পাই গর্ভাবস্থায় বাড়তি অনেক নেতিবাচক সমস্যার মধ্য দিয়ে তিনি দিনাতিপাত করে গেছেন। ওনার তো গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত না হয়ে রেহাই নাই। ওনার স্বামী কাছে নাই, শ্বশুরবাড়ির সাথে সম্পর্কের অবনতি, অনাগত সন্তানকে হারিয়ে ফেলার ভীতি। উপরন্তু চিকিৎসক বলেছেন এগুলো বয়ে নিয়ে যেতে হবে। কোনো উপায় নাই। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। খুব দুঃখ পেলাম গাইনী চিকিৎসক কোনো দিক নির্দেশনা দিতে পারলেন না।
এখন আসি সন্তান প্রসবের পরের রোগাবস্থা নিয়ে। উপসর্গ ইঙ্গিত করছে তাঁর “পোস্টপার্টাম সাইকোসিস” ডেভেলপ করেছে। এ রোগে প্রধান প্রধান উপসর্গ মায়ের বিষণ্ণতা, নানারকম ভ্রান্ত ধারণা, নিজের বা সন্তানের ক্ষতি করা যা তাঁর উল্লেখিত আচরণের মধ্যে লুকিয়ে আছে। এটি বাইপোলার ডিজঅর্ডার এর একটি ধরণ (বাইপোলার ডিজঅর্ডার, পেরিপার্টাম অনসেট)।
“পোস্টপার্টাম সাইকোসিস” একটি সাইকিয়াট্রিক ইমার্জেন্সী অবস্থা। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সন্তানের পরিচর্যা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এ রোগের অন্যতম ঝুঁকি হল মায়ের আত্মহত্যা বা মায়ের দ্বারা সন্তানের জীবন নাশ। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এসব ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। সমন্নিতভাবে ঔষধ,  সাইকোথেরাপী ও পরিবেশের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে এই রোগ সারিয়ে তুলতে হয়। ঔষধের মধ্যে প্রথম পছন্দ হল এন্টিসাইকোটিক ও লিথিয়াম সাথে এন্টিডিপ্রেসেন্ট। ঔষধ সিলেক্ট করার সময় চিকিৎসককে মাথায় রাখতে হবে অতি শীঘ্রই মা সন্তানকে দুধ খাওয়াতে যাচ্ছেন।
এ রোগে আরেকটি কার্যকরী চিকিৎসা হল ইসিটি। এই চিকিৎসা স্বল্প সময়ে রোগের প্রকোপ কমাতে এবং ক্ষতিকর পরিণতি রোধ করতে এবং মাকে সন্তানের প্রতি মনোযোগী করে সন্তানকে দুধ পানে মনোযোগী হতে সাহায্য করে। রোগের কিছু উন্নতি হলে রোগিণীকে সাইকোথেরাপী দিতে হবে। পরিবেশের উন্নতি সাধন যেমন, স্বামীর তরফ থেকে বাড়তি সাপোর্ট, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে বাড়তি সাপোর্ট রোগিকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে এই রোগিকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এর কাছে নিয়ে তাঁর পরামর্শ মত বাসায় বা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করতে হবে।
পরামর্শ দিচ্ছেন,
প্রফেসর ডা. নিলুফার আক্তার জাহান


 দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।

Previous articleডাবলিনে শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা
Next articleরোগীদের জন্য অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করেছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ট্রাস্ট

1 COMMENT

  1. আমি পর্ণ আসক্ত। অনেক চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছিনা। শুনেছি মাস্টারবেট নাকি উপকারি। পর্ন দেখা ছেড়ে দিয়ে সপ্তাহে একবার মাস্টারবেট করা কতটা যুক্তিসংগত হবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here