পর্নো আসক্তি সারা পৃথিবীতে অন্যতম একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিশেষ করে তা যুব সমাজের মাঝে অতিরঞ্জিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে ছোট ছেলেমেয়েরা টিনেজার বয়সে পদার্পণ করার সাথে সাথেই মেতে উঠছে পর্নোগ্রাফিতে। বিশেষজ্ঞরা এর পেছনে বিভিন্ন কারণকে দায়ী করেছেন যার মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, বাবা-মা এবং সন্তানদের মধ্যে ভালো সম্পর্কের অভাব এবং সৎ সঙ্গের অভাব অন্যতম। পৃথিবীর যে সকল দেশে যৌনতাকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে সে সকল দেশে তুলনামূলকভাবে পর্নো আসক্তির হার কম হলেও নিষিদ্ধ হয়ে থাকা দেশগুলোতে এই আসক্তি দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলেছে। ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে, সারা পৃথিবীতে পর্ন ভিডিও খোঁজাখুঁজিতে শীর্ষে রয়েছে ভারত এবং তার পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই পর্নোগ্রাফিতে কি আপনিও আসক্ত? তাহলে জেনে নিন কিভাবে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়-
১. কিছু সময় আপনার ডিভাইসগুলো থেকে দূরে থাকুন
গবেষকদের মতে, মানুষের ভেতরে পর্নো আসক্তি ঠিক তখনই লাগে যখন সে তার বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ল্যাপটপে কিংবা মোবাইল ফোনে উত্তেজক কোন ছবি বা দৃশ্য দেখে। তাই যতটা সম্ভব নিজের মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপ আপনার বিছানা থেকে দূরে রাখুন। এতে করে অনেক সময় অলসতার কারনেও আপনি নিজেকে উত্তেজনার মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন।
২. ঘুমানোর আগে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন না
বিছানায় যখন গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমানোর পূর্ব মুহূর্তে আপনি আপনার মোবাইলে অশ্লীল কোন দৃশ্য বা ছবি দেখে ফেলেন তখন তা আপনার মস্তিষ্কের নিউরনগুলোকে উত্তেজিত করে তোলে। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করুন ঘুমানোর আগের ২ঘন্টা আপনার মোবাইল ফোন ল্যাপটপ অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার না করার।
৩. মনকে অন্য দিকে ধাবিত করুন
আপনি এমন কিছু বিষয় খুঁজে বের করুন যেগুলো আপনার মনকে পর্ন ভিডিও দেখা থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হবে। ঠিক যখনি আপনার পর্নোগ্রাফি দেখতে ইচ্ছা করবে তখন সেই কাজগুলো করুন। এভাবে আপনি নিজেকে পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হবেন।
৪. মনের সাথে যুদ্ধ করুন
সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে গৌরবান্বিত জয় হলো মনের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া। এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন,পর্নোগ্রাফি আপনার জীবনে কতটা অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসছে। তাই নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে মনের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করুন, কখনো পর্নোগ্রাফির আশেপাশে যাবেন না। আপনি যদি ধৈর্য ধরে ৯০ দিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে পর্নোগ্রাফি কখনো আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
৫. একা একা থাকবেন না
পর্ণগ্রাফির আসক্তি ঠিক সেই সময়ে বেশি জেগে ওঠে যখন আপনি কোন একটি আবদ্ধ জায়গায় একা একা অবস্থান করছেন। তাই সব সময় চেষ্টা করতে হবে মানুষের মাঝে থাকার। কারণ মানুষের মাঝে থাকা অবস্থায় কখনো আপনার এই ধরনের মানসিকতা জেগে উঠবে না। তাই এখন থেকেই একা একা থাকা বন্ধ করে দিন। এছাড়া আপনি চাইলে রাতে একা না ঘুমিয়ে কাউকে সাথে নিয়ে ঘুমাতে পারেন।
৬. কথাগুলো কাউকে বলুন
আপনি অনেকদিন যাবত পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত সেটি হয়তো আপনি ছাড়া আর কেউ জানে না। মনে মনে ভাবছেন, আজকে না হয় কালকে ছেড়ে দেবো কিন্তু এটি আপনার সম্পূর্ণ ভুল ভাবনা। আপনার এই বিষয়টি বিশ্বস্ত কারও সাথে শেয়ার করুন। দেখবেন তার সাথে বিষয়টি শেয়ার করার পর থেকে আপনার ভেতরে এক ধরনের বিব্রত অবস্থা কাজ করবে যা আপনাকে পর্নোগ্রাফি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া চাইলে আপনি আপনার বিশ্বস্ত মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন যে আর কখনো এ ধরনের কাজ করবেন না।
৭. সামাজিকীকরণ
পর্নোগ্রাফি মানুষের এক ধরনের অসুস্থ চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন। আর মানুষের চিন্তা-ভাবনা অসুস্থ হয়ে যায় ঠিক তখনই যখন সে সামাজিকীকরণ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। আপনি যদি সামাজিক বিভিন্ন কাজ কর্ম এবং মানুষের সাথে মেলামেশায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তাহলে আপনার মধ্যে কখনো পর্নোগ্রাফির চিন্তাভাবনা আসবেই না। আপনার তখন মনে হবে, আমি যে পৃথিবীতে সাময়িক সুখ খুঁজে পাই সেই পৃথিবীর চেয়ে মানুষের পৃথিবীটা অনেক বেশী সুন্দর এবং স্বচ্ছল। আর আপনার এই চিন্তা-চেতনাই আপনাকে পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি দেবে।
৮. পরিবারের সাথে সময় দিন
বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে সেই মানুষটি সবচেয়ে ভালো যে তার পরিবারের কাছে ভালো। আপনি হয়তো জেনে আশ্চর্য হবেন, মানুষের জীবনে সুখের অন্যতম একটি উৎস হলো তার পরিবার। তাই আপনার পরিবারের সাথে বেশি বেশি সময় কাটান। পরিবারে বাবা মা ভাই বোন সবার সাথে সময় কাটালে আপনার এই অসুস্থ চিন্তাভাবনাগুলো খুব সহজেই মাথা থেকে বের হয়ে যাবে। কারণ পরিবারের সাথে সময় কাটানোর পরেও এই ধরনের কাজ করতে গেলে নিজেকে অনেক বেশি অপরাধী মনে হবে। তাই যথাসম্ভব পরিবারের সাথে সময় দিন।
৯. আপনার দাম্পত্য জীবনের কথা ভাবুন
গবেষণা থেকে দেখা গেছে, পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত বেশিরভাগ ব্যক্তিরাই শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর পর্নোগ্রাফির প্রভাব দেখা যায় তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি এবং কলহের মাধ্যমে। তাই নিজের দাম্পত্য জীবনকে সুখী করার উদ্দেশ্যে হলেও নিজেকে পর্নোগ্রাফি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। শুধু একবার ভেবে দেখুন, কখনো যদি আপনার সন্তানও এমনটা করে তাহলে আপনার কেমন লাগবে?
১০. দৃষ্টিভঙ্গি বদলান
মানুষের জীবনের অনেক বিষয়ে নির্ভর করে তার দৃষ্টিভঙ্গির ওপরে। একজন মানুষ অন্যদের সমালোচনাকে পজিটিভলি নিয়ে সেগুলো অতিক্রম করার চেষ্টা করে। আরেকজন মানুষ সেই সমালোচনা করার কারণে মারামারিতে লিপ্ত হয়। এখানে উন্নত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রথম ব্যক্তিজীবনে ভোগান্তি আসার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে। তাই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও উন্নত করার চেষ্টা করুন। যেকোনো কিছু দেখলেই সেখানে যৌনতা খুঁজতে যাবেন না। পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটাকে সামাল দিন। পর্নোগ্রাফি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে দৃষ্টিভঙ্গি উন্নতকরণ অন্যতম একটি উপায় হিসেবে কাজ করে।
১১. সত্য ঘটনা জানুন
পর্নো ভিডিওতে যে ধরণের উগ্রতাই দেখে আপনি সাময়িক শান্তি পেয়ে থাকেন আসলে সেটি সত্যি কোনো ঘটনা নয়। একটা চলচ্চিত্রের শুটিং করতে যেমন মাসের পর মাস লেগে যায় তেমনি ১০ মিনিটের একটি পর্নো ভিডিও তৈরি করতে ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যায়। অর্থাৎ পর্ন ভিডিওগুলো এক ধরনের অভিনয়। তাই ভিডিওতে আপনি আসলে যেটি দেখছেন সেটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বানোয়াট এবং অসত্য।
১২. ধর্মীয় জীবন যাপন করুন
ধর্মীয় জীবন যাপন আপনাকে সব ধরনের খারাপ কাজ থেকে মুক্তি দিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। আপনি যেটা করছেন এটি সম্পূর্ণ ভুল এবং এই ভুলের ফল আপনাকে পৃথিবীতে এমনকি পরবর্তী জীবনেও ভোগ করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনাকে এর হিসাব প্রদান করতে হবে। তাই নিজেকে ধর্মীয় জীবন যাপনে উৎসাহিত করুন যা আপনাকে পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
পরিশেষে বলা চলে- পর্নোগ্রাফি আসলে এমন কোনো রোগ নয় যার একটি ট্যাবলেট আপনাকে খাইয়ে দিলাম আর আপনি সুস্থ হয়ে গেলেন। এটি আপনার মন মানসিকতার বিকৃত একটি রূপ। তাই পর্নোগ্রাফি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে আপনার বিকৃত মস্তিষ্ককে সুস্থ সুন্দর এই পৃথিবীর খোলা বাতাসে ভাসিয়ে দিতে হবে। আশা করি, উপরের উপায়গুলি অবলম্বন করলে আপনি খুব সহজেই পর্নো আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে