একসাথে অনেকগুলো কাজ নিয়ে ভাবলে স্বভাবিকভাবেই মনে চাপের সৃষ্টি হয়। তবে, সবকিছু পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে করলে স্ট্রেস বা চাপ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বর্তমানে এটা খুবই সাধারণ একটা ঘটনা—আশপাশের যাকেই জিজ্ঞেস করুন না কেন, তিনি বেশ হতাশার সাথে বলবেন, ‘বড্ড চাপ, ভীষণ স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়।’ ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবারই কমবেশি চাপের মধ্যে দিয়েই কাজ করতে হয়। চাপ এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, যে কারণে আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা পর্যন্ত এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। সাধারণত, চাপটা আমাদের সমাজের অন্যদের থেকে নারীরা একটু বেশিই নিয়ে থাকেন। অফিসের বোর্ডরুমে বিদেশি ক্লায়ান্টদের সামনে প্রেজেন্টেশন করতে করতে মনে ঘুরপাক খেতে থাকে, বাসায় ছোট মেয়েটা ঠিকঠাক খেয়েছে তো? আবার বাসায় ফিরে রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার করার মাঝেও মনে মনে অফিসের কোনো টুকিটাকি কাজ নিয়ে ভাবনায় থাকতে হয়। তারপরে মাসিক অ্যাকাউন্টসের হিসাবের ব্যাপারটা তো আছেই। একই সঙ্গে এমন একাধিক কাজ করলে তো মানসিক চাপ দেখা দেবেই। কিন্তু শুধু সমস্যার মাঝে আটকে থাকলেই চলবে না। সমস্যার মুখোমুখি হলে তার সমাধানও বার করতে হবে। ‘মাল্টি টাস্কিং’ বলে একটা কথার আমাদের কর্পোরেট জগতে খুব প্রচলন আছে। সহজ করে দু’এক কথায় বলতে গেলে, একই সঙ্গে একাধিক কাজ করার বিশেষ দক্ষতা। অর্থাত্ যা আমরা সারাক্ষণ করে চলেছি। তবে, মাল্টিটাস্কিং করারও কিছু বিশেষ কৌশল রয়েছে। মাল্টিটাস্কিংয়ের প্রথম ও শেষ কথা হলো—গুছিয়ে কাজ করার ক্ষমতা। এটি বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবতা অতটা সহজ নয়। তবে কয়েকটা পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করে দেখতে পারেন—
প্রত্যেকদিন অফিস ছাড়ার আগে পরের দিনের নির্দিষ্ট কাজের একটা খসড়া বানিয়ে নিতে পারেন। এতে যদি দশ মিনিট অফিসে বেশিও থাকতে হয়, তাহলেও সেই সময়টা দিন। পরে সুবিধা হবে। আর এই কাজ করার জন্য প্রথমেই দরকার হবে একটা ভালো ডায়েরি কিংবা ডিজিটাল প্ল্যানার। প্রত্যেকদিনের নির্দিষ্ট সময়ের পাশে অফিসের কাজগুলো অগ্রাধিকার অনুযায়ী লিখে রাখুন। পরের দিন অফিসে যাওয়ার আগে ওয়ার্ক লিস্টটা একবার চেক করে নিলেই হলো—সারাদিনের কাজের একটা স্পষ্ট রূপরেখা পেয়ে যাবেন।এই কাজ করার সময় একটা নতুন প্রশ্ন হয়তো মাথায় আসতে পারে, ধরাবাঁধা কাজ ছাড়াও তো আরও অনেক কাজ সারাদিনে জমা হয়, তার কী হবে? সত্যিই অফিসে কাজ করার সময় অসংখ্য ফোন নাম্বার কিংবা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নোট করে রাখার দরকার হতে পারে। বেশির ভাগ সময়ই আমরা হাতের কাছের টুকরো কাগজে লিখে রাখি। পরে সেগুলোর কথা হয়তো মনেই থাকে না। তাই হিজিবিজি কাগজে লিখে রাখা নোটসগুলো যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব ডায়েরিতে লিখে ফেলা দরকার। অফিস থেকে বাড়িতে ফোন করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে রাখুন। বাচ্চারা স্কুল থেকে ফেরার পরে একবার ফোন করে ওদের দিনটা কেমন কাটলো তার খোঁজখবর নিন। এই সময়ে অফিসে যে কাজগুলো করা হয়ে ওঠে না, যেমন—ডেস্ক গুছানো, কম্পিউটারের স্ক্রিন পরিষ্কার করা সেগুলো করে নিন। ওদের খাওয়াদাওয়া, হোমওয়ার্ক সম্পর্কিত নির্দেশনা ফোনেই দিয়ে দিন। কাজের চাপ যতই হোক না কেন, দুপুরের লাঞ্চ বা বিকেলের হালকা নাস্তা উপভোগের ক্ষেত্রে কখনো অনিয়ম করবেন না। বাইরে গিয়ে খাওয়ার সময় না পেলে বাড়ি থেকে প্যাকড লাঞ্চ নিয়ে আসুন। খবরের কাগজ কিংবা শেষ না হওয়া কোনো গল্পের বই পড়তে পড়তে লাঞ্চ উপভোগের চেষ্টা করতে পারেন। মোবাইলে বন্ধুদের ফোন করে আড্ডা দিলেও চাপ দূর হবে। আর সব থেকে বড় কথা হলো—এক কাজের মাঝে অন্য কোনো কাজ নিয়ে যতটা সম্ভব কম ভাবা।