আমাদের রোগ কেন হয়? এটা কি শুধুই শারীরিক? রোগের সাথে মনের কি সম্পর্ক? এই প্রশ্নগুলো পৃথিবীর আদি লগ্ন থেকেই ছিল। একেবারে প্রথম দিকে রহস্যজনক কারণে রোগ হয় বলে মনে করা হতো। আস্তে আস্তে এটি পরিবর্তিত হতে থাকে। Hippocrates, ‘‘the Father of Medicine,’’ humoral theory তে উল্লেখ করেন যে “আমাদের শরীরে চার ধরনের তরল আছে, এগুলোর সাম্যাবস্থা নষ্ট হলে রোগ দেখা দেয়।“ গ্রীক দার্শনিক প্লেটো প্রথমে উল্লেখ করেন, দেহ ও মন আলাদা দুটি জিনিস। দেহ বলতে আমাদের হাত, পা সহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কথা উল্লেখ করা হয়। মন বলতে আমাদের চিন্তা চেতনাকে উল্লেখ করেন। সেখান থেকে দেহ ও মনের সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে গ্যালেন মানব দেহের ব্যাবচ্ছেদ করেন ও নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করেন এবং দেহ ও মন আলাদা ভাবতে আরও শক্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মধ্যযুগে ইতালীয় একজন দার্শনিক St. Thomas Aquinas দেহ ও মন আলাদা এই ধারণা প্রত্যাখান করেন। ওই সময়ে তার মতবাদ অন্যদের চাপে প্রতিষ্ঠিত না হলেও নতুন করে দেহ ও মন বিতর্ক উসকে দেয়।
পরবর্তীতে ফ্রেঞ্চ দার্শনিক ও গণিতবিদ Rene Descartes শক্তিশালী ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন দেহ ও মন আলাদা ভাবে। আঠার ও উনিশের শতকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ সাধনের ফলে অনেক রোগের বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা, ব্যাখ্যা প্রদান সম্ভম হয়। তখন থেকে আস্তে আস্তে মনে করা হয় যে, রোগ হয় আমাদের শরীরের কোনো জায়গায় কোনো অসুবিধা হওয়ার ফলে। এটাকে biomedical model বলা হয়। বিশ শতকে Sigmund Freud নামক একজন অস্ট্রিয়ান চিকিৎসক লক্ষ্য করলেন যে, এমন অনেক রোগ আছে যা শুধু মাত্র শারীরিক কারণ দিয়ে ব্যাখা করা যায় না। এই প্রক্রিয়াকে তিনি conversion বলে উল্লেখ করেন এবং এই রোগকে hysteria বলে উল্লেখ করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, আমাদের মনের কষ্ট অনেক সময় শরীরের মাধ্যমে রোগ হিসাবে দেখা যায়। আস্তে আস্তে এটা নিয়ে গবেষণা চলতে থাকে। ১৯৩০ সালে Psychosomatic Medicine নামে নতুন বিষয় শুরু হয় এবং গবেষণার বিস্তার বাড়তে থাকে। ১৯৭৭ সালে George Engel Biopsychosocial Model নামে একটা মতবাদ প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়, প্রত্যেক রোগ সার্বিক ভাবে এই মডেল মেনে ব্যাখ্যা করা যায়। এই মডেল অনুযায়ী দেখা যায় রোগের সঙ্গে মানুষের মনের খুব শক্তিশালী ভূমিকা বিদ্যমান। এই তত্ব অনুযায়ী Biological Factors বলতে মানুষের বংশগতির ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে। Psychological Factors বলতে যার রোগ হয় বা হয়েছে ওই লোকের নিজস্ব চিন্তা চেতনা, আচরণ, ব্যক্তিত্ত্ব, আবেগ ইত্যাদির ভূমিকাকে গণনা করা হয়েছে। Social Factors হিসাবে রোগের সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক ও ভূমিকা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখনকার দিনে রোগের ক্ষেত্রে Biopsychosocial Model সর্বজন গৃহীত এবং এটা এখন প্রতিষ্ঠিত যে প্রত্যেক রোগের সাথে মনের সম্পর্ক বেশ ভালো ভাবে জড়িত।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।