দুশ্চিন্তা বা উদ্বিগ্নতা যেমন সমস্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার সূচনা, তেমনি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার পথে একটি বড় বাঁধাও বটে। এই বাঁধাকে ভয় পেলে চলবে না। করোনা কালে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য এখনই সময় অতি দুশ্চিন্তাকে “না” বলার।
আমরা সব সময় সেসব পরিস্থিতি থেকে পালাতে চাই যেসব পরিস্থিতি আমাদের মাঝে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করে। আমরা সব সময় আমাদের অনুকূলে থাকা পরিবেশে থাকতে চাই, সে সব বিষয় নিয়েই ভাবতে চাই। কিন্তু এভাবে কি সমস্যা থেকে বা নেতিবাচক অবস্থা থেকে বেঁচে যাওয়া আদৌ সম্ভব? কখনোই না।
এই করোনা মহামারীর দুঃসময়েও আমরা বিভিন্ন ভাবে শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয় আমাদের মাঝে চরম দুশ্চিন্তা এবং উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এই উদ্বিগ্নতাকে ভয় পেলে বা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলে কি আমরা করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবো? এরকমই যে কোন কাজ বা অবস্থা যা আমাদের অনুকূলে নেই সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করে বা তাকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়াস করে কখনোই সেই সমস্যা সমাধান করা যায়না। বরং প্রতিকূল পরিবেশ নিয়ে শুধু অতি দুশ্চিন্তা না করে যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তবেই সেই অবস্থা পরিবর্তনে ভুমিকা রাখা যায়। তাই অতি দুশ্চিন্তাকে সদা সর্বদা “না” বলুন।
দুশ্চিন্তা বা উদ্বিগ্নতা তখনই সৃষ্টি হয় যখন কোন পরিস্থিতি বা বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেনা অথবা আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান থাকি। সেই অনিয়ন্ত্রিত অবস্থাকে ভয় পাওয়ার ফলেই আমাদের মাঝে এই মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় যখন ঐ অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ বা বিষয় তাদের মূল সমস্যা থেকে বাদ পড়ে যায় এবং শুধুমাত্র দুশ্চিন্তাই মূল সমস্যা হয়ে ওঠে। তাদের মানসিক সন্তুলান হারিয়ে যায় এবং উদ্বিগ্নতা ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যায় পরিণত হয়। আর এমন অবস্থা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।
আমাদের মনে রাখা উচিৎ দুশ্চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু সেই দুশ্চিন্তাও যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে সেটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। প্রতিকূল পরিবেশ বা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য যতোটা ঝুঁকি তার থেকে বেশী ঝুঁকি এই মানসিক সমস্যা গুলো থেকে আমাদের হতে পারে। তাই কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা যেন নতুন করে দুশ্চিন্তা বা ভয়ের কারণ না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
মানব জীবনে প্রতিটি আবেগ অনুভূতি গুরুত্বপূর্ণ এবং জীবিত প্রাণী মাত্রই আবেগ অনুভূতি থাকবে। একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিক্রিয়াই আমাদের উপর কোন না কোন ভাবে ইতিবাচক প্রভাব রাখে। যেমন, করোনা সংক্রমণের ভয় বা দুশ্চিন্তা আমাদের সেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা যা আমাদের করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করবে।
এই ভয় বা দুশ্চিন্তা না থাকলে কিন্তু আমাদের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার আগ্রহই সৃষ্টি হতোনা। কিন্তু এই দুশ্চিন্তা যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যখন যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আমরা চিন্তার সমুদ্রে ডুবে যাই এবং সঠিক কাজটি না করে দুশ্চিন্তাকে এড়িয়ে যাবার প্রয়াস করি বা ভয় পাই তাহলে কখনোই করোনা মুক্ত থাকা আদতে সম্ভব হবেনা বরং সেটি আমাদের চারিদিক থেকে বিপদে ফেলে দেবে। জীবনে বিপদ ও সমস্যা এবং সেসব ঘিরে আমাদের প্রতিক্রিয়া জনিত আবেগ এড়িয়ে যাবার মত কোন সুযোগ নেই।
তাই দুশ্চিন্তাকে ভয় পেয়ে বা এড়িয়ে গিয়ে নয়, বরং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। দুশ্চিন্তার খাতিরেই দুশ্চিন্তা করলে চলবেনা। মূলত, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবোনা- এমন চিন্তা ভাবনা থেকেই আমাদের সরে আসতে হবে। দুশ্চিন্তা থেকে অতি দুশ্চিন্তা নয়, বরং দুশ্চিন্তা যেন সমস্যা মোকাবেলার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে সেই প্রয়াস করতে হবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে