সুনিয়ন্ত্রিত ডায়েট বাড়তি ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীর সুস্থও রাখে বটে । কোথায়, কখন, কি খাচ্ছি, কতটুকু খাচ্ছি এইসব ব্যাপারগুলো সাধারণত আমরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তবে খুব অল্প সময়ের জন্য । অনেক ভেবেচিন্তে খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলার পণ করেছেন, কিছুদিন কষ্ট করে নতুন ডায়েট চালিয়ে যাওয়ার পর আবার সেই পুরনো অভ্যাসে ফিরে যাওয়া। এর ব্যাখ্যা খুঁজতে অনেকগুলো পাতা উল্টে চলুন ফিরে যাই সেই সময়গুলোতে যখন আদিম মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য, খাবার জোগাড় করার জন্যই সমস্ত শক্তি এবং সময় ব্যয় করতে হত।
টিকে থাকার রসদ
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস বদলাতে চেয়েও পেরে না ওঠার পেছনে রয়েছে আমাদের আজকের এই বিবর্তিত মস্তিষ্কের বেঁচে থাকারই কৌশল। প্রতিকূল পরিবেশে আমাদের টিকে থাকার মূল রসদ অর্থাৎ নিরাপত্তার প্রতীক এই খাবার। খাবার সম্পর্কিত যে কোন হুমকি আমরা নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে ধরে নিই, সেটা সত্যিই হোক আর মস্তিষ্ক প্রসূত ধারণাই হোক। খাদ্য ঘাটতি আছে যে দেশগুলোতে সেখানকার বাচ্চাদের দত্তক নেয়ার পর পালক পরিবারে খাবারের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় তাদের মধ্যে খাবার জমিয়ে রাখার প্রবণতা (Food Hoarding Behavior) দেখা যায়। একবার একটি ইটিং ডিজঅর্ডার ট্রিটমেন্ট সেন্টারের একজন রোগীর বিছানার নিচে পাওয়া গিয়েছিল রান্না করা মাংসের বিশাল একটা টুকরো! কঠোর ডায়েটও একই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্ককে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ভাবায়।
খাবার এবং ভালোবাসা
স্তন্যপায়ী হিসেবে আমাদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড পাথওয়ের সাথে জড়িয়ে গেছে খাদ্যাভ্যাস, আনন্দ, সম্পর্ক এমনকি ভালোবাসাও! পোর্জেস পলিভ্যাগাল তত্ত্ব অনুযায়ী, সম্পর্ক এবং সামাজিক যোগাযোগকে স্তন্যপায়ীরা নিজেদের শান্ত করার প্রাথমিক উপায় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই স্বাভাবিক নিউরোলজিক্যাল প্রক্রিয়াটিতে, কোথাও সম্পর্কের গড়বড় হলে খাবার সেই শূন্যস্থান পূরণ করে। খাবারের গন্ধ, স্বাদ, খাবার সময় মুখের নাড়াচাড়া – খাবার খাওয়ার এই পুরো প্রক্রিয়াটি সামাজিক যোগাযোগের নিউরোলজিক্যাল প্রক্রিয়ার অনুকরণ। তাই এই অনুকরণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মস্তিষ্ককে শান্ত করে, আমরা নিরাপদ বোধ করি।
“যৌক্তিক” মস্তিষ্ক ব্যবহার করুন
পরিকল্পনা এবং যৌক্তিক চিন্তাভাবনা আমাদের মস্তিষ্কের যে অংশটায় ঘটে থাকে -সবচেয়ে বাইরের স্তর কর্টেক্স, সেটি বিবর্তনেরই ফল। সাধারণত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত আমরা ঠাণ্ডা মাথায়, শান্ত অবস্থাতেই নিয়ে থাকি। সমস্যাটা বাঁধে তখনই, যখন আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মানসিক চাপ আর ক্লান্তি মস্তিষ্কের এই যৌক্তিক অংশকে ঠিকভাবে কাজ করতে দেয় না, আমাদের আদিম স্তন্যপায়ী মস্তিষ্ক তখন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। নিরাপত্তার খোঁজে আমরা প্লেটে তুলে নিই অপরিমিত, অস্বাস্থ্যকর খাবার।
তাই বলে আশাহত হওয়ার কিছু নেই। অনিরাপত্তা, খাবারসংক্রান্ত রিওয়ার্ড পাথওয়ে, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা আর খাবারের এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার বিজ্ঞানসম্মত উপায়ও রয়েছে।
তথ্যসূত্র:( https://www.psychologytoday.com/blog/behernow/201709/why-changing-eating-habits-permanently-is-so-hard)
নাহিদা লুনা, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম