করোনাভাইরাসের উভয় ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ছয় মাস পরও এ রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মত অ্যান্টিবডির উপস্থিতি থাকে বলে চট্টগ্রামে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইয়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়- সিভাসু এ গবেষণা পরিচালনা করে। মঙ্গলবার এটির তথ্য প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, টিকার উভয় ডোজ যারা নিয়েছেন তাদের ৯৯ শতাংশের মধ্যে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে অ্যান্টিবডি মিলেছে। প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
উভয় ডোজ নেওয়াদের মধ্যে ৯৯ দশমিক ১৩ শতাংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া যারা কোভিড-১৯ এর টিকা নেয়নি তাদের ৫০ শতাংশের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
সিভাসু এর উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন দিক নিয়ে শুরু থেকেই গবেষণা করা হচ্ছে। আমরা সম্মুখসারির যোদ্ধাদের মধ্যে টিকা গ্রহীতা ও যারা নেননি তাদের মধ্যে কেমন অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা করেছি।
“গবেষণায় দেখা গেছে প্রথম ডোজগ্রহণকারীদের চেয়ে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষা লেভেল অনেক ভালো এবং বিভিন্ন মাসের হিসেবে তা অনেক বেশি।“
‘কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডির ব্যাপকতা ও পরিমাণ শনাক্তকরণ’ শীর্ষক গবেষণায় চট্টগ্রামের করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকা সম্মুখ সারির কর্মী ও পোশাক কর্মীদের মধ্যে এ গবেষণা চালানো হয়।
মঙ্গলবার সিভাসুর পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবডির (আইজিজি) উপস্থিতি ও পরিমাণ এনজাইম লিঙ্কড ইমিউনসর বেন্ট অ্যাসাই (ইএলআইএসএ) পদ্ধতিতে এ গবেষণা করা হয়।
গবেষণায় সেরোপজিটিভিটি (রক্তে সার্স-কোভ-২ এর অ্যন্টিবডির উপস্থিতি) সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এর প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণের পর প্রথম মাসে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি মিলেছে (১৭৫ দশমিক ১ ডিইউ/মিলি) সেটির প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায় দ্বিতীয় মাসে।
তবে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়াদের মধ্যে অ্যান্টিবডির পরিমাণ সময়ের সঙ্গে কমে যাবার প্রবণতায় ভিন্নতা পাওয়া গেছে।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে গড়ে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি টাইটার থাকে (৩২৪ দশমিক ৪২ ডিইউ/মিলি) চতুর্থ মাসে এসে এর ২১ শতাংশ টাইটার কমে যায়। কিন্তু ষষ্ঠ মাসে এসে তা চতুর্থ মাসের মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে।
উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শারমিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান চৌধুরী, ডা. জাহান আরা, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. তারেক উল কাদের, ডা. আনান দাশ, ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ডা. ইয়াসির হাসিব, ডা. তাজরিনা রহমান ও ডা. সীমান্ত দাশ অংশ নেন।
এ বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোভিড ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, রোগীর অভিভাবক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পোশাক শ্রমিক মিলিয়ে ৭৪৬ জনকে এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ৭৪৬ জনের মধ্যে প্রায় ২২৩ জন (৩০ শতাংশ) টিকার প্রথম ডোজ এবং উভয় ডোজ নিয়েছিলেন ২৩১ জন (৩১ শতাংশ)। টিকা নেননি এমন ব্যক্তি ছিলেন ২৯২ জন (৩৯ শতাংশ)।
এতে দেখা গেছে, টিকার উভয় ডোজ গ্রহণকারীর ৯৯ শতাংশের মধ্যে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে অ্যান্টিবডি মিলেছে। প্রথম ডোজ নেওয়াদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
উভয় ডোজ যারা নিয়েছেন তাদের ৯৯ দশমিক ১৩ শতাংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। যারা কোভিড-১৯ এর টিকা নেয়নি তাদের ৫০ শতাংশের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যারা টিকা নেয়নি তাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে (গড়ে ৫৩.৭১ ডিইউ/মিলি), এর চেয়ে গড়ে প্রায় তিন গুণ বেশি অ্যান্টিবডি (১৫৯.০৮ ডি ইউ/মিলি) তৈরি হয়েছে যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
অনেকে করোনাভাইরাসে উপসর্গহীনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখ করে অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ বলেন, তারা আক্রান্ত হয়েছেন টেরই পাননি। কিন্তু অনেকের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তবে টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে এ পরিমাণ অনেক বেশিই।
আবার যারা দুটি ডোজই নিয়েছেন তাদের পাঁচগুণ অ্যান্টিবডি (২৫৫.৪৬ ডি ইউ/মিলি) পাওয়া গেছে।
“করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে সবারই টিকার নেওয়া উচিত। আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী নয়,” বলেন অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে