কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের জনজীবন অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা বন্দীদশা আমাদের মনের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য এমনকি বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যেন কেঁড়ে নিয়েছে। এমন অবস্থায় হারানো আত্মবিশ্বাস এবং বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা ফিরে পেতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
কোভিড-১৯ এর শুরুতে আমরা সবাই সচেতনতা অবলম্বন করে ধৈর্যের সাথে বাড়িতে থেকে আমাদের জীবন যাপন শুরু করেছিলাম। মনের মাঝে এই আশা নিয়ে বেঁচে ছিলাম যে কিছু দিন পর আবার আমরা আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাব। কিন্তু বছরের অর্ধেক সময় পার হয়ে যাবার পরেও কোভিড-১৯ এখনো একইভাবে শক্ত হয়ে আমাদের জীবনে জেঁকে বসে আছে এবং আমরা আমাদের সেই পুরনো কাজ গুলো নতুন ভাবে, নতুন উপায়ে কিভাবে চালিয়ে নেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টা করে চলেছি।
কবে এই দুঃসময় শেষ হবে সে সম্পর্কে আমাদের কোন স্পষ্ট ধারণা নেই এবং আত্মীয়, স্বজন, বন্ধু, বান্ধব থেকে দূরে এই নতুন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করে নতুন ভাবে বাঁচার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা আমাদের জন্য যেন প্রায় অসম্ভব এক কাজ হয়ে উঠেছে। আর সব মিলে এমন অবস্থা আমাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিন দিন ক্ষীণ করে তুলেছে। সব কিছু বুঝে এবং মেনে নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বাঁচার অনুপ্রেরণা নতুন করে ফিরে পাবার জন্য সহজ কিছু কৌশল আমরা অবলম্বন করতে পারি।
০১) নতুন করে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করাঃ জীবনে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা লাভ করার একটি চমৎকার উপায় হল জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেটি অনুসরণ করা। লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় কাজ গুলো নতুন স্ফূর্তির সাথে পালন করতে হবে। প্রতি দিন এমন কিছু কাজ করুন যা আপনাকে আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মনের মাঝে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করুন এবং নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করুন।
০২) প্রতি দিনের কাজের ছক তৈরি করুনঃ জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠন এবং আমাদেরকে সঠিক পথে চালিত করে। কিন্তু সব সময় এটুকুই যথেষ্ট হয়না; বিশেষ করে সেই সময়ে যখন আমাদের ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চিত আশঙ্কায় দোদুল্যমান। এমন অবস্থায় জীবনে নতুন অনুপ্রেরণায় উদ্ভাসিত হয়ে নতুন করে জীবন গঠন করতে হলে লক্ষ্য নির্ধারণের পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন কাজের দিকেও মনোনিবেশ করতে হবে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে ছকে বাঁধার জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজকে নির্দিষ্ট ছকে বাঁধতে হবে। প্রতি দিনের কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন হলে আমাদের মনের দুশ্চিন্তার ভারও একটু একটু করে কমতে থাকবে। এর মাধ্যমে আমাদের আত্মবিশ্বাস ও ধীরে ধীরে বাড়বে।
৩)সামাজিক জীবন যাপন করাঃ কোভিড-১৯ থেকে বাঁচতে আমাদেরকে সামাজিক মেলামেশায় প্রতিবন্ধকতা আরোপ করতে হয়েছে। এমন অবস্থায় যেমন দীর্ঘ দিন এভাবে সবার থেকে দূরে থাকা খুবই পীড়াদায়ক তেমনি হতাশাজনক ও বটে। জীবনে হতাশা কাটিয়ে নতুন অনুপ্রেরণা যোগাতে আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু বান্ধব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নতুনভাবে বাঁচার অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হতে সবাইকে সাথে নিয়ে সামাজিক জীবন যাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা হয়তো সরাসরি তাদের সাথে মিলিত হতে পারছিনা কিন্তু প্রযুক্তির প্রসারকে কাজে লাগিয়ে আমরা ভার্চুয়ালি তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারি। দূরত্বে থেকেও তাদের কাছে নিয়ে আসতে পারি। এতে আমাদের মনের জোর বাড়বে।
৪)প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করাঃ উপরে বর্ণিত কৌশল গুলো নতুন অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হতে যথেষ্ট সহকারী ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু তবুও যদি হতাশা ও উদ্বিগ্নতা আপনাকে চরমভাবে মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে বাধ্য করে এবং আপনি সব কিছুর পরেও আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হন তাহলে অবশ্যই একজন ভালো মনস্তত্ত্ববিদের সাথে যোগাযোগ করে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিন। সরাসরি না গিয়েও এখন এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যারা ই-মেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সমাধান প্রদান করে থাকে, তাদের সাথেও যোগাযোগ করা যেতে পারে।
বর্তমান অবস্থায় আমরা সবাই আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলছি। আমাদের মনোবল, আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং আমাদের নতুন ভাবে বাঁচার অনুপ্রেরণাই আমাদেরকে কোভিড-১৯ এর সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে সহায়তা করবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন