কোভিড ১৯ মহামারী নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। কিভাবে এই ক্রম বর্ধমান দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখা যায় সেসব নিয়ে আলোচনা করা যাক।
কোভিড ১৯ আমাদের সবাইকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছে যে কিছু দিন আগে পর্যন্ত যেটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি সেগুলি এখন চোখের সামনে হতে দেখছি। এই ভাইরাস আমাদের দৈনন্দিন জীবন একদম দুর্বিষহ করে তুলেছে এবং আমাদের শরীর ও মনের উপর এর প্রভাব হয়তো বহু দিন আমাদেরকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। কোভিড ১৯ মহামারীর এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরী প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই আমরা সবাই নিজের ও আমাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি এবং এটা খুবই স্বাভাবিক।
কোভিড ১৯ ঝুঁকি আমাদের মাঝে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটিয়ে চলেছে। যেহেতু আমাদের বিভিন্ন কাজে বাইরে যেতে হয় এবং বাইরে গেলে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে তাই অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। আর এই গৃহবন্দী জীবন যে কবে শেষ হবে এর কোন সদুত্তর আমাদের কাছে আজও নেই। এসব কারণে এক অজানা ভয়, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা আমাদের ঘিরে রেখেছে। লাখ লাখ লোক চাকরী হারিয়ে আজ কর্মহীন এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে তারা চরম সমস্যায় আছেন। শিক্ষা ক্ষেত্র, চিকিৎসা ক্ষেত্র, ধর্ম কর্ম, অর্থনৈতিক বাজার, পর্যটন শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। কোভিড ১৯ আতঙ্কে অনেক ডাক্তাররাই চিকিৎসা প্রদানে অনীহা প্রকাশ করছে তাই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে মৃত্যুবরণও করছেন।
তাই বিভিন্ন রোগে ইতোমধ্যে আক্রান্ত রোগী যাদের নিয়মিত ফলো আপের প্রয়োজন তারা প্রয়োজনে চিকিৎসা না পাওয়ার এক চরম মানসিক উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তাছাড়া প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু আমাদের মনকে সর্বদা ভারাক্রান্ত করে রেখেছে। এসব মানসিক চাপ কোভিড ১৯ এর সাথে সাথে আমাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন করছে যা নিরাময় অত্যাবশ্যক। মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে আমরা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ব এবং করোনা মোকাবেলায় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হব।
কোভিড ১৯ যেমন আমাদের বর্তমানকে প্রভাবিত করছে তেমনি এর একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশংকা, এই দুঃসময় কেটে যাওয়ার পরও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘদিন এর নেতিবাচক প্রভাব বিদ্যমান থাকবে। যা থেকে সুস্থ অবনস্থায় ফিরতে আমাদের অনেকটা সময় লেগে যাবে। কিন্তু আমাদের বর্তমানকে সুরক্ষিত রাখতে এবং মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে আমরা বর্তমানে অনেক কিছু করতে পারি। প্রথমত আমাদের উচিৎ সর্বদা বিজ্ঞান সম্মত এবং সঠিক সংবাদে ভরসা করা যা আমাদের মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করবে। আমরা আমাদের সামাজিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে গুজব এড়িয়ে চলব এবং ধৈর্য ধারণ করে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করব।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় মানসিক অবসাদের মাত্রা স্বাভাবিকের মাত্রা অতিক্রম করে চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত এবং পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। আমাদের মনে রাখতে হবে সুস্থ থাকতে হলে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরী। তাই অবহেলা না করে একজন ভাল মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
যেহেতু এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে তাই ফোনের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে একজন ভাল ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। একই সাথে দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসুন। যেমন, নেতিবাচক সংবাদ, যেমন, মৃত্যু, আক্রান্ত সহ বিভিন্ন সংবাদ অতিরিক্ত মাত্রায় শোনা এড়িয়ে চলুন, বেশী করে ইতিবাচক সংবাদ শুনুন, যেমন, করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি, বিভিন্ন গবেষণা ইত্যাদি শুনুন, পরিবারের সাথে অধিক থেকে অধিকতর সময় অতিবাহিত করুন, ধৈর্য ধারণ করুন, বই পড়ুন, মজার মজার সব রান্না করুন, অর্থাৎ এমন সব কাজে মনোযোগ দিন যা আপনার মনকে প্রফুল্ল করতে সহায়তা করবে।
এভাবে নিজের প্রতি দিনের কাজ কর্মের দিকে নজর দিলে এবং চিন্তা ভাবনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে মহামারীর এই দুঃসময়ে আপনার মাঝে থাকা উদ্বিগ্নতা অবশ্যই কমবে। এতে আপনি মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন। আর সুস্থ থাকাই আমাদের সবার কাম্য।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন