প্রতিনিয়ত করোনার প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর আর সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বেড়ে চলেছে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই। করোনার কারনে দীর্ঘসময় ধরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ ছিল। কিন্তু এই দীর্ঘসময় ধরে প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ থাকলে আর এরকম চলতে থাকলে অর্থনৈতিক অবস্থা পুরোপুরি ধ্বসে পড়বে যার পরিণতিতে হয়তো একসময় না খেয়েই দিন কাটাতে হবে। যার কারণে অফিস খুলে দিয়েছে সরকার।
পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যাচ্ছে কর্মজীবী লোকেরা। বাসা থেকে বের হলে সংক্রমণে মৃত্যুর ভয়, আর অফিসে গিয়ে কাজ না করতে পারলে না খেয়ে মৃত্যুর ভয়, কোন এক দিক থেকে মৃত্যুর ভয় তো যেনো মেনে নিতেই হচ্ছে। কিন্তু সব কিছু বন্ধ থেকে তো জীবন চলা সম্ভব না। তাই অফিসে কাজ করা লোকদের ঝুঁকি নিতেই হচ্ছে।
কর্মজীবী লোকদের অনেকেই চাচ্ছেন না অফিসে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলে হয়তো দেশ অচল হয়ে পড়বে, আর প্রতিষ্ঠান বন্ধ অবস্থায় বেতন দেওয়াও তাদের পক্ষে হয়তো সম্ভব হবে না। অফিস খুলে দেওয়াই মানুষজন তাদের চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হচ্ছে।
অফিসে যেতে সচেতনভাবে বাসা থেকে বের হলেও আমাদের জনবহুল দেশে তা কতটুকু সচেতন হয়ে থাকা যাবে, অনেকে সেটা নিয়েও ভাবছে। আমাদের জনবহুল দেশে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যে কঠিন হবে তা অফিসে যাওয়া কর্মজীবী লোকেরা বুঝতে পারছেন।
এরকম পরিস্থিতির শিকার কেউই হয়তো আগে হয়নি। অফিস খুলে দেওয়ায় কর্মজীবীদের অনেকেই সেটা স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। ভয়ভীতি সব এড়িয়ে তারা বাধ্য হচ্ছে কর্মস্থলে যেতে। কেউ কেউ চাচ্ছেন অফিস যাতে তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়, অফিসে যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা, অফিসে সেনিটাইজার এর ব্যবস্থা রাখা, অফিস কক্ষে দূরত্ব বজায় রেখে কাজের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন একটু বেশিই বাধ্য হচ্ছেন অফিসে যেতে, আর তাদের চাকরি বাঁচাতে অফিসে যেতেই হবে। এরকম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা প্রদীপ কুমার এর কাছ থেকে অফিস খোলার ব্যাপারে জানতে চাওয়া সে জানান, এতোদিন অফিস বন্ধ ছিল,আর বন্ধ অবস্থায় তাকে কোন বেতন দেওয়া হয়নি, আর এ চাকরিটা অনেক কষ্টে সে পেয়েছিল, আর এখন অফিস যেহেতু খুলে দিচ্ছে, সেটা আর এখন সে হারাতে চাচ্ছেন না। আর তার উপরেই তার পরিবারের লোকজন নির্ভরশীল। করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি জেনেও সে বাধ্য হচ্ছেন অফিসে যেতে। কারণ, অফিস বন্ধ অবস্থায় তাকে আবার পেটের তাগিদে যুদ্ধ করতে হয়েছে। সব জেনেও সে এসকল যুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৈরি হচ্ছেন।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা আরিফ ইসলাম জানান, যাতায়াত ব্যবস্থা থেকে সবরকম সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে অফিস থেকে, তাই সে কিছুটা চিন্তামুক্ত। কিন্তু অদেখা এক ভাইরাসের সংক্রমণ যে কোন ভাবেই হতে পারে। কিন্তু তারপরেও সে সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। সংক্রমনের ভয় তে আছেই কিন্তু এভাবে তো দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় থাকা সম্ভব না। এরকম অনেকেই তারা তাদের ভিন্নমত নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুুত হচ্ছেন।
আতংক সবার মধ্যেই কাজ করছে। কিন্তু জীবন নাকি জীবিকার জন্য লড়াই করবে সে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে কর্মজীবী লোকেরা। হয়তো আরও কিছু সময় পর অফিসে গুলো খুললে সংক্রমনের সংখ্যা কম হতে। কিন্তু সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, আর এ অবস্থায় অফিসে যেতে হবে কর্মজীবীদের। এ ঝুঁকি কতোটা এড়ানো সম্ভব তা তাদের জানা নেই। কিন্তু জীবনের নিয়মে চলতে গেলে এ ঝুঁকি মেনে নিয়েই অনেকেই অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
লিখেছেন: সৈয়দা মুমতাহিনাহ্ সোনিয়া
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন