“তোমার তো বয়স কম, তোমার অত চিন্তা নেই। চিন্তা হচ্ছে বয়স্কদের। সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি তাঁদের। বেশি জটিলতার আশঙ্কাও।” বলার আগে একবারও ভেবে দেখেন না অনেকেই, এসব শুনলে বয়স্ক মানুষটির মনের কী অবস্থা হয়।
আমরা যেমন জানি, বয়স্কদের কোভিডের আশঙ্কা বেশি, সুগার-প্রেসার-হৃদরোগ ইত্যাদি থাকলে আরও বেশি, তাঁরাও তো জানেন। শুনছেন প্রতিনিয়ত। ফলে কী হারে টেনশন বাড়ছে তাঁদের, তা সহজেই অনুমেয়। রোগ হলে কোথায় যাবেন, কী করবেন, কাকে ডাকবেন, ভেবে দিশেহারা তাঁরা।
এ এমন রোগ, কাউকে তো পাশে পাওয়া যাবে না! অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে কি আসবে? বাড়ির লোকেদেরও তো বিপদ! আর বাড়িতে কেউ না থাকলে, আজকাল যেমন হয়, ছেলে-মেয়ে বিদেশে, ঘরে স্রেফ বয়স্ক দুটি মানুষ, একজন রোগে পড়লে অন্যজনকে কে দেখবে? রোগী নিয়ে ছুটোছুটিই বা করবে কে? একা থাকলে তো হয়েই গেল। বাজার করতে, পেনশন তুলতে কি ওষুধ কিনতে বাইরে যাওয়া ছাড়া গতি নেই, তখন যদি সংক্রমণ হয়। তারপর একা হাতে ঘরের যাবতীয় কাজ।
এমনিতেই বয়স্ক মানুষের মধ্যে শতকরা ২০ জন অবসাদে ভোগেন। বেশি বয়সের কারণেই অনেক সময় নিঃসঙ্গতা, উদ্বেগ, অসহায়তা মিলেমিশে থাকে তাঁদের মধ্যে। কোভিডের আতঙ্কে ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তা এক ধাক্কায় বেড়ে গেছে অনেক। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসা। বাড়ির লোকেদেরও তো মাথার ঠিক নেই। টেনশন ও অসহায়তার শিকার তাঁরাও। ফলে সামান্য ঠোকাঠুকিতেই বড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।মানসিক ও শারীরিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন বয়স্করা। কোভিডের আশঙ্কাও বাড়ছে তার ফলে।
সমাধান
পরিস্থিতির গুরুত্ব যাঁরা বুঝছেন, তাঁদের দুশ্চিন্তা হবেই। বয়স হয়েছে বলেই আর বাঁচার দরকার নেই, এমনভাবে তো আর কেউ ভাবেন না। কাজেই দুশ্চিন্তা এখন নিত্যসঙ্গী। তার উপর যদি অর্থবল, লোকবল না থাকে, আরও দুশ্চিন্তা। আর এ রকম পরিস্থিতিতে দিনরাত কানের কাছে বলা হচ্ছে, ঝুঁকি বেশি, ঝুঁকি বেশি, উদ্বেগপ্রবণ মানুষের পক্ষে সে চাপ নেওয়া কি খুব সহজ ব্যাপার, যদি না তিনি নিজে ও তাঁর আপনজনেরা বিশেষ সতর্ক থাকেন।
সামলাতে কী করবেন
- প্রথমেই বুঝে নিতে হবে যে ঝুঁকি বেশি থাকলেও এই মুহূর্তে সাবধানে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই। বয়সটাকে নিয়ে তো আর কিছু করা যাবে না, অন্য আর যা যা রোগভোগ আছে, তাদের সামলে রাখতে হবে। ওষুধপত্র খেতে হবে নিয়ম করে। ওষুধের জোগান যেন ঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঠিক সময়ে ঠিকঠাক খাবার খেতে হবে। শরীর ঠিক থাকলে, মনও হালকা থাকবে।
- ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক-আধ দিন না হলে বা কম হলে সমস্যা নেই। কিন্তু দিনের পর দিন না হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ ভালো ঘুম হল দুশ্চিন্তা রোধের অব্যর্থ দাওয়াই।
- নতুন করে যাতে দুশ্চিন্তা না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চারদিকে তো এখন কোভিড ছাড়া কথা নেই। কিন্তু যাঁরা উদ্বেগ সহ্য করতে পারেন না, তাঁদের জন্য এরকম পরিস্থিতি মারাত্মক। কাজেই ঘরে এসব আলোচনা করবেন না। তবে বয়স্ক মানুষের মনে কোনও প্রশ্ন জাগলে তিনি যাতে উত্তর পান সেদিকে খেয়াল রাখুন। একেবারে কিছু না জানালেও কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়ে। কাজেই ভারসাম্য রেখে চলুন।
- হাত ধোওয়া, একটু দূরে থাকা ও বাইরে বেরলে মাস্ক পরার যে নিয়ম আছে, তা মেনে চলুন সবাই। বয়স্ক মানুষটিকে বোঝান যে এসব মানলে বিপদ কমবে।
মানতে হবে আরও কয়েকটি নিয়ম
- সকাল-সন্ধ্যা ছাদে একটু হাঁটাহাঁটি, হালকা দু-একটা স্ট্রেচিং বা যোগাসন। কখন কী করা যেতে পারে, তার একটা রুটিন করে নেওয়া। ভালো লাগুক না লাগুক, যখন যা করার কথা তা মোটামুটি মেনে চলা। নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলে দুশ্চিন্তা কম হবে।
- অসুখ হলে কোথায় যেতে হবে, কী করতে হবে, সেসব খবরও একটু নিয়ে রাখবেন, যদি দরকার হয়, তখন যাতে হাতড়ে বেড়াতে না হয়।
- যাঁরা সারাজীবন সব নিয়ন্ত্রণ করে এসেছেন, তাঁদের পক্ষে এই অসহায়তা মেনে নেওয়া কঠিন। তাঁদের বোঝাতে হবে যে পৃথিবীর তাবড় তাবড় মানুষও তাঁর মতো অবস্থায় আছেন এখন। জীবাণুর মেজাজ-মর্জি বুঝতে পারছেন না কেউই। কাজেই এ নিয়ে অহেতুক জল্পনাকল্পনা করা বা দুশ্চিন্তার কোনও মানে নেই।
- যাঁদের স্রষ্টায় বিশ্বাস আছে, তাঁরা ভাগ্যবান। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চূড়ান্ত বিরূপ পরিস্থিতিতেও এঁদের উদ্বেগ বা অবসাদ কম হয়।’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন