করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে সংবাদ মাধ্যম যেমন আমাদের সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করছে তেমনি অনেক ক্ষেত্রে এই সংবাদ গুলোই হয়ে উঠছে ভয়, হতাশা এবং দুশ্চিন্তার অন্যতম প্রধান কারণ। কিভাবে এই ফোবিয়া থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায় এবং সঠিক সংবাদের ভিত্তিতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায় সেটি নিয়ে ভাবা খুবই জরুরী।
যদি আপনার মনে হয়ে থাকে যে কোভিড-১৯ নিয়ে নানা রকম সংবাদ আপনাকে দিশেহারা করে দিচ্ছে, তাহলে আপনাকে বলতে চাই, আপনি একা নন। সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর উপর করা এক গবেষণার ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বিশেষ অবস্থাকে চিহ্নিত করেছে যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইনফোডেমিক’ বা ‘সংবাদভীতি’। এটি এমন একটি অবস্থা যা মানুষকে সংবাদ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত করে দেয় এবং এই অবস্থায় তার জন্য গুজব এড়িয়ে ভরসা যোগ্য খবর শোনা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ আরও কঠিন হয়ে যায়।
যেহেতু এই সংকটের সময় নিয়মিত খবর শোনা জরুরী এবং এটাও জরুরী যে আপনি হাজার গুজবের মাঝে সঠিক সংবাদটিই বেছে নেবেন তাই এই বিষয়ে সচেতন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এই সংবাদ গুলো যেন আপনার হতাশা, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা বাড়িয়ে না দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখাটাও জরুরী। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এসব কাজ আপনার জন্য বেশ সহজ হয়ে যাবে।
১) দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় খবর শুনুনঃ যেহেতু এখন আমরা চাইলেই বাইরে যেতে পারছিনা এবং কেউ আমাদের বাড়িতে আসতে বা আমরাও যেতে পারছিনা তাই ঘরে বসে সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়া। অনেকেই করোনায় আতঙ্কিত হয়ে সারাক্ষণই খবর শুনতে থাকেন। কোথায় কি হচ্ছে সেগুলো নজরে রাখছেন। আপনি হয়তো ভাবছেন এতে আপনার সচেতনতা বাড়ছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তেমনটা হয়ে ওঠেনা। অতিরিক্ত নেতিবাচক সংবাদ আমাদের চিন্তাভাবনাকে নেতিবাচকভাবেই প্রভাবিত করে এবং আমাদের মাঝে ভয়, আশঙ্কা, হতাশা, বিষণ্ণতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। এতে করে উপকারের বদলে ক্ষতিই হয় বেশী। তাই সব সময় এসব নিয়ে না ভেবে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সংবাদ শুনুন এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে অন্যান্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখুন, বই পড়ুন।
২) অতিরিক্ত সংবেদনশীল খবর বা আলোচনা এড়িয়ে চলুনঃ কিছু সংবাদ এমন হয় যেগুলো মনকে অত্যন্ত পীড়া দেয় এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে। অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মাধ্যম মানুষকে আকর্ষিত করতে এই ধরণের সংবাদ বেশী প্রচার করে। এই ধরণের সংবাদ মাধ্যম এবং সংবাদ এড়িয়ে চলুন। এমন ধরণের সংবাদ এবং আলোচনা দীর্ঘ সময় আপনার মস্তিষ্কে তার প্রভাব রাখে। এ ধরণের সংবাদ এড়িয়ে চললে আপনি মানসিকভাবে শান্তিতে থাকতে পারবেন।
৩) ইতিবাচক কাজে মন সংযোগ করুনঃ সংবাদ থেকে মনোযোগ সরাতে অন্য কোন কাজ যেটি আপনার প্রিয় সেটি করুন। এক্ষেত্রে পরিবারের সবার সাথে বসে আড্ডা দিতে পারেন, পছন্দের কোন বই পড়তে পারেন, রান্না করতে পারেন বা ডায়রি লিখতে পারেন। প্রতিনিয়ত খারাপ সংবাদ শুনলে একজন মানুষ ধীরে ধীরে হতাশ, একাকী, অসাড় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত চরম মানসিক সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে থাকেন। তাই যখন এই সংবাদ গুলো আপনার সামনে আসবে সেগুলোকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন এবং অন্য দিকে মনোনিবেশ করুন। এতে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে এবং আপনি সুস্থ ও সুন্দর সময় অতিবাহিত করতে পারবেন।
মানসিকভাবে সুস্থ থাকা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরী। তাই সতর্ক থাকার পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখতে হবে অতিরিক্ত সতর্কতা যেন মানসিক শান্তি ভঙ্গের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। তাই শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার প্রতি মনযোগী হন এবং মাত্রাতিরিক্ত নেতিবাচক সংবাদ শোনা থেকে বিরত থাকুন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে