আমার সব সময় দুশ্চিন্তা মাথায় আসে, বর্তমানে আমি কোন স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে নেই

0
41
গভীর রাতে আমি ঘুমের মধ্যে চিৎকার করি

প্রতিদিনের চিঠি – আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আপনিও লিখতে পারেন আমাদেরকে এই ইমেইলে monerkhaboronline@gmail.com। সেজন্য ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজকর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য, প্রাধান্য দেবার এখনই সময়

সমস্যা- আমার বয়স ১৯, আমার জন্মগত ভাবেই তোতলামি সমস্যা ছিলো/আছে এর কারণে আমি কোথাও নিজেকে উপস্থাপন করতে পারতাম না। স্কুলে পড়া হয়েও পড়া দিতাম না। কারো সাথে মন খুলে মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারতাম না। এর কারণে আমি এক প্রকার মানসিক ট্রমার মধ্যে পড়ে যাই। আর এই তোতলামি নিয়ে সব সময় সব জায়গায় আমার অস্বস্তি বোধ হয়। এক সময় এই বিষয়টা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা করতে থাকি। এর পর থেকেই আমার মাঝে অদ্ভুত সব চিন্তা আসে যেমন-

১। সব সময় যেকোন বিষয়ে নেগেটিভ ভাবি। যদি স্কুলে প্রাত্যহিক সমাবেশে জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য ডাকে, আমার তো তোতলামি আছে, এখন কী করবো এরকম আরো অনেক।

২। আমার সব সময় দুশ্চিন্তা মাথায় আসে। যেমন: যদি রাস্তায় পার হলে এক্সিডেন্ট করি।

৩। কোন কাজে মনোযোগ থাকে না, সব সময় বুক ধড়ফড় করে।

৪। সব সময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসের প্রতি ফোকাস চলে যায়। যেমন: গাছের ভাঙা ডাল ঝুলে থাকলে সেইটা হাত দিয়ে ছুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে, না ফেললে অস্বস্তি লাগে।

৫। একই চিন্তা, ইমেজ মাথায় বার বার আসে। যেমন: কোথাও কোন লেখা দেখলে পরে ওইটা মাথায় ঘুরপাক খায় কী ছিল ওইটা যতক্ষণ না আবার দেখবো ততক্ষণ মনে ওই চিন্তায় ঘোরে।

৬। ১০০% নিশ্চিত কাজও আমার কাছে সন্দেহ মনে হয়। যেমন: রুমের তালাটা কি লাগালাম, পরীক্ষায় বৃত্তটা কি ভরাট করলাম।

৭। বাসে উঠলে, চশমা পড়া লোক দেখলে, প্রতিবন্ধী কোন লোক দেখলে অস্বস্তি লাগে খুবই।

৮। সব সময় নোংরা লাগার ভয় লাগে এবং বার বার একই কাজ করতেই থাকি ও সবসময় নিজেকে নিয়মের মধ্যে রাখি যেমন: বারবার হাত ধোয়া। বইগুলো এইটার পর ওইটা রাখতেই হবে। বা হাত দিয়ে কিছু স্পর্শ করলে ডান হাত দিয়ে সেটা স্পর্শ করতেই হবে। ডানটা আগে দিতেই হবে। গাছের পাতার উপর পা দিয়ে যেতেই হবে।

৯। চশমা পড়া লোক আর কেউ বা হাত দিয়ে আমাকে বা আমার বই পুস্তক কিছু স্পর্শ করলে ওই লোক যতক্ষণ না ডান হাত দিয়ে আমাকে ও আমার বই পুস্তককে স্পর্শ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত খুবই অস্বস্তি লাগে।

১০। বাইরে একা বের হতে ভয় লাগে ও নিজেকে অনেক বড় কোন ব্যক্তি মনে হয়। অনেক কল্পনা বিলাসী। যেমন: সুন্দর একটা বউ হবে, অনেক টাকার মালিক হবো। যদি একটা বাইক থাকতো।

১১। যৌন উত্তেজনা খুবই আর প্রতিদিন মাস্টারবেশন না করলে ভালো লাগে না।

১২। সব সময় বুক ধড়ফড় করে যেন আমি মরে যাব, আমার অনেক বড় কিছু হয়ে গেছে।

১৩। প্রচুর পরিমাণে ব্রেইন শক্তি কমে গেছে। ও শরীর এতটা দুর্বল হয়ে গেছে যে এইসব কারণে রাতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

সর্বশেষ: বর্তমানে আমি কোন স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে নেই, আমার দৈনন্দিন কাজকর্ম সব এলোমেলো হয়ে গেছে। ছোট থেকে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি, এখন পাস করায় মুশকিল হয়ে গেছে। এখন সবসময় দুশ্চিন্তা, অবসাদ, মন খারাপ, খিটখিটে মেজাজ মনের দাসত্ব হিসেবে আমার দিন পার হচ্ছে।

-মাজিদ

পরামর্শ –ধন্যবাদ, আপনার সমস্যাটি পড়ে যা বুঝা গেলো তা হলো আপনার ৪ টি সমস্যা রয়েছে। প্রথমটি হলো সোশ্যাল এনজাইটি ডিসঅর্ডার, দ্বিতীয়টি হলো তোতলামি বা Stuttering, তৃতীয়টি হলো ওসিডি অর্থাৎ Obsessive-Compulsive Disorder এবং চতুর্থটি হলো যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু ভুল ধারণা। চারটি সমস্যার সমাধান একসাথে করা সম্ভব নয়, তাই প্রথমেই বলবো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে। যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক ভুল ধারণাগুলো দূর করতে হবে। বৈজ্ঞানিকভাবে, মাস্টারবেশনে কোনো ক্ষতি নেই কিন্তু ধর্মীয় বিষয়টি আলাদা। ধর্মীয় বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। তোতলামি একদিনে ঠিক হবেনা। এটি ঠিক করার জন্য কিছু ব্যায়াম এবং ঔষুধ প্রয়োজন। সোশ্যাল এনজাইটি ডিসঅর্ডারের জন্য সামান্য মেডিকেশন এবং কিছু ট্রেইনিং প্রয়োজন হবে। ওসিডির জন্য দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। ওসিডি বিষয়ক ভিডিও রয়েছে, লিংক নিচে দেয়া আছে দেখে নিবেন। ওসিডির চিকিৎসা আপনার জন্য প্রয়োজন দুইটি কারণে: প্রথমত, এই চিন্তাগুলো নিয়ন্ত্রন করার জন্য এবং দ্বিতীয়ত, আপনার দৈনন্দিন জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার আওতায় আসা যায় ততই ভালো। থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট T3, T4, TSH করিয়ে নিবেন এবং আপাতত রিলাফিন ৫০ মি.গ্রা. ট্যাবলেটটি সকালে নাস্তার পরে একটি করে খাওয়া শুরু করবেন। তবে অবশ্যই দ্রুত সময়ে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে ভালো হবে।

পরামর্শ দিয়েছেন-
অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
চেয়ারম্যান (এক্স)– মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
কোঅর্ডিনেটর– সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বিএসএমএমিউ।

চেম্বার – MK4C -মনের খবর ফর কেয়ার
মগবাজার রেইল গেইট।
নাভানা বারেক কারমেলা, লিফটের ৩,
(ইনসাফ কারাকাহ হাসপাতালের বিপরীতে)।
চেম্বার সিরিয়াল – ০১৮৫৮৭২৭০৩০

সম্পাদক, মনের খবর
সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।

ওসিডি বিষয়ে আরও জানুন-

আরো পড়ুন-

Previous articleবিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত
Next articleভুলে যাওয়ার নানা কারণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here