পিতামাতাই হল সন্তানের জন্য সব থেকে উৎকৃষ্ট রোল মডেল। তাই সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা ও উৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে গড়ে তুলতে আগে পিতামাতার আদর্শ আচরণ করা প্রয়োজন।
গবেষণায় দেখা গেছে, পিতামাতা যখন সন্তানের সামনে নিজেদের আচরণ ও চিন্তাভাবনার বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে উৎকৃষ্ট উদাহরণ প্রস্তুত করে, তখন তারা দ্রুত ও ভালোভাবে সেগুলো আত্মস্থ করতে পারে।
মনস্তত্ত্ববিদগণের মতে, সন্তানেরা কিছু শুনে শেখার থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দেখার মাধ্যমেই বেশী শেখে। আর শিশুদের শিক্ষার অধিক স্থান জুড়ে থাকে পারিবারিক শিক্ষা। অর্থাৎ পিতামাতার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা। শিশুরা সাধারণত তাদের পিতামাতা কি করছে, কি বলছে এগুলোকেই অনুসরণ করে। তাদের দেখেই আচার আচরণ করে।
তাই অভিভাবকদের এটা অবশ্যই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিৎ যে, তারাই শিশুদের প্রথম এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক। তাদের আচরণ এমন হওয়া উচিৎ যেন সেগুলো তাদের সন্তানদের সামনে একটি আদর্শ উদাহরণ প্রস্তুত করে।
শিশুরা কোনটিকে গুরুত্ব দেবে এবং কোনটিকে গুরুত্ব দেবেনা সেটিও নির্ভর করে পিতামাতার জীবন যাপনের ধারার উপর। যখন কোন পরিবারে শিশুরা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টিভি এই ধরণের বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, দেখা যায় সেই পরিবারে তাদের পিতামাতাও ঐ বিষয় গুলোকে তাদের জীবনে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আবার শিশুদের কথা বলা, শব্দ চয়ন এবং কোন কথার বিপরীতে দেওয়া প্রতিক্রিয়াও দেখা যায় তাদের পিতামাতার আচার আচরণ, কথা বলা বা প্রতিক্রিয়ার অনুরূপ হয়। শিশুরা বড়দের যা করতে দেখে তাই করে এবং বড়রা যা কিছু গুরুত্ব দেয়, তারাও সেগুলোকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
তাই প্রতিটি পরিবারে বড়দের বিশেষ করে পিতামাতার আচার আচরণ এবং কাজ কর্মে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
আবার অনেক পরিবারেই দেখা যায়, শিশুদের ভুলগুলো অভিভাবকগণ ধরিয়ে দেন না। তারা সন্তানদের কি কি শেখাবেন বা কিভাবে গড়ে তুলবেন এবং সেগুলোর জন্য কি কি করনীয় সেগুলোকে গুরুত্ব প্রদান করেন।
আবার সন্তানদের করা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল, যেগুলো তারা না বুঝে করছে সেগুলো তাদের ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এমন কাজ গুলোকে গুরুত্ব প্রদান করেন না। অর্থাৎ তাদেরকে এসব কাজ থেকে বিরত না করে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
পিতামাতার এ ধরণের কিছু না করাও এক ধরণের নেতিবাচক বা ভুল কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সন্তানের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। শিশুরা স্বাভাবিক ভাবেই খারাপ বা ভালোর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই তাদেরকে কি কি করতে হবে এর সাথে সাথে কি কি করা যাবে না এই জ্ঞানও পিতামাতাকেই প্রদান করতে হবে।
আপনার শিশু কি করবে, টিভিতে কি দেখবে বা কতোটুকু সময় দেখবে কিংবা কার সাথে কেমন আচরণ করবে এই সব কিছু আপনাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং শেখাতে হবে।
তাই তাদের সামনে আগে নিজেরা আদর্শ জীবন যাপন করুন যাতে তারা একটি আদর্শ পরিবেশে এবং আদর্শ জীবনাচরণ দেখে বেড়ে উঠতে পারে। তারা আপনার মাধ্যমেই জগতটাকে দেখবে এবং শিখবে।
শিশুদের কিছু শেখাতে আগে নিজের মাঝে সেই পরিবর্তন নিয়ে আসুন। তাই বলা যায়, আদর্শ পিতামাতাই আদর্শ সন্তান গড়ে তোলার মূল ভিত্তি।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে