নিদ্রাহীনতা যেমন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতি ডেকে আনে, আবার অতিরিক্ত ঘুমও তেমনই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বয়স, শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ঠিক কতটা সময় আপনার ঘুম হবে। নবজাতকের ঘুমের সময় আর একজন প্রাপ্তবয়স্কের ঘুমের সময় কখনো এক হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সুস্থ থাকার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। এক-আধ ঘণ্টা এদিক সেদিক হলেও সমস্যা নেই। তবে সমস্যা হয় যদি এর থেকে কম কিংবা বেশি ঘুম হয়।
বেশি ঘুমের কারণে শরীরে ডায়াবেটিস এবং হার্টের বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া এতে মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়। আবার কম ঘুমানোর কারণে কর্মদক্ষতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিষণ্নতা জেঁকে বসে। তাই সুস্থ থাকতে পরিমিত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই।
মার্কিন গবেষণা থেকে জানা গেছে, কম ঘুম ও অতিরিক্ত ঘুম উভয়ের ফলে হৃদরোগ, স্থুলতা, উদ্বেগসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
প্রায় ৫০ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, অপর্যাপ্ত ঘুম মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় দিকে বেশি প্রভাব ফেলে। এর কারণে কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ ও ওবেসিটি দেখা দেয়। এসব সমস্যা অবশ্য পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। আবার ঘুমের মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগ, স্থূলতা, উদ্বেগ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
অতিরিক্ত ঘুমের কারণ:
অনিদ্রার যেমন কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ থাকে, তেমনই অতিরিক্ত ঘুমও শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে হতে পারে। থাইরয়েড, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, স্লিপ অ্যাপনিয়া, ডিপ্রেশনের কারণে বেশি ঘুম হতে পারে। কিছু কিছু ওষুধের প্রভাবেও অতিরিক্ত ঘুম হয়।
দীর্ঘদিন ধরে একটানা ক্লান্তির শিকার হলেও অনেকে বেশি ঘুমিয়ে পড়েন। আবার শুধুমাত্র অনিয়মিত জীবনশৈলীর কারণেও অনেকে বেশি ঘুমান। তাই আপনারও যদি এমন সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে সবার আগে তার কারণটা খুঁজে বের করে তা সারানোর দিকে মন দিতে হবে।
অতিরিক্ত ঘুমের কারণে যা হতে পারে:
বেশি ঘুমের কারণে আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ডাাঁবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ। বেশি ঘুমের কারণে কোমরে, পিঠে যন্ত্রনা হতেও দেখা যায় অনেকের। মানসিক অবসাদে থাকা মানুষ অনেক সময় বেশি ঘুমায়। বেশি ঘুমে মানসিক অবসাদ আরও বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ঘুমে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা দ্বিগুণ বাড়ায়। তাই ওভারস্লিপিংয়ের অভ্যস থাকলে আজই তা ত্যাগ করুন।
যাদের বেশি সময় ধরে ঘুমের অভ্যাস, একদিন কম ঘুমালেই, তাদের মাথা যন্ত্রণার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দীর্ঘক্ষণ শোয়ার ফলে হাঁটা-চলা বা কোনো রকম মুভমেন্ট হয় না, ফলে মেদ বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। অতিরিক্ত ঘুমের হাত ধরেই আসে ডিপ্রেশন।
খুব কম বা খুব বেশি সময়ের ঘুম মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস করে। নারীরা পাঁচ ঘণ্টার কম অথবা ৯ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নিয়মিত ঘুমালে দুই বছরে তাদের মগজের কর্মক্ষতা কমে যেতে পারে।
অতিরিক্ত ঘুম থেকে বাঁচার উপায়:
অতিরিক্ত ঘুমের পেছনে যদি শারীরিক কোনো অসুস্থতা না থেকে থাকে, তাহলে কিছু সাধারণ উপায় মেনে চলতে পারেন। অভ্যাস আর ঘুমের প্যাটার্নে সামান্য অদলবদল ঘটিয়েই মুক্তি পাওয়া যায় অতিরিক্ত ঘুমের হাত থেকে।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং সকালে একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। নিয়মিতভাবে এটা বেশ কিছুদিন করতে পারলে শরীর ধাতস্থ হয়ে যাবে, ঘুমের নির্দিষ্ট ছন্দ আসবে। এই ছন্দটা ভাঙতে দেবেন না।
ঘুমানোর জায়গাটা আরামদায়ক হওয়া দরকার। ঘর অন্ধকার আর ঠান্ডা রাখুন। সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস সুইচ অফ করে দিন। বালিশ আর বিছানার গদি যেন আপনার অস্বস্তির কারণ না হয়, তেমন হলে তা বদলে ফেলুন।
জাগ্রত অবস্থায় কিছু সচেতন অভ্যাস আপনার ঘুমের রুটিনকে ছন্দে ফেরাতে পারে। চা-কফি খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, ঘুমানোর আগে একেবারেই এসব খাবেন না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কখনও ব্যায়াম করবেন না।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর ভাতঘুম দেয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। কিন্তু দুপুরের এই ঘুম আপনার ঘুমের ছন্দটাকে নষ্ট করে দিতে পারে। আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ হলে দুপুরের ঘুমটা বর্জন করুন। বরং এমন কিছু কাজ করুন ওই সময়টায় যাতে ঘুম না আসে।