আজ ২রা এপ্রিল “অটিজম সচেতনতা দিবস”। জাতিসংঘ সহ বিশ্বের অনেক দেশই এই দিনটিকে অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। সরকারী পর্যায়ে বাংলাদেশে কার্যকলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। কারণ আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যত; হোক সে অটিস্টিক অথবা বিশেষ শিশু (স্পেশিয়াল চাইল্ড)।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিজ্অর্ডার/অটিস্টিক/অটিজম হচ্ছে শিশুদের মস্তিকের বর্ধনমূলক বা বিকাশমূলক বৈকল্যের একটি সমষ্টিগত অবস্থা যা প্রধানত মাতৃগর্ভকালীন সময়ে মস্তিষ্কের বর্ধন বা বিকাশের সময় সৃষ্টি হয় এবং জন্মের পর প্রাথমিক কিছু উপসর্গ দ্বারা এই রোগের লক্ষনগুলোর প্রকাশ ঘটে। লক্ষনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “বিকাশমূলক ভাষা বৈকল্য”।
প্রকৃতির সহজাত নিয়মে যখন কোন শিশু মনের আবেগ অন্যের কাছে প্রকাশ করতে না পারবে তখন তার আচরনগত সমস্যা তৈরী হবে। কারণ ভাষা হচ্ছে মনের আবেগ প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের ভাষাবিকাশ ও প্রকাশে লক্ষনীয় ত্রুটি দেখা যায়। যা তার দৈনন্দিন জীবন প্রবাহে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। এই ধরনের সমস্যা একটি শিশুর নির্বাহী নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা থেকে শুরু করে তার সামাজিক দক্ষতা ও বুদ্ধিদীপ্ততার সার্বিক বিচ্যুতি বা বিকার পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। আর তার মাত্রাভেদ হয়ে থাকে ভিন্ন ভিন্ন। যা নির্ভর করে একটি শিশুর ভাষা আয়ত্তকরণের উপাত্তগুলো, অর্থাৎ-ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ তার উপর। কারণ এই উপাত্তগুলো নিয়ে একটি শিশুর জন্মগ্রহন করলেই হবে না উপাত্তগুলোকে বিশ্বব্যাকরনের ধারনা কার্যে উপযোগী করতে হবে। আর তা করতে হলে একটি শিশুকে পারিপার্শ্বিক উপাত্ত হতে “ইনপুট” প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপাত্তগুলোকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পারিপার্শ্বিক ভাবসত্তা ও বস্তুসত্তা চিনে তা তার নিজের প্রজ্ঞান কাঠামোতে ধারন করতে হবে। এই সহজাত কার্যটি একটি অটিস্টিক শিশুর মধ্যে অবর্তমান থাকে।
একজন চিকিৎসা ভাষাবিদ একটি শিশুর মধ্যে ভাষার উপাত্তগুলোর মধ্যে কোনটি কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে তা খুঁজে বের করেন এবং সেই অনুযায়ী তার চিকিৎসা ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন, যাকে বলা হয় “স্পীচ ল্যাংগুয়েজ থেরাপী”। যত তাড়াতাড়ি একটি শিশুর এই উপাত্তগুলোকে খুঁজে বের করে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে তত তাড়াতাড়ি একটি শিশুর আচরনগত অবস্থার উন্নতি হবে। কারণ বয়স বাড়ার সাথে এই উপাত্তগুলোর কার্যক্ষমতা প্রজ্ঞাকাঠামোতে ধারনের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
কোন শিশুর চিকিৎসা শুরুর পূর্বে প্রয়োজন রোগ নির্নয়। অর্থাৎ শিশুটি অটিস্টিক কিনা তা নির্নয় করতে হবে এবং স্পীচ ল্যাংগুয়েজ থেরাপী নেওয়ার উপযোগী কিনা অর্থাৎ হাইপার একটিভিটি আছে কিনা সেটাও নির্নয় করতে হবে। আর তা নির্নয় করবেন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং প্রয়োজনে ঔষধ ও প্রদান করবেন। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য একটি অটিস্টিক শিশুকে “অর্থবহ জীবন” প্রদান করা। যাতে সে পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য বোঝা না হয়ে যায়।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।