বলা হয় মানুষ অভ্যাসের দাস। কিন্তু অভ্যাস কার দাস সেটা নিয়ে খুব কমই আলাপ হয়। মানুষ যখন কোনো কিছুতে ভালোলাগা অনুভব করে (হোক সেটা ভালো কিংবা মন্দ) তখন তাতে বারবরা আগ্রহী হয়। মনে একপ্রকার টান অনুভব হয়। এই টান থেকে একই কাজ মানুষ বারবার করে। এটাই অভ্যাসের চূড়ান্ত রুপ।
এই অভ্যাস যদি হয় বদভ্যাস তবে তা পরিবর্তন করা জরুরী। কিন্তু অনেকে চাইলেও এটা করতে পারে না। যেমন কেউ বুঝতে পারে ধুমপান করা একটা বদ-অভ্যাস, কিন্তু সে তা ছাড়তে পারে না। বারবার ছেড়ে দিয়ে আবার পুনরায় করে।
এরুপ করা মানসিক ঝোঁকের কারণ। আমরা আচরণগতভাবে যা কিছুই করি তার অধিকাংশ অভ্যাস থেকে করি। আবার কিছু কাজ অনিচ্ছাসত্ত্বেও করতে করতে অভ্যাস হয়ে যায়।
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ৪০ ভাগের বেশি মানুষের দৈনন্দিন অচরণের পেছনে অভ্যাসগত কারণে ছিলো। এর পেছনে মূলত কাজ করে আবেগ। অর্থ্যা আমরা বলতে পারি ‘অভ্যাস আবেগের দাস।’
আবেগ হলো মনস্তাত্বিক বিষয়। আবেগ যখন আমাদেরকে তাড়া দেয় তখনই আমরা যেকোনো কাজে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠি। যা পরবর্তীতে নিয়মিত অভ্যাসে পরিবর্তিত হয়। যার থেকে চাইলেও অনেক সময় বের হওয়া যায় না। এর জন্য কিছু বিষয় মেনে চললে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুন….
শারীরিক ও মানসিক স্বস্তির জন্য আরামদায়ক ঘুমের ৩টি টিপস
এক. অভ্যান্তরীণ পরিবেশ : অভ্যান্তরীণ পরিবেশ আমাদের অভ্যাস পরিবর্তন বা নতুন কিছু অভ্যাসে পরিণত হওয়ার পেছনে বিশেষভাবে কাজ করে। অনেক অভ্যাস পরিবর্তন করতে চাইলেও দেখা যায় পরিবেশের কারণে করা যায় না। পরিবশে আমাদেরকে পুরনো অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে বাধ্য করে। এজন্য কোনো বিষয়ে অভ্যাস পরিবর্তন করতে চাইলে সেসম্পর্কিত পরিবেশ পরিবর্তন করতে হবে। যেমন :
- রাতজাগার অভ্যাস পরিবর্তন করতে চাইলে রাত জেগে কাজ করা হয় এমন পরিবশ পাল্টাতে হবে।
- ধুমপান ছাড়তে চাইলে ধুমপান করা হয় এমন পরিবেশ বা বন্ধু থেকে দূরত্বে যেতে হবে।
এভাবে যেই অভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরী মনে করবো সেখান থেকে নিজেকে আগে সরাতে হবে। তারপরই মন প্রস্তুত হবে সেই অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য।
দুই. কমপরিকল্পনা তৈরী করা : যেকোনো কাজ করা আগে পরিকল্পনা করলে তা অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়। বলা যায়, ‘পরিকল্পনা কাজের অর্ধৈক’। অর্থাৎ যাই করুন না কেন আগে থেকে পরিকল্পনা করুন। তাহলে সেটা বাস্তবায়ন সহজ হবে। কোনো অভ্যাস পরিবর্তন করতে চাইলেও পরিকল্পনা কাজে দিবে।
কেননা, চাইলে হুট করে কোনো কিছু থেকে নিজেকে বের করে আনা সম্ভব না। এর জন্য সময় ধরকার। আস্তে আস্তে করে নিজেকে সরিয়ে আনতে হয়। হঠাৎ করে কিছু একটা করতে চাইলে তাতে বিপরীত কিছু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কতটুকু সময়ে, বা কতদিনে নিজেকে কতটুকু পরিবর্তন করবো সেটা যদি পরিকল্পনা করা থাকে এবং সেই অনুযায়ী ধীরে ধীরে এগোতে থাকলে লক্ষপানে পৌঁছা শতভাগ সম্ভব হয়। এজন্য যা কিছুই করবেন আগে থেকে পরিকল্পনা করে শুরু করুন।
তিন. আত্মসংবরণ করুন : প্রায়শই, আমাদের আবেগ আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে এমন কিছু করি যা আমাদের জন্য সর্বোত্তম কল্যাণকর সুবিধা বহন করে না। আমাদের ব্যক্তিগত ইগো বা অহং প্রায়শই আমাদেরকে ভুলপথে চালিত করে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সুতরাং আমাদের আবেগের পরিবর্তে আমাদের চিন্তাধারা অনুসারে কাজ করা অতীব জরুরী। চিন্তাধারার এই মূল্যবোধের প্রতি যত্নশীল হওয়া আমাদের পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যাবে।
এই ধারণাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘অহং-সারিবদ্ধকরণ’ বলা হয়ে থাকে। ধারণাটি আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং বিকাশের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী মাইকেল রবিনসন ‘অহং-সারিবদ্ধতা’র ব্যাখ্যায় বলেন, এটি এমন পদ্ধতি যা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের কী করা উচিত তা জানার সাথে প্রকৃতপক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সাথে ব্যক্তির ক্ষমতার মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা করে।
অহং, চিন্তাধারা তাদের মূল্যবোধের সাথে সারিবদ্ধভাবে বসবাসের ফলস্বরূপ ব্যক্তি আরো ভালো এবং কম-বিরোধপূর্ণ জীবনযাপন করার চেষ্টা করে।
অভ্যাস এবং আবেগ আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং দক্ষ করে তোলার জন্য আমাদের মন এবং শরীর দ্বারা বিকশিত পদ্ধতি। যাইহোক, যদি আমরা নিয়মিতভাবে তাদের পর্যালোচনা এবং সংশোধন করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের জীবনকে ভুল পথে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারব।
সাইকোলজি টুডে অবলম্বনে শাহনূর শাহীন
এটাও পড়ুন….
যাপিত জীবনে পূর্ণতা পাওয়ার ৩টি উপায়
মার্কিন মনোবিজ্ঞানী মার্ক ট্র্যাভার্স এর লেখা এসংক্রান্ত নিবন্ধ পড়তে ক্লিক করুন