প্যানিক আক্রান্ত অবস্থায় নিজেকে যেভাবে শান্ত রাখবেন

0
110

এসিস্ট্যান্ট কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

প্যানিক অ্যাটাক একধরনের মানসিক সমস্যা। যুক্তিসংগত কোনো কারণ বা প্রকৃত বিপদের উপস্থিতি ছাড়াই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ভয় বা আতঙ্কে হঠাৎ করে যে শারীরিক প্রতিক্রিয়া বা উপসর্গ প্রকাশ পায় সেটাই প্যানিক অ্যাটাক। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।

এর ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেমনি বাধাগ্রস্ত হয়; তেমনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় বা বুকে ব্যাথা, ঘাম হওয়া, দম বন্ধ হয়ে আসা, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, শরীর কাঁপা ইত্যাদি উপসর্গ প্যানিক আক্রান্ত রোগীকে এক ধরণের নারকীয় অনুভূতি প্রদান করে। তাই যে কারো জন্যই প্যানিক অ্যাটাক একটি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।

প্যানিক অ্যাটাক সম্পর্কে ধারণা থাকলে এর জটিলতা বা তীব্রতা অর্ধেক কমানো যেতে পারে; কারণ তখন রোগী নিজেকে শান্ত রাখতে আগে থেকেই কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন :

মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা যেকোনো অস্থিরতার সময় আমরা যদি আরো ভয় পাই বা বিচলিত হয়ে পড়ি তাহলে তা আমাদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। প্যানিক অ্যাটাক শুরু হবার আগ মুহুর্তে মনের জোর রাখতে হবে। অর্থাৎ সেই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি রাখলে কিছুটা শান্ত থাকা যায়।

ইতিবাচক আত্মকথন : প্যানিক অ্যাটাক শুরু হবার আগেই মনে মনে বলুন যে, এতে আপনার কোনো বড় সমস্যা বা কোনো শারীরিক ক্ষতি হবে না। এটি অস্থায়ী; কিছু সময় পরে এই খারাপ সময়টা কেটে যাবে। প্যানিক আক্রান্ত ব্যাক্তি যদি নিজের মনকে এটা বুঝাতে পারেন অর্থাৎ ইতিবাচকভাবে আত্মকথন করেন তবে নিজেকে স্থির রাখা সহজ হয়।

মনোযোগ অন্যত্র ঘুরানোর চেষ্টা করা : প্যানিক আক্রান্ত হবার সময় মনোযোগকে অন্য দিকে ফোকাস করার জন্য মনে মনে পছন্দের কোনো কবিতা বা গান মনে করার চেষ্টা করতে পারেন; অথবা আপনার আশেপাশে কেউ থাকলে বা পছন্দের কোনো ব্যাক্তির সাথে কথা বললে দেখবেন কখন সময়টা দ্রুত কেটে গেছে টেরই পাবেন না।

গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দেয়া : সেই পরিস্থিতিতে এমনকিছু করতে হবে যা আমাদের শরীরে শিথিল অনুভূতির সৃষ্টি করে। গবেষণা বলছে, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস শরীরের শিথিলায়ন প্রক্রিয়াকে দ্রুত উদ্দীপ্ত করে এবং হৃদস্পন্দন কমাতে সাহায্য করে। তাই প্যানিক আক্রান্ত অবস্থায় গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসে মনোযোগ দিন।

প্রথমে, মনে মনে এক থেকে চার গণনা করতে করতে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। এবার কিছুক্ষণ শ্বাস ধরে রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে কয়েকবার মনোযোগের সাথে গভীরভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন। মনোযোগের সাথে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে থাকলে প্যানিক অ্যাটাকের তীব্রতা সেভাবে অনুভূত হবে না।

বর্তমানে মনোনিবেশ করা : মাইন্ডফুলনেস চর্চাও একটি অন্যতম উপায় হতে পারে। মাইন্ডফুলনেস হলো বর্তমান মুহূর্তে থাকা। যখন যেখানেই প্যানিক অ্যাটাক হোক না কেন, ওই মুহূর্তে আশপাশের যা কিছু আছে তাতে গভীর মনঃসংযোগ করলে দুশ্চিন্তা বা আতঙ্ক দূর হবে।

এসময় কোনোকিছু বিচার করা বা করণীয় কি- সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে শুধু চারপাশটা পর্যবেক্ষণ বা চোখ বন্ধ করে অনুভব করবেন। কিছুটা সময় এভাবে মাইন্ডফুলনেস চর্চা করলে একসময় সেই খারাপ সময় চোখের পলকে কেটে যাবে।

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন :

সূত্র : মাসিক মনের খবর ডিসেম্বর ২০২১ সংখ্যা।

  • মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে। লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com বা এই 01844618497 হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে।

/এসএস/মনেরখবর/

Previous articleবয়স্কদের ওপর মাদকাসক্তির প্রভাব
Next articleযৌন সম্পর্কে চিন্তারোগের প্রভাব এবং প্যানিক ডিজঅর্ডার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here