- সুমাইয়া নওশীন আহমেদ
প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ক্যান্সার ইতাদি দীর্ঘমেয়াদি রোগ জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমীক্ষা অনুযায়ী ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ব্যক্তি অন্ততপক্ষে একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হয়।
দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অক্ষমতার কারণে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি দৈনদিন জীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। রোগ ও রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার জটিলতায় শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এমনকি মানসিক নানা রোগেও আক্রান্ত হন। সেক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা এই প্রবীণদের জীবনে উল্লেখযোগ্য, ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবারের বায়োজ্যেষ্ঠদের দীর্ঘমেয়াদি রোগে পরিবারের যা যা করণীয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
রোগ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন : পরিবারের সদস্যরা যদি প্রধীণ বক্তির রোগের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত উপসর্গগুলি চিনতে ও বুঝতে পারেন, তাহলে রোগটি মোকাবেলা করা সহজ হয়ে যায়। প্রয়োজনে চিকিৎসককে রোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করে বা ইন্টারনেটে পড়াশোনা করে রোগ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করুন যাতে রোগীকে নির্ধারিত চিকিৎসা মেনে চলতে সাহায্য করতে পারেন।
রোগীর পুষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করুন : দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রবীণরা স্বাস্থ্যকর খাবারেরর প্রতি খুবই কম গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। খাবারের পুষ্টি বজায় রাখতে না পারলে বিদমান সমস্যা আরো খারাপ হতে পারে। তাই পরিবারের সদস্যদের রোগীর পুষ্টি পর্যাপ্ত হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করুন : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগজাতীয় বহু দীঘমেয়াদি রোগ নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই রোগীর পরিবরের সদসদের উচিত ব্যায়াম করতে উদ্বুদ্ধ করা।
রোগী যাতে আঘাত না পায় সেদিকে লক্ষ রাখুন : প্রবীণ রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ নির্ণয়ের পরপরই পড়ে যেয়ে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি কতটুকু তা নির্ণয় করা জরুরি। রোগীর থাকার জায়গা কতটুকু বিপজ্জনক তা যাচাই করুন। ওয়াশরুম সবসময় পরিষ্কার ও আলোকিত রাখুন, প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে গিয়ে যাতে পড়ে না যায়।
পরিবার ও বন্ধুদের থেকে সাহায্য নিন : দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুক্তভোগি ববা বা মায়ের যত্ন সন্তানের পক্ষে একা নেয়া খুবই কঠিন। প্রয়োজনে অন্যান্য বয়স্ক বক্তির যত্ন নিতে পারেন। বন্ধুবান্ধ ও আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য নিন।
নার্স বা পরিচর্চাকারী নিয়োগ দিন : নার্স বা পরিচর্চাকারী নিয়োগের মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য অসুস্থ বাবা বা মায়ের যত্ন নেয়া থেকে বিরতি নিয়ে নিজেকে রিফ্রেশ করুন। এতে করে নিজের প্রতি ক্লান্তি এবং বিরক্তবোধ আসবে না। উপযুক্ত সেবাযত্ন নিয়মিত করতে পারবেন।
দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুক্তভুগি প্রধীণ ব্যক্তিদের পক্ষে পরিবারের সদসদের সাহায্যের মাধ্যমে স্বাধীন ও মানসম্পন্ন জীবনযাপন সম্ভব। এজন্য পরিবারের সকল সদস্যকেই বয়স্ক অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। পরিবারের সব সদস্য যদি বয়স্কদের যত্নের প্রতি খেয়াল রাখে তাহলেই কেবল অসুস্থ ব্যক্তি পরিপূর্ণ সেবা এবং সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন জীবনযাপন করতে পারবে।
লেখক :
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।
সূত্র : নভেম্বর ২০২২ সংখ্যা। এই সংখ্যাটি দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক রোগের মানসিক প্রভাব ও দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক রোগের সাথে মানসিক রোগের সম্পর্ক বিশ্লেষণ এবং দীর্ঘমেয়াদী মানসিক রোগ সম্পর্কে ধারণা তুলে ধরা হয়েছে।
- আপনার কপি সংগ্রহের জন্য কল করুন : 01797296216, নিয়মিত পেতে গ্রাহক হতে চাইলে কল করুন : 01865466594 এই নাম্বারে।
/এসএস/মনেরখর/