স্বাভাবিক ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মিলন মেলা

স্বাভাবিক শিশু ও অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে বিশেষ এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে ইউকে ভিত্তিক Children’s Journey নামক প্রতিষ্ঠান

গত ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি রেস্তোরায় অনুষ্ঠিত হয়েছে Children’s Journey আয়োজিত ‘Meet and Greet with Mrs Tripti Podder’ ইভেন্ট।

Children’s Journey হলো UK থেকে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান যা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাংলা ভাষাভাষী শিশুদের /বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সঠিক বিকাশ নিয়ে কাজ করে।

তাদের মূল লক্ষ্য হলো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর শিক্ষার উপকরণ তৈরি এবং সঠিক ব্যবহারে শিক্ষক ও অভিভাবকগণকে সহায়তা প্রদান করা, যেন শিশুদের প্রয়োজনভিত্তিক পৃথক উপকরণ দিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষকরা সাহায্য করতে পারেন। কারণ আমরা জানি ‘প্রতিটি শিশু স্বতন্ত্র’।

অভিভাবকদের ও শিক্ষকদের সেবা প্রদানের জন্য ইংল্যান্ড ও আমেরিকা থেকে বিভিন্ন পেশায় পারদর্শী এবং বিশেষজ্ঞ এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত রয়েছেন যারা সরাসরি অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে কাজ করে থাকেন।

তাদেরই একজন তৃপ্তি পোদ্দার। গত ১৫ বছর ধরে শিশুর বিকাশ নিয়ে কাজ করছেন এবং তার এই অর্জিত জ্ঞান এবং ট্রেনিংকে কেন্দ্র করে তিনি বাংলাদেশে এই প্রথম একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন যেখানে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ সকল শিশু একই সাথে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল।

যেখানে ছিলো নানানরকমের শিক্ষামূলক এবং প্রয়োজনভিত্তিক খেলার আয়োজনের ব্যবস্থা এবং অভিভাবকদের সাথে ছোট আলোচনা সভা যা শিশুর সঠিক বিকাশ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে।

মনের আনন্দে খেলা করছে শিশুরা

শিশুদের প্রারম্ভিক শিক্ষা এবং সচেতনতার বিষয় উল্লেখ করে তৃপ্তি পোদ্দার বলেন, প্রতিটি শিশু অন্য আরেকটি শিশু থেকে পৃথক, আমাদের এই প্রতিটি শিশুর জন্য তাদের প্রয়োজন এবং অধিকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

সকলকে মিলে একসাথে একই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে উল্লেখ্য করে তিনি আরো বলেন, ব্যতিক্ৰমধর্মী ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা হলে শিশুর বিকাশে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং প্রত্যেক শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করতে হবে, স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে কারণ তারা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্ণধার।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিবিজন্যাস এবং মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিইউপি এর কারিকুলাম এন্ড ইন্সট্রাকশন বিভাগের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডঃ কাজী শহীদুল্লাহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি বিভাগের এইচএমও আইরিন বিনতে আজাদ, এস আই বি এল ফাউন্ডেশন হাসপাতালের সাইকোথেরাপিস্ট সায়েদ শামীম আহসান, সোনারতরী চিল্ড্রেন এন্ড এডোলেসেন্ট ক্লাব-এর ফাউন্ডার, মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী), আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট ফারজানা সেলিনা, স্পেশাল এডুকেশন এন্ড ডিজএবিলিটি এক্সপার্ট সুমাইয়া ফাতিমা এবং এম সিফাত আল হাসনাত প্রমুখ।

কথা বলছেন, একজন অতিথি

ইভেন্ট সম্পর্কে তৃপ্তি পোদ্দার বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম স্বাভাবিক এবং বিশেষ চাহিদার শিশুকে নিয়ে এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে বিশেষ চাহিদা এবং স্বাভাবিক শিশুকে নিয়ে একই সাথে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।’

‘আমি এই দুই ক্যাটাগরিকে একসাথে আনবো বলে কেউ আমাদের এই অনুষ্ঠানে স্পন্সর করতে চায়নি। কারণ এটা শুধু অটিস্টিকদের প্রোগ্রাম নয় এইজন্য। তাই আমি নিজেই আমার এই অনুষ্ঠানের বাকি অর্থায়ন করেছি‘ বলছিলেন তৃপ্তি।

মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী) বলেন, শিশু বিকাশের ০-৫ বছর হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। কেননা মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে এই সময়ে। তাই এই সময় শিশুকে যত বেশি করে খেলাচ্ছলে স্টিমুলেশন দেয়া যাবে তার শারীরিক, মানসিক এবং জ্ঞানীয় বিকাশ ততো ভালো হবে।

তিনি আরো বলেন শিশু লালনপালনের ভার শুধু মায়েদের নয়, পরিবারে আমরা যারা বাবা, চাচা, মামা আছি তারাও যেনো শিশুদেরকে গান শুনাই, ছড়া শুনাই, নাহয় নিজের সারাদিনের ব্যস্ততার গল্পই বলি। কথার মাধ্যমে শিশুদের সাথে সংযোগ মজবুত করে তুলতে পারে পারিবারিক বন্ধন।

চিল্ড্রেন্স জার্নির রিসোর্স ডেভেলপমেন্টে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ইফফাত আরা ইলিয়াস বলেন, শিশুর বিকাশ নিয়ে কাজ বাংলাদেশে এখনো পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে কেউ শুরু করতে পারেনি। আর্লি ইয়ার্স কেয়ারে একটি শিশুকে যে পরিমাণ সময় এবং শ্রম দেয়া লাগে, আমরা অভিভাবকরা এই সময়টাতেই অবহেলা করি এবং এর ফল হিসেবে বাংলাদেশে স্বাভাবিক শিশুর অস্বাভাবিকতা বাড়ছে।

‘মূলত এই সেক্টর নিয়ে চিল্ডেন্স জার্নি কাজ করছে এবং এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক এবং বিশেষ চাহিদার শিশুর একটি মিলনমেলায় অভিভাবকদের এ ব্যাপারে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আমি এ অনুষ্ঠানে ম্যানেজমেন্টে থাকতে পেরে আনন্দিত। আমার জন্য উভয় ক্যাটাগরির শিশুকে একইসাথে দেখতে পারা সৌভাগ্যের ছিলো’ বলছিলেন, ইফফাত আরা ইলিয়াস।

অতিথিদের সঙ্গে আয়োজকরা

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে অতিথিদের সম্মাননা স্মারক এবং নির্বাচিত বিশেশ চাহিদা সম্পন্ন কয়েকজন শিশুকে ক্রেস্ট প্রদানসহ সকল শিশুকে সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

অনুষ্ঠানের প্রচারের ভূমিকায় ছিলেন চ্যানেল আই। অনুষ্ঠান চলাকালীন সব শিশুকে ওয়ার্মআপ সেশনে ছিলেন ফিজিক্যাল ফিটন্যাস ট্রেইনার নদী ওহাব।

/এসএস/মনেরখবর

Previous articleসব সময় ভালো না লাগার অনুভূতি হয়, ভবিষৎ নিয়ে চিন্তায় থাকি
Next articleআত্মহত্যা! কতগুলো বিলম্বিত প্রশ্নের হতাশাজনক উত্তর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here