মিথাইলফেনিডেট হোক ADHD রোগের এসেনশিয়াল ড্রাগ BACAMH-এর উদ্যোগে বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত মত

0
125
BACAMH-এর উদ্যোগে বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত মত: মিথাইলফেনিডেট হোক WHO-এর এসেনশিয়াল ড্রাগ

“Neglected but Needed: Reassessing Methylphenidate for National Health Priorities” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে বিশেষজ্ঞরা ADHD রোগের এসেনশিয়াল ড্রাগস হিসেবে মিথাইলফেনিডেটকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এ তালিকাভুক্ত করার দাবি জানান। বর্তমানে এই ওষুধটি ADHD রোগের এসেনশিয়াল ড্রাগ হিসেবে স্বীকৃত নয়, যার ফলে এর দাম অত্যন্ত বেশি, অনেক দেশে অনুমোদন নেই এবং আমদানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রশাসনিক জটিলতা দেখা যায়। আজ ১৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সৌজন্যে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে BACAMH।

এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এ মিথাইলফেনিডেটকে ADHD রোগের  এসেনশিয়াল ড্রাগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি যৌথ অবস্থান উপস্থাপন করা। এই ওষুধটি ADHD বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এসেনশিয়াল ড্রাগের স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে এটি অনেকের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এসেনশিয়াল ঘোষণা করা হলে এই ওষুধটির দাম কমে যাবে, বিভিন্ন দেশে সহজলভ্য হবে এবং রোগীদের চিকিৎসা সহজ হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়রা শাহজাহান হৃদি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা. মো. রাহানুল ইসলাম, সচিব, BACAMH। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. এমএসআই মল্লিক, প্রতিষ্ঠাতা, BACAMH। বিশেষ অতিথি ছিলেন
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দিন,  অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার এবং অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক আলম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব, সভাপতি, BACAMH সহ আরও অনেকে।

মিথাইলফেনিডেট নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক আলম। ADHD রোগীদের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবীন মোর্শেদ বলেন, ADHD শুধু শিশু বয়সেই হতে পারে—এমনটি নয়, বরং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেও মানুষ এই রোগে ভোগে। এই রোগের বিষয়ে মানুষকে আরও বেশি সচেতন করা জরুরি উল্লেখ করে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহীদ বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেক দেরিতে ডায়াগনোসিস হয়, কারণ অভিভাবকরা শুরুতে বুঝে উঠতে পারেন না। তাই অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। আমাদের দেশে অনেক বাচ্চা এই রোগের কারণে পড়াশোনা সহ সার্বিক অনেক কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান। অনেকে বাচ্চাদের দুরন্তপনার সাথে ADHD-কে গুলিয়ে ফেলে বলে মত দেন অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার।

BACAMH-এর কাজের প্রশংসা করে আগামী দিনের জন্য সকলকে শুভকামনা জানিয়ে BACAMH-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. এমএসআই মল্লিক বলেন, আমাদের কার্যক্রমে সাইকিয়াট্রিস্ট ছাড়াও অন্যদেরকে সম্পৃক্ত করতে হবে, তাহলে আমরা সামনে আরও ভালো কিছু করতে পারব। অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, মিথাইলফেনিডেটকে এসেনশিয়াল ড্রাগ ঘোষণার মাধ্যমে এটি আরও সহজলভ্য হবে, বিভিন্ন ফর্মে পাওয়া যাবে এবং ব্যবহারের পরিধি বাড়বে। ADHD সহ নানা মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে এই ওষুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বক্তারা WHO-কে আবেদন করার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে মত দেন।

অনুষ্ঠানের শেষে সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে BACAMH-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, মেন্টাল হেলথকে জনসচেতনতার জায়গায় নিয়ে যেতে হলে BACAMH একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। তিনি আরও বলেন, যারা চাইল্ড সাইকিয়াট্রিতে কাজ করছেন, তাদের চাওয়া-পাওয়া যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলেই BACAMH-এর সফলতা।

অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি সমন্বিত মতামত গঠিত হয়েছে, যেখানে তারা WHO-কে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করার সিদ্ধান্তে একমত হন। ICAPAP এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে এই ওষুধটিকে এসেনশিয়াল ঘোষণার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নেবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের অনেক দেশে লাখো ADHD রোগী উপকৃত হবেন, এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।

আরও পড়ুন- 

Previous articleঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ঘিরে বিএপির নববর্ষের আয়োজন আগামীকাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here