আত্মনিয়ন্ত্রণের (Self Control) সাথে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। জীবনের কোনো না কোনো পরিস্থিতিতে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা মাত্রার অতিরিক্ত হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
আত্মনিয়ন্ত্রণ বলতে মূলত কী বোঝায়?
আত্মনিয়ন্ত্রণ বলতে এমন ক্ষমতাকে বোঝায় যার মাধ্যমে মানুষ তাদের ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনা ও আবেগগুলোকে সংযত করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ভালো ফল পাওয়ার আশা করে।
অধিকাংশ মানুষ এটাই চিন্তা করে যে, অতিমাত্রায় ইচ্ছাশক্তি থাকা এবং আবেগ, আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাই সবসময় আশা করা হয় যে কারোর ওপর রাগ হলেও আমরা সেটা সংবরণ করব। এমনকি কোনোকিছু করতে ভালো না লাগলেও, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সেই কাজটা শেষ করাই উত্তম পন্থা। সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে, আত্মনিয়ন্ত্রণ ভালো গুণ এবং সমাজে এরকম মানুষের দরকার আছে যারা তাদের আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।
কী হবে যদি আমাদের মাঝে অতিমাত্রায় ভালো জিনিস থাকে?
ভালো যেকোনো কিছু সবার জন্যই ভালো। কিন্তু সেটা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়, তবে তা সবার জন্য ভালো হবে কি না, এটা প্রশ্নবিদ্ধ একটা ব্যাপার। অতিমাত্রায় আত্মনিয়ন্ত্রণ যে কিছু মানুষের জন্য আসলেই সমস্যার কারণ হতে পারে সেটা নিয়ে গবেষণা চলছে এবং Radically Open Dialectical Behavior Therapy (RO DBT) নামে একটি পরীক্ষামূলক থেরাপির চর্চা করা হচ্ছে সেই সব ব্যক্তিদের জন্য যারা অতিমাত্রায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে বা মানুষের দ্বারা অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত হয়।
এ ধরনের ব্যক্তিদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য:
– এরা সচেতন এবং দায়িত্বশীল। তাই কাজে ঝুঁকি কম নেয়।
– যেকোনো কাজ তারা পরিপূর্ণ ও সঠিকভাবে করার চেষ্টা করে। এজন্য হয়তো তারা কম সময় পায় বিশ্রামের, কিন্তু তবুও তারা আপত্তি করে না।
– তারা যেকোনো কাজের বিস্তারিত ও খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়।
– তারা নিজের ভাবনা-চিন্তাগুলোকে নিজেদের মধ্যেই রেখে দেয় এবং সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে থাকে। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসব কথা নিজের মধ্যেই থেকে যায়।
– বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাঁধা-ধরা নিয়ম মানতে পছন্দ করে এবং অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।
– নিজেদের গুঁটিয়ে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
এ ধরনের আচরণ আপাত দৃষ্টিতে সঠিক মনে হলেও এর নেতিবাচক দিকও কম নয়, যার জন্য জেনেটিক ফ্যাক্টর ও পারিপার্শিক পরিবেশ ব্যাপকভাবে দায়ী। এগুলো মূলত তাদের জন্য মোটিভেশনাল ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। যদিও তারা অনেক দায়িত্বশীল, সচেতন ও চাপা স্বভাবের হয় কিন্তু সে অনুযায়ী তারা সবার নজরে আসে না। তারা সবার সাথে সহজে মিশতে পারে না, ফলে একাকীত্বে ভোগে। এজন্য তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা- যেমন: হতাশা, উদ্বিগ্নতা, ক্ষুধাহীনতা দেখা দেয়।
অনেক ধরনের চিকিৎসাই এ ধরনের মানুষদের জন্য বিবেচনায় আনা হচ্ছে যা তাদের আবেগগুলোকে সচল করতে, খারাপ চিন্তাগুলোকে পরিবর্তন করতে এবং সমস্যাগুলোকে দমন করতে সাহায্য করবে। তেমনি RO DBT হলো অতিমাত্রায় আত্ননিয়ন্ত্রণশীল মানুষদের সাহায্যের জন্য তৈরি করা এক থেরাপি, যার মাধ্যমে তারা তাদের সমস্যাগুলোর সাথে পরিচিত হতে পারে এবং সে অনুযায়ী সেগুলো সমাধানও করতে পারে।
এই পরীক্ষামূলক থেরাপিটি সেসব মানুষদের এমনভাবে সাহায্য করে যাতে তারা সহজেই সমাজের সকলের সাথে মিশতে পারে, বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়তে পারে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলাফেরা করতে পারে এবং সেই সাথে জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো বেছে নিতে পারে। সেইসাথে তারা যেন গদবাঁধা নিয়মকানুন থেকে বেরিয়ে এসে নতুন পরিবর্তনগুলোকে গ্রহণ করতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখা হয়।
তথ্যসূত্র: https://psychcentral.com/blog/archives/2017/12/02/why-too-much-self-control-can-be-a-bad-thing/
এফএস/এমএসএ