দেশে প্রতি দুই লক্ষ মানুষের জন্য একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

দেশের ১৬.০১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী ও ১৮.৪ শতাংশ শিশু কোন না কোন প্রকার মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত। কিন্তু জনসংখ্যার এই বৃহৎ অংশের সেবা দানের জন্য মাত্র ২১০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ৫০ জন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী রয়েছেন (দুই লক্ষ মানুষের জন্য একজন) যা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। ‘বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা ও সেবাসমূহ: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধ ও আলোচনা থেকে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। আজ ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ১০টায় ব্র্যাক সেন্টার কন্ফারেন্স হলে অুনষ্ঠিত এই আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সমুন্নত করার কাজে নিয়োজিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এডিডি ইন্টারন্যাশনাল।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত এই জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ডা: মো: ফারুক আহম্মেদ ভূইয়া; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা: মমতাজুল হক, লাইন ডিরেক্টর, কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ড: মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান এবং সিবিএম’র কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো: শাহনেওয়াজ কোরেইশী।
সেমিনারে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মোট তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সহকারী অধ্যাপক ডা: হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এবং এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমুন নাহার। সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধসমূহে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা ও সেবাসমূহের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়।
উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায় যে বিপুল সংখ্যক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর বিপরীতে বিদ্যমান সেবা-পরিসেবা, সেবা দানকারী জনবল ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো অত্যন্ত অপ্রতুল। তার উপর আমাদের সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস এই মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভোগান্তিকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা প্রদান ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এই সামাজিক অসচেতনতা, কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসই মূলত প্রধান অন্তরায়। তবে এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আশার আলো দেখিয়েছেন উপস্থাপক ও আলোচকবৃন্দ। দেশে বিদ্যমান শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এই প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সহায়ক হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ।
জাতীয় পর্যায়ের এই সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা: মো: ফারুক আহম্মেদ ভূইয়া, লাইন ডিরেক্টর, এনসিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে তাদের কাজের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, এখানে বক্তাগণ যেসব বক্তব্য রেখেছেন তা বর্তমান অবস্থার চমৎকার বিশ্লেষন । আপনারা জানেন মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল-এ মানসিক স্বাস্থ্য না থাকলে ও সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় তবে সকলে মিলে এক সাথে কাজ করলে এবং বিষয়টি সরকারের কাছে জানালে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে সরকার আরো সচেতন হবে। মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদা বোধ এবং সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা এই দুই বিষয়কে মাথায়কে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম। তিনি এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এই কাজের মধ্য দিয়ে সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূর করার আশা ব্যক্ত করেন। সবশেষে উপস্থিত অতিথি, আলোচকবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ ও উন্নয়নকর্মীগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও আগামীতে একত্রে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
প্রতিবেদক, মনেরখবর.কম


লক্ষ্য করুন- মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক খবর বা প্রেস রিলিজও আমাদের পাঠাতে পারেন। বৈজ্ঞানিক সেমিনার, বিশেষ ওয়ার্কশপ, সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো খবর পাঠাতে news@www.monerkhabor.com এই ইমেইলটি ব্যবহার করতে পারেন আপনারা।

Previous articleবাইরে যেতে ও মানুষের সাথে কথা বলতে আমার ইতস্তত লাগে খুব
Next articleনিজের ক্ষতি করার প্রবণতা একটি মানসিক রোগের উপসর্গ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here