মানসিক রোগ কমাতে ভূমিকা রাখছে 'পোকেমন গো'!

জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজ পোকেমন এবার এসেছে মোবাইল গেমে। পোকেমন গো নামের এই গেমটি এ মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে এসেছে। স্মার্টফোনের গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) এবং আগুমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে গেমটি নির্মাণ করা হয়েছে। গেমটি খেলতে হলে ব্যবহারকারীগণকে স্মার্টফোনটি সাথে নিয়ে পথে হাঁটতে হবে। হাঁটতে হাঁটতেই কোথাও মিলে যাবে কোনো এক পোকেমন। ম্যাপে দেখানো স্থানে গিয়ে আপনার ফোনের ক্যামেরা চালু করলেই ডিসপ্লেতে পোকেমন দেখা যাবে। এবং পোকেমন ধরার জন্য তার পাঁচ ফুটের ভেতর গিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ‘লুর মডিউল’ ছুঁড়তে হবে। এভাবে বুনো পোকেমন ধরে তাদের ট্রেনিং করাতে হবে। প্রশিক্ষিত পোকেমন দিয়ে অন্য ব্যবহারকারীদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামা যাবে বা গ্রুপ তৈরি করা যাবে।
নব্বইয়ের দশক থেকে বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজের আদলে তৈরি গেমটি ভীতিজনিত এবং বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যবহারকারীদের মানসিক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করছে বলে মানসিক রোগে আক্রান্ত অনেক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন।
ব্যবহারকারীদের একজন ২৮ বছর বয়সী লোলা ফনিক্স যিনি ‘এংজাইটি ডিজঅর্ডার’ রোগে আক্রান্ত তিনি বলেন, ‘অসুস্থ থাকাকালীন ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রেরণা পাওয়াটা অনেক কঠিন। কিন্তু ইদানিং আমি পোকেমনের খোঁজে প্রায়ই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছি এবং একই সাথে বাড়ির বাইরে অনেক কাজ করছি। এবং একই সাথে আমার মানসিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।’
গুরুতর বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত জেসানি পোপ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমি কাজের প্রেরণা পাচ্ছিলাম না। পোকেমন গো ব্যবহারের সময় আমি বুঝতে পারলাম এটি আমাকে ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে এবং পোকেমনের কাছে গিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পোকেমন ধরার ব্যাপারটি আমাকে বেশি উত্তেজিত করছে।’
স্কুল শিক্ষিকা ভিক্টোরিয়া বলেন, অপরিচিত স্থানে বা অপরিচিত মানুষ দেখলে নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। কিন্তু পোকেমন গো খেলতে গিয়ে আমি লক্ষ্য করলাম পোকেমনের সন্ধানে আমি আমার শহরের অনেক অলিগলি হেঁটে বেড়িয়েছি যেখানে আগে কখনও যাইনি, নতুন মানুষদের সাথে পরিচয় হয়েছে যা আমার কাছে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।’
যদিও বিশেষজ্ঞগণ পোকেমন গো এর এ ধরনের কোনো উপকারিতার ব্যাপারে অনেকটা সন্দেহ পোষণ করেছেন।
ইনফরমেশন ফর মেন্টাল হেলথ চ্যারিটি মাইন্ড-এর প্রধান স্টিফেন বাকলে বলেন, বসে বসে গেম খেলার চাইতে হেঁটে হেঁটে খেললে তা তুলনামূলক স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। একটি গেম যদি একাকীত্ব কমায় বা মানুষের সাথে মেশার প্রেরণা দেয় তাহলে সেটা অবশ্যই ভালো। তবে এটা মনে রাখতে হবে গেমিং কখনও সামাজিক সম্পর্ক তৈরির বিকল্প মাধ্যম হতে পারে না।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড্যানিয়েল ফ্রিম্যান মানসিক রোগের ক্ষেত্রে এই গেমের ভূমিকা ক্লিনিক্যালি পরীক্ষার প্রয়োজনীতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আগুমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি মানুষের মনে কি ধরনের প্রভাব ফেলে তার উপর সুস্পষ্ট পরীক্ষা নীরিক্ষার প্রয়োজন আছে। মনোবিজ্ঞান এবং আগুমেন্টেড রিয়েলিটির সমন্ময় মানুষের জন্য কিছু ভালো এনে দিতে পারে বলে তিনি মনে করেন। নইলে ইচ্ছামাফিক আগুমেন্টেড রিয়েলিটির ব্যবহার মানুষের ক্ষতির কারণও হতে পারে।
উল্লেখ্য, ‘পোকেমন গো’ খেলাটি এখন শুধু ইউএস, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত।
তথ্যসুত্র- দ্যা ইনডিপেন্ডেন্ট ইউকে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, মনেরখবর.কম

Previous articleবিশ্বাসের রোগ ও রোগের বিশ্বাস
Next articleমাঞ্চুউসেন সিনড্রোম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here