প্রতিদিনের চিঠি – আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আপনিও লিখতে পারেন আমাদেরকে এই ইমেইলে monerkhaboronline@gmail.com। সেজন্য ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
সমস্যা-আসসালামু আলাইকুম. আমি মনের খবরের নিয়মিত পাঠক। আস্থার এই প্লাটফর্মে আমার আজকের প্রশ্ন হলো: আমার মানসিক কষ্ট, মনের কষ্ট; যেগুলো মূলত কোনো না কোনো মেন্টাল ডিজঅর্ডারের লক্ষণ। এসব যদি বন্ধু, বান্ধব, কাছের আত্মীয় স্বজনদের বলি- তাহলে ওরা সুযোগ মতো আমাকে খোঁটা দেয়। কোনো বন্ধু রাগের মাথায় বলে- তুই তো পাগল, তুই কী এমনি এমনি মানসিক ডাক্তার দেখাও। পরিবারের লোকজন অনেক কিছু আমাকে এড়িয়ে চলে। আমি ইন্ট্রোভার্ট- এজন্য কেউ কেউ বলে বলদ। মন হালকা করার জন্য, সহায়তার আশায় কাছের লোকজনের সাথে কষ্টগুলো শেয়ার করি। একদিন তো একজন সিনিয়র ভাই, বলেই দিলো- তুই যে পাগল তা সবার কাছে শুনেছি। এখন আমি কী করতে পারি? পরামর্শ দিন, প্লিজ। আমি কী মনোকষ্টগুলো কাউকে বলবো না? সবাই তো বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। এখন এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে- মায়ের সাথে সমস্যার কথা বললেও, মনে হয়- বলা ঠিক হয়নি; ভুল করে ফেলেছি। আমি যেকোনো বিষয়ে এখন কথা বললেই মনে হয়, সব ভুল বলেছি। কথা বলাই উচিত হয়নি। আমাকে সহায়তা করুন, প্লিজ। মনোচিকিৎসক আমাকে বলেছে আপনার বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, এজন্য কয়েকবার কাউন্সেলিংও করিয়েছি।
পরামর্শ –প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। প্রথম কথা হলো, আপনি নিজে নিজে বুঝতে পেরেছেন, এটি খুবই ভালো বিষয়। যখন কেউ নিজে নিজে বুঝতে পারে যে এটি একটি সমস্যা, তখন তার সমাধানের পথও অনেক সহজ হয়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে চায় না যে এটি একটি মানসিক সমস্যা। আপনি প্রথমেই বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো মেন্টাল ডিজঅর্ডারের কারণে হয়ে থাকে।
প্রথমত, রোগ এবং রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে আপনার মধ্যে যে গ্রহণযোগ্যতা ও সচেতনতা তৈরি হয়েছে, সেটি খুবই ইতিবাচক। দ্বিতীয়ত, সহজভাবে বলতে গেলে, আপনি যদি ভাত খান তাহলেই আপনার পেট ভরবে, আর যদি না খান তাহলে পেট ভরবে না। পাশের মানুষ কী খেলো বা কী বললো, সেটি আপনার জন্য জরুরি নয়।
আপনার আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব খারাপ কথা বললে সেই কথার ভিত্তিতে আপনি যদি সময়মতো আপনার উপকার যথাযথভাবে না নেন, যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করান এবং আপনার সুস্থতা নিশ্চিত না করেন, তাহলে ক্ষতিটা হবে আপনারই। সুতরাং, কে কী বললো বা কী করলো, সেদিকে আপনার লক্ষ্য করার কোনো প্রয়োজন নেই।
যদি বিষয়টি এমন হয় যে রোগের কারণে আপনার মন খারাপ হচ্ছে, তাহলে চিকিৎসা করলেই আপনার মন খারাপ কমে যাবে। চিকিৎসার মধ্যে থাকলেই আপনার মন খারাপ কমবে। আপনি তখন নিজেই বুঝতে পারবেন কখন মন খারাপ হচ্ছে, এবং কী করলে আপনি সেই মন খারাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং অন্যান্য সমস্যাগুলো থেকে সুস্থ থাকতে পারেন।
সুতরাং, প্রথমে আপনাকে চিকিৎসার আওতায় থাকতে হবে। এটি খুবই ভালো যে আপনি সমস্যাটি বুঝতে পেরেছেন। অন্যদের কথা একেবারেই ভাববেন না। অন্যদের কথা যদি আপনি এইভাবে চিন্তা করেন যে আপনার মন খারাপ রয়ে গেলো এবং আপনার সমস্যাগুলো রয়ে গেলো, তাহলে মানুষ আপনাকে নিয়ে এসব কথা বলবে, যা আপনি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু, চিকিৎসার মাধ্যমে যদি আপনি সুস্থ হয়ে যান, তাহলে আর কেউ কিছু বলার সুযোগ পাবে না।
তাই, দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব আপনার কাছাকাছি কোনো মেডিক্যাল বা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি দেখা করুন। যদি আর্থিক সমস্যা হয়, তাহলে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করুন, কারণ প্রাইভেট চেম্বারে অর্থ একটু বেশি খরচ হয়, এটি স্বাভাবিক। আমি আপনাকে অনুরোধ করবো, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার আওতায় আসা আপনার জন্য ভালো হবে। সবকিছুরই চিকিৎসা রয়েছে, সুতরাং চিকিৎসাটি যথাযথভাবে নিন।
আপনাকে “মনের খবর” এর সাথে থাকার জন্য আবারও ধন্যবাদ। “মনের খবর” এর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমরা সবসময়ই আপনাকে পাশে চাই। আমাদের যে কোনো বিষয়ে আপনার পরামর্শ থাকলে অবশ্যই জানাবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন-
অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
চেয়ারম্যান (এক্স)– মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
কোঅর্ডিনেটর– সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বিএসএমএমিউ।
চেম্বার – MK4C -মনের খবর ফর কেয়ার
মগবাজার রেইল গেইট।
নাভানা বারেক কারমেলা, লিফটের ৩,
(ইনসাফ কারাকাহ হাসপাতালের বিপরীতে)।
চেম্বার সিরিয়াল – ০১৮৫৮৭২৭০৩০
সম্পাদক, মনের খবর
সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।
- এপোয়েন্টমেন্ট নিতে যোগাযোগ করুন – Prof. Dr. Shalahuddin Qusar Biplob