কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য, প্রাধান্য দেবার এখনই সময়

0
38
কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য, প্রাধান্য দেবার এখনই সময়

অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
চেয়ারম্যান (এক্স)– মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
কোঅর্ডিনেটর– সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বিএসএমএমিউ।

১০ অক্টোবর। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য – কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য, প্রাধান্য দেবার এখনই সময়।

কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য, প্রাধান্য দেবার এখনই সময়

কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি আসলে কী?

মানসিক স্বাস্থ্য শুনলেই মনে হয় মানসিক রোগ, ঘুমের ওষুধ, লুকিয়ে রাখার বিষয় আরও কতো কিছু! তো, কর্মক্ষেত্রে এটা আবার কীভাবে কী?

না, এটা শুধুমাত্র রোগ শোকের বিষয় নয়। একটু যদি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। এইমুহূর্তে পৃথিবীতে যতো মানুষ আছে, তার প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনো এমপ্লয়িমেন্ট বা কাজের সাথে সরাসরি জড়িত। তাদের অবশ্যই একটা কর্মক্ষেত্র আছে। অর্থাৎ তারা যেখানে, যে অফিসে, যে প্ল্যাটফর্মে কাজ করে সেই স্থানটির কথা বলা হচ্ছে। তো সেই স্থানটির একটি পরিবেশ আছে, কমিউনিকেশন সিস্টেম আছে, বেতন কাঠামো আছে, কর্মঘণ্টা আছে, আরও অনেক আনুসঙ্গিক বিষয় আছে। সবকিছুই আসলে পরিবেশ এবং শেষ পর্যন্ত মন ও মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত! সবকিছু আমরা এখানে আনতে পারবো না। তাই আলোচনাটাকে আমি দুটি মোটা দাগে ভাগ করি।

১. যারা কাজ করি, তারা যদি মানসিক রোগে ভুগি। বা তাদের যদি মানসিক রোগ থাকে তাহলে কি হয়!

২. রোগ থাকুক বা না থাকুক কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বা কর্মপদ্ধতি কেমন?

প্রথম পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যে বিষয়টি উল্লেখ করতে হয় সেটা হলো, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১২ মিলিয়ন কর্মদিবস ক্ষতিগ্রস্ত হয় কর্মচারীদের বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ এর মতো মানসিক সমস্যাজনিত কারনে। যার জন্য প্রতিবছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বুঝতেই পারছেন যথাযথ চিকিৎসা না করানো অথবা সময়মতো না নেওয়ার কারণে একজন মানুষ তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে না। একজন অসুস্থ মানুষ, বিশেষ করে মানসিক ভাবে অসুস্থ মানুষ তার দৈনন্দিন কাজ যেহেতু চালিয়ে যেতে পারে না, অথবা অফিসে গেলেও তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না।

কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য, প্রাধান্য দেবার এখনই সময়

সুতরাং তাতে করে তার স্বাভাবিক কর্মঘন্টা নষ্ট হয়, ছুটি নিতে হয়, প্রতিদিন ঠিকমতো আসতে পারার কারণে উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয়। তারই ১২ মিলিয়ন কর্মদিবস নষ্ট এবং এক ট্রিলিয়ন ডলারের মতো অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এখানে শুধুমাত্র বিষণ্ণতা ও এনজাইটি রোগ বিষয়ে বলা হয়েছে। আরো অনেক ধরনের মানসিক রোগ আছে যা এখানে উল্লেখ করা হয়নি। সেটি যদি হিসেবে আনা হয় নিশ্চয়ই তার, মানে এই ক্ষতিগ্রস্ত অর্থের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।

মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা করালে, এই অর্থ অবশ্যই অপচয় হবে না। আমরা জানি অনেক জায়গায় অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব যেভাবে দেয়া হয় মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সেভাবে দেয়া হয় না। সেজন্যই বলা হচ্ছে এখনই সময় কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাধান্য দেয়ার।

আরেকটি বিষয় এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশে, এখনো মানসিক রোগ শব্দটিই গ্রহণযোগ্য নয়। রোগের চিকিৎসা তো দূরের কথা উল্টো কেউ মানসিক রোগে ভুগছেন, এটি শোনার সাথে সাথে তার চাকরি ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কোথায় তাকে সুস্থ করে কাজে রাখার চেষ্টা করার কথা সেটি না করে উল্টো তাকে কাজ থেকে বিতাড়িত করা হয়। রই অবস্থারও উন্নতি করা প্রয়োজন।

এখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব অনেক এবং পলিসিগত পরিবর্তনও দরকার। আমাদের মতো দেশ গুলিতে এটি কঠিন হলেও, মানবাধিকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো সংগঠনগুলোর প্রয়োজন বিষয় গুলোকে আমলে আনা।
সংস্থা গুলোর প্রয়োজন- মানসিকভাবে অসুস্থ হলেই চাকরিচ্যুত না করে, তাদের অধিকার, তাদের কর্মক্ষমতা কীভাবে ধরে রাখা যায় সেদিকে নজর দেয়া।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেয়েছি সেটি হলো, পরিবেশ। কর্মস্থলের যোগাযোগ ব্যবস্থা, কর্মীদের ভিতর পরস্পরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, কর্মীদের ভিতর শ্রদ্ধাবোধ, কর্মদক্ষতা, ওয়ার্ক ওভারলোড, নিজেকে অর্গানাইজ করে কার্যসম্পাদন করার যোগ্যতা অর্জন করা, আনন্দের সাথে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা।

এ বিষয়টি যারা অসুস্থ অথবা যারা অসুস্থ না উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। আমাদের মতো দেশগুলোতে এর সব কিছু সব সময় সঠিকভাবে করা হয়তো কঠিন। তবে এখন সময় এসেছে আমাদের দেশেও এসবকিছু আমলে আনা। এখন অনেক সুন্দর সুন্দর এবং বড় বড় অফিস তৈরি হয়েছে, তারা যদি শুরু করে তবে অন্য ক্ষেত্রেও করা সম্ভব হবে।

বলা হচ্ছে যারা কাজ করে তাদের অন্তত ৬০% সময় কর্মক্ষেত্রে কাটাতে হয়। সুতরাং এই সময়কে, পরিবেশকে কীভাবে সুন্দর রাখা যায়, স্বাস্থ্যকর রাখা যায়, মানসিকভাবে উদ্দীপিত থাকা যায়, যোগ্যতা বাড়ানো যায়, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়, এইসব দিকে এখনই নজর দিতে হবে, প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলেই ব্যক্তি মানুষের পাশাপাশি, সামাজিক উন্নতিও করা সম্ভব হবে।

দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে, বিশেষ করে প্রযুক্তি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে মানুষের কাজের সুযোগ কমছে। প্রচুর মানুষ বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।

সুতরাং এখনই সময় কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে বোঝা, প্রাধান্য দেওয়া এবং ঢেলে সাজানো। প্রয়োজনে বিষয় গুলোকে, সমস্যাগুলোকে সামনে তুলে এনে যথাযথ ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ এবং দক্ষতা বাড়িয়ে কর্ম ঘণ্টাগুলোকে ফলপ্রসূ করে তোলা।

Magazine site ads

আরও দেখুন

Previous articleকাজের চাপে মানসিক চাপ
Next articleবিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪ উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here