খেলার মাঠের উপযুক্ত ব্যবহারে কমবে শিশু-কিশোরদের অপরাধগামীতা

0
99

ডা. মো. আব্দুল্লাহ ছায়ীদ
এমবিবিএস, এমডি (সাইকিয়াট্রি), সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,
নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ, সিলেট।

অপরাধ হলো কোনো ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত আইনবিরুদ্ধ কাজ। একটি অঞ্চলের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রণীত আইনের পরিপন্থী কার্যকলাপই অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। আমরা জানি, কেউ অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। নানাবিধ কারণ তাকে অপরাধী করে গড়ে তোলে। অপরাধ মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত। লঘু অপরাধ, গুরুতর অপরাধ। অপরাধ প্রবণতার কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে জেনেটিক কারণ, মস্তিষ্কের জৈবরাসায়নিক পরিবর্তন, মনস্তাত্ত্বিক কারণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ভৌগোলিক কারণ, গণমাধ্যমের প্রভাব, সমাজ ব্যবস্থা ও সুস্থ বিনোদনের অভাব।

Magazine site ads

এগুলো আমাদের চিন্তা, আবেগ, অনুভূতি ও আচরণকে প্রভাবিত করে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। কিশোর অপরাধ একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। দেশে কিশোর ও তরুণ সমাজের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ইদানীং পত্রপত্রিকায় কিশোর গ্যাংয়ের কার্যকলাপের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি দেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ হলো শিশু-কিশোর। শিশু-কিশোররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। তাদের উন্নতি ও অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে দেশ ও জাতির উন্নতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “তের চৌদ্দ বছরের মতো এমন বালাই আর নেই”। অপরাধ বিজ্ঞানী আলবার্ট কোহেন বলেছেন, “কোনো শিশুকে তখনই অপরাধী মনে করতে হবে যখন তার অসামাজিক কাজ বা অপরাধ প্রবণতার জন্য আইনগত ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে। দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, পরিবার কাঠামোর দ্রুত পরিবর্তন, শহর ও বস্তির ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ, অপসংস্কৃতি এবং সমাজজীবনে বিরাজমান নৈরাজ্য ও হতাশা কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রধান কারণ । যা রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক। কিশোর অপরাধের ধরনসমূহ হলো-জুয়া খেলা; নেশা করা; খেলার মাঠ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মারামারি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি; বাস, ট্রেন ও সিনেমা হলে বিনা টিকিটে যাওয়া, পরীক্ষায় নকল করা, এসিড নিক্ষেপ, রাস্তাঘাটে ছিনতাই, মারপিট, খুন, ড্রাগ, পর্নোগ্রাফি, অন্যের বাগানের বা ক্ষেত্রের ফল ও ফসল চুরি করা ইত্যাদি। শিশু-কিশোর অপরাধ মোকাবিলায় অপরাধের কারণ জেনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

মনের খবর ম্যগাজিনে

শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা কমানোর পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো খেলার মাঠের উপযুক্ত ব্যবহার। অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে খেলাধুলার মাধ্যমে শিশু মনের সঠিক বিকাশ হয়। যা শিশু-কিশোরদের চিন্তা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব, আবেগ ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে সহায়তা করে। ধেলাধুলার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়। খেলার মাঠের উপযুক্ত ব্যবহার শিশু কিশোরদের ইন্টারনেট এডিকশন, মাদক, পর্ন এডিকশন, টিকটক, লাইকি ও অনলাইন গেমস থেকে দূরে রাখে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আনন্দময় পরিবেশে উৎপাদনমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা কমানো যায় যার অপরিহার্য অংশ হচ্ছে খেলার মাঠের উপযুক্ত ব্যবহার।

আরও দেখুন- 

Previous articleখুলনার স্কুল হেলথ ক্লিনিকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
Next articleকর্মব্যস্ততা প্রভাব ফেলে যৌনজীবনে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here