শিশু-কিশোরদের নিয়ে সোনারতরীর ‘আত্মবিশ্বাস উন্নয়ন’ কর্মশালা

অংশগ্রহণকারীদের সার্টিফিকেট তুলে দেন ড. মাহমুদুর রহমান

‘‘চলো স্বপ্নের জাল বুনি’’ এই স্লোগান নিয়ে ২০২০ সালে করোনা মহামারী সময়ে অনলাইনে গড়ে উঠেছিল সোনারতরী শিশু-কিশোর সংঘ যেখানে শুধু সারা বাংলাদেশের বয়ঃসন্ধিকালিন (১০-১৮ বছর) শিশুরা অতিমারীতে তাদের জীবনযাত্রা, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেছে। জানিয়েছে নিজেদের আবেগ, অনুভূতি। শুধু তাই নয়, দেশের বাইরের বাংগালী শিশুরা যুক্ত হয় এই আয়োজনে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ অতিথিরাও ক্লাসে যুক্ত হয়ে কিশোর-কিশোরীদের সাথে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন, দিয়েছেন পরামর্শ।

গত ২১ জানুয়ারী, ২০২৩ রোজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত সোনারতরী শিশু-কিশোর সংঘ পরিচালিত, এবিসি আর্লি লার্নিং এন্ড ডে কেয়ার সেন্টার আয়োজিত দিনব্যাপী ‘আত্মবিশ্বাস উন্নয়ন’ কর্মশালার আয়োজন হয়। মোট ২০ জন কিশোর-কিশোরী নিয়ে সারাদিনব্যাপি সেশনটি পরিচালনা করেন সোনারতরীর প্রতিষ্ঠাতা, মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী)।

ওয়ার্কশপে বিভিন্ন মেমোরি টেস্ট, এক্সিকিউটিভ ফাংশন গেইমসের মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার ব্যপারে আলোচনা করা হয়। দেখানো হয় কিছু মোটিভেশনাল ভিডিও এবং পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্টেশন। মধ্যাহ্ন ভোজের পর কিশোর-কিশোরীদেরকে ৩টি ভাগে ভাগ করে পোস্টার প্রেসেন্টেশন করতে দেয়া হয় যার বিষয়বস্তু ছিল ‘সামাজিক যোগাযোগ’, ‘মনোযোগ বৃদ্ধি’, ‘আবেগ নিয়ন্ত্রণ’।

সফলভাবে শেষ হয়েছে সোনারতরীর ৭টি ব্যাচ এবং সাথে আছে মোট ৮৩ জন কিশোর-কিশোরী সদস্য। অনুষ্ঠান শেষে শিশু- কিশোরদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন এবিসি আর্লি লার্নিং এন্ড ডে কেয়ার সেন্টারের পরিচালক সোনিয়া ফারজানা আকরাম।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, সোনারতরীর উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মো. মাহমুদ ফারুকী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চাইল্ড সাইকোলজিস্ট শামীমা সিরাজি সুমি, ড. আইরিন বিনতে আজাদ প্রমুখ।

ভলান্টিয়ার হিসেবে ছিলেন, আনোয়ারা বেগম, মাহফুজা আলী, সায়েম আহমেদ রিপন, সাবিনা ইয়াসমিন এবং শারমিন ফেরদৌস।

এই পোগ্রামে উপস্থিত থেকে যারা দিনটিকে সফল করেছে তারা হলো জারিন, ইউসরা, মুসা, মিহরান, রাইসা, আরিশা, ওয়াদী, আরাফ, তারশীদ, হাসিন, সারজীল, রুফাইদা, আফিয়া, রিতু, মালিহা, তাহমিদ, সাইমা, নুসরা এবং সাদমান।

অনুষ্ঠান শেষে ড. মাহমুদুর রাহমান স্যার জানতে চান, আজকে দিন শেষে ঠিক এই মুহুর্তে কার মনে কী ভাবনা চলছে? তিনি বলেন, আমরা যখন নিজে নিজে কোনো খেলা খেলি সেটি হলো প্লে আর এই যে তোমরা আজকে প্রতিটি নিয়ম মেনে খেলছো এটা হলো গেইমস। যেমন- ফুটবল একটা গেইম। তোমরা আজকে এখান থেকে যা যা শিখে যাচ্ছো তা ছড়িয়ে দিতে হবে পরিবারে, বন্ধুদের সাথে, সমাজে যেনো তোমরা যখন বড় হবে তোমার কাছ থেকে সমাজের অন্য জনেরা উপকৃত হতে পারে”।

চাইল্ড সাইকোলজিস্ট শামীমা সিরাজি বলেন, তোমরা কি আকাশ দেখো? আকাশে মেঘের মাঝে তোমরা কি কিছু কল্পনা করে দেখতে পাও? তোমরা কি, ‘‘আমি যা দেখি, তুমি তা দেখ’’ এই খেলাটা খেলো? এই খেলাগুলোতে আমাদের বুদ্ধি এবং জ্ঞ্যনীয় বিকাশ ঘটে যা আমাদের পরবর্তী জীবনকে আরো সুন্দর করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

সোনারতরী-র উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মো. ফারকী বলেন, তাঁর অনেক পরিচয়ের মাঝে সোনারতরী-র উপদেষ্টা এই পরিচয়টি দিয়ে তিনি এখন স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সোনারতরী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তাই তিনি এর অগ্রযাত্রায় সকলের সহোযোগিতা আশা ব্যক্ত করেন। কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে এরকম আয়োজনকে তিনি সাধুবাদ জানান।

অনুষ্ঠান শেষে মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী) বলেন, কোভিড-১৯ চলাকালে শিশুরা যখন ঘরবন্দী তখন মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনলাইনে গড়ে উঠেছে সোনারতরী। আর আজকে সবাই মিলে কখনো ২ জন, কখনো ৩ জন এভাবে বিভিন্ন দলগত কাজগুলো করেছে যা আসলে অনলাইনে সম্ভব নয়। তাই কিশোর বয়সে এরকম সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ব্যাক্তিত্ব বিকাশে অত্যন্ত জরুরী।

একজন কিশোর বয়সী শিশুর সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা তাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলে। আমাদের সাথে একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিশোরীও অংশ নিয়েছিলো এবং এটা ছিল তার জীবনের প্রথম কোথাও একা একটি দিন কাটানো। পাপেটিং গেইমে সেও অন্যদের মত নিয়ম মেনে কাজ করেছে। এতে অন্যান্য কিশোর-কিশোরীদের মাঝেও সহোযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হতে দেখা গেছে। ‘তাই বয়ঃসন্ধিতে সোনারতরী তোমার পাশেই আছে’ শিশুদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা।

উল্লেখ্য, সোনারতরী-র অনলাইনে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বেশ কিছু কর্মশালা পরিচালনা করে থাকে। অনলাইনে ফ্রি এনরোলমেন্ট ‘Mental Health Wellbeing’ এর ক্লাসের বিষয়বস্তু সমূহ হলো :

১। আত্মবিশ্বাসী হই, ভালো স্পর্শ এবং খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে জানি।
২। মৌলিক আবেগ এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
৩। মনোযোগী হই, মন শিথিলকরণ শিখি।
৪। যোগাযোগ দক্ষতা শিখি।
৫। নেতৃত্ব ও দল গঠন কৌশল শিখি।
৬। আমার স্বাস্থ্য সুরক্ষা জানি, সচেতন হই।
৭। চাপ মোকাবেলা এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ।
৮। নারীপুরুষ সমতা ও আমার সামাজিক আচরণ জানি।
৯। মানসিক স্বাস্থ্যর প্রাথমিক চিকিৎসা জানি।

এছাড়াও অভিভাবকদের জন্য রয়েছে ওয়ার্কশপসহ ‘হেলদি প্যারেন্টিং’, ‘চাপ মোকাবেলা এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক কর্মশালা।

/এসএস/মনেরখবর/

Previous articleমনের খবর দিচ্ছে ‘বর্ষপূর্তি ফুর্তি অফার’ : স্মার্টফোন জেতার সুযোগ
Next articleডায়াবেটিক চিকিৎসায় ‘এম্পাগ্লিফ্লোজিন’ ব্যবহার : বৈজ্ঞানিক আলোচনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here