প্রবাসে কর্মস্থল এবং মানসিক স্বাস্থ্য

0
41

শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

প্রবাসজীবন কারো কাছে কাম্য, কারো কাছে শুধুই প্রয়োজন এর তাগিদ। কিংবা কারো কাছে বাধ্যবাধকতা। প্রতিটি মানুষের মাঝেই দেশ, পরিবার তথা তার শেকড়ের টান থাকে, যা জীবনের কোনো না কোনো সময় প্রবলভাবে অনুভূত হয়।

তাই অনেক গল্প উপন্যাসেও আমরা দেখি অনেক লেখক মানুষকে গাছের সাথে তুলনা করেন। যে কিনা একজায়গায় বেশিদিন থাকলে তার শেকড় গজিয়ে যায়, ফলে অন্যত্র চলে যাওয়ার সময় শেকড়ে টান লাগে। আর এজন্যই শেকড় ছাড়তে হলে মানুষ মন খারাপ করে, বিষণ্ণহয়।

এটা শুধু দেশান্তরের ব্যাপার নয়, এমনকি এক দেশের এক শহর থেকে অন্য শহরে অথবা গ্রাম থেকে শহরে থিতু হওয়ার ক্ষেত্রেও হয়। তাই পরবাসী মন নিয়ে কথা বলতে গেলেই মনে হয়, মন খারাপের বিষয়গুলো আগে চলে আসে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা বিশ্বেই প্রবাসীদের সংখ্যা উল্লেখজনক হারে বেড়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্বে ২৭২ মিলিয়ন ছিল মোট প্রবাসীদের সংখ্যা। যারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রবাসী জীবনযাপন করছেন। তাদের কারণ ছিল পেশাগত, একাডেমিক বা পারিবারিক। অন্যদিকে যারা কোনো যুদ্ধ অথবা দুর্যোগের কারণে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তাদেরকে বলা হয় শরণার্থী।

প্রবাসীদের মাঝে তাদের কর্মস্থলের পরিবেশ এবং পেশার সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের কেমন সম্পর্ক তা দেখার জন্য ইউরোপে হওয়া অনেকগুলো গবেষণা পর্যালোচনা করে একটা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। যেখানে ২০১৬ থেকে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত গবেষণাগুলো যাচাই বাছাই করা হয়।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রবাসী থাকেন ইউরোপে। বলা হয়ে থাকে, সর্বমোট প্রবাসীদের এক তৃতীয়াংশ থাকে ইউরোপের দেশগুলোতে। ইউরোপের জনসংখ্যার ১১% হচ্ছেন প্রবাসী।

এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডে ২৯.৯%, সুইডেনে ২০%, অস্ট্রিয়ায় ১৯.৯% এবং বেলজিয়ামে ১৭.২% প্রবাসী। বেশিরভাগ প্রবাসী আসেন উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবীয় এবং সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চল থেকে।

বিভিন্ন কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসার ফলে এবং প্রবাসে কাজের ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যা দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার। এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো হলো পেশাগত কাজের চাপ, কর্মস্থলের পরিবেশ, সহকর্মীদের মনোভাব এবং আয়ের হার।

গবেষণায় বলা হয়েছে, কর্মস্থলে নানারকম স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অসুবিধা বা স্বাস্থ্যহানিকর পরিবেশ, নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের মধ্যে মানসিক সমস্যার হার বেশি। এমনকি প্রবাসী যারা তারা কর্মস্থলে বিভিন্নরকম হয়রানিরও শিকার হন। যেমন শারীরিক, মানসিক এবং যৌন হয়রানি বা নির্যাতন।

যতগুলো গবেষণাপত্র নিয়ে রিভিউ করা হয়েছে তাদের সবার বয়স ছিল ১৫ থেকে ৭০ বছর বয়সের মধ্যে। তাদের মধ্যে আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, সোমাটিক সিম্পটম ডিজঅর্ডার, এবং মানসিক চাপ অনেক বেশি পাওয়া গিয়েছে।

এছাড়াও জীবনযাত্রার মান, ভালো থাকা এবং জীবন নিয়ে তৃপ্তির হারও অনেক কম ছিল। গবেষকরা এই বলে ইতি টেনেছেন যে, যেহেতু ইউরোপে কর্মজীবী মানুষের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরবাসী সুতরাং কর্মস্থলে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকলে পরবাসী হয়েও মনের ভার বইতে হবে না।

লেখক : ডা. সাদিয়া আফরিন
শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
সহকারী রেজিস্টার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে :

সূত্র : মাসিক মনের খবর আগস্ট ২২’ সংখ্যা।

প্রবাসী শ্রমিক, শিক্ষার্থী, অভিভাসী পরিবার ও শিশু কিশোর, প্রবাসী বয়োজ্যেষ্ঠ, গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ীরা প্রবাসে কেমন আছেন? ‘তাদের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন’ এসব নিয়েই সাজানো হয়েছে এই সংখ্যাটি। প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতেই আমাদের এ উদ্যোগ। আপনার সংখ্যাটি সংগ্রহ করতে বা বার্ষিক গ্রাহক হতে কল করুন : 01865466594 এই নাম্বারে।

  • মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিনের যেকোনো সংখ্যা সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে। লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com বা এই 01844618497 হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে।

/এসএস/মনেরখবর/

Previous articleউদ্বোধন হলো দেশের প্রথম সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল
Next articleস্ত্রী মৃত্যুর পর জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে, করণীয় কী?
ডা. সাদিয়া আফরিন
শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী রেজিস্টার- জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here