হতাশামুক্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের লক্ষ্যে এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সামাজিক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারম্যান শান্তা তাওহীদা।
গত শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আত্মহত্যা রুখতে একটি ক্যাম্পেইন ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস আমানুল্লাহ। শপথ গ্রহণের আগে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
শপথ প্রদানের সময় শান্তা তাওহীদা বলেন, ‘প্রতিটি মানুষেরই শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মনের যত্ন নেওয়ার বিকল্প নেই। এই কাজটি আমাদের করার কথা ছিল, কিন্তু আমাদের সমাজের তরুণরা এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে। এ ধরনের গবেষণা ও উদ্যোগ আরও বেশি বেশি নেওয়া উচিত। এখানে উপস্থিত ৫০ জন তরুণ আজ যদি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হয় তবে তার সঙ্গে সচেতন হবে ৫০টি পরিবার। এভাবেই সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে আঁচল ফাউন্ডেশনের মতো পদক্ষেপ নেয় তাহলে আমরা একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হব। সবাই মিলে আত্মহত্যাবিহীন সমাজ গড়ে তুলতে পারব’।
আঁচল ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা বিষয়ক সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে সর্বমোট ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে যা ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ। এরমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬২ জন।
সমন্বয়কৃত তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা নারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অন্যদিকে, সম্পর্কজনিত জটিলতার কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা সর্বাধিক। এক বছরে এতো বেশি সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর আত্মহনন সমাজ তথা পুরো দেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। সুতরাং, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে সমাজ ও আমাদের সবাইকে একজোট হয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ, জেনারেল সেক্রেটারি সামিরা আক্তার সিয়াম, অপারেশনাল সেক্রেটারি জিনাতুল জাহরা ঐশীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
দুশ্চিন্তা, সম্পর্কগত কারণ, আর্থিক সমস্যা, পড়াশুনা, মাদকাসক্ত, পারিবারিক সমস্যাসহ আরও বেশ কিছু কারণে। তরুণ শিক্ষার্থীরা যেন মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের কারণে এমন ধ্বংসের পথ বেছে না নেয় সেটাই এই ক্যাম্পেইনে গৃহীত শপথের মাধ্যমে জানান দেওয়া হয়। সচেতনতা সৃষ্টির জন্যে যেসব পোস্টারে লিখিত ট্যাগলাইন প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলো হলো, ‘জীবন এতো তুচ্ছ নয়, আমরা আনবো সূর্যোদয়’, ‘আজকে যদি ছেড়ে দেই, কালকের গল্প লিখবে কে?’, ‘লেট’স টেইক আ স্টেপ টু স্টপ সুইসাইড’, ‘স্টপ জাজিং’, ‘আই অ্যাম কনফিডেন্ট টু লিভ’, ‘হাল ছাড়বো না সফল হবোই’, ‘ইউ অলওয়েজ ম্যাটার’, ‘আমি এই পৃথিবীতে বাঁচতে চাই’ ইত্যাদি। সর্বোপরি, আত্মহত্যার প্রতি শূন্য সহনশীলতা দেখিয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখাই এই ক্যাম্পেইনের মূল বার্তা।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে