দাম্পত্য, যৌন সম্পর্ক এবং প্যানিক ডিজঅর্ডার

সম্প্র‌তি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের করা এক‌টি অনলাইন জরিপে দেখা গেছে প্যানিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে এই করোনাকালে। প্যানিক ডিজঅর্ডার বা মৃত্যুভীতি হলো এমন এক‌টি মানসিক রোগ যার মানসিক উপসর্গের চেয়ে শারীরিক উপর্সগ বেশী। তাই অনেক রোগীই রোগটিকে মানসিক রোগ ভাবতে নারাজ।

বিশেষ ক‌রে যখন দেখেন বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, হাত পা ঠান্ডা হ‌য়ে আসা এ সব কিছুই শারীরিক লক্ষণ। এই রোগের মানসিক লক্ষণ শুধু মাত্র মৃত্যুর ভয় এবং এরকম প্যানিক অ্যাটাক হ‌বে তার আতঙ্ক। ফলে এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা পেতে দেরী হয়ে যায়। শুধু রোগী কেন মানসিক বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কোন বিশেষজ্ঞ যেমন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরাও অনেক সময় ব্যর্থতার পরিচয় দেন।

হারবিসন, কুইজিপার এবং রীদস এর নেতৃত্বে করা গবেষণায় এমনটাই প্রতীয়মান হয়েছে। তাদের গবেষণায় দেখা যায় শারীরিক উপসর্গের প্রাধান্যের কারণে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা জরুরী বিভাগে রোগটিকে মানসিক রোগ ডায়াগনোসিস করতে ব্যর্থ হন। ফলে যত দিন যায় এই রোগের সাথে কো-মরবিডিটি হিসেবে বা সহঘটমান রোগ হিসেবে আরো কিছু মানসিক রোগ দেখা দেয়। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠে। সহঘটমান রোগগুলোর মধ্যে বিষণ্ণতা এবং যৌন রোগ অন্যতম।

বিষণ্ণতা নিয়ে অন্য কোন দিন আলোচনা করা যাবে। আজ প্যানিক ডিজঅর্ডারের সাথে সহঘটমান রোগ হিসেবে যৌন রোগ নিয়ে আলোচনা করতে চাই। যৌন রোগ বলতে আমরা যৌন মিলনে অক্ষমতাকেই বুঝি। এই অক্ষমতা আবার দুই রকম। এক নিজে যৌন মিলনে সামর্থ্য হতে না পারা বা আনন্দ গ্রহণে সামর্থ্য না হওয়া। দুই সঙ্গীকে আনন্দ দানে সমর্থ না হওয়া। পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে লিঙ্গোত্থান জনিত সমস্যা এবং দ্রুত বীর্যপাত। নারীদের ক্ষেত্রে লুব্রিকেশনের সমস্যা বা যথেষ্ট পরিমানে না ভেজা।

মৃত্যুভীতি একটি দুশ্চিন্তামূলক রোগ। দুশ্চিন্তা বা এংজাইটি আমাদের শরীরে কিছু প্রতিক্রিয়া হয় যা দুশ্চিন্তার শারীরিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ধরা হয়। একেক জনের শারীরিক বহিঃপ্রকাশ একেক রকম হয়। যেমন দুশ্চিন্তায় কারণে দম বন্ধ হয়ে আসে, কারো অতিরিক্ত ঘাম হয়, কারো হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। প্যানিক ডিজঅর্ডারে শারীরিক এই প্রতিক্রিয়াগুলোই প্রথমে দেখা দেয়। যাকে আমরা প্যানিক এটাক বলি। প্যানিক এটাকের পাশাপাশি মারা যাচ্ছি এরকম একটা ভয় আসে। এই ভয় আসা বা ভয় লাগাটাই এই রোগের মানসিক লক্ষণ।

সাধারণত আমরা যখন দুশ্চিন্তায় ভুগি তখন আমাদের শরীরে কিছু পরিবর্তন হয়। দেখা যায় শরীরের প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় অঞ্চলে রক্ত বেশী প্রবাহিত হয়। ফলে আমাদের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, হাতে পায়ে পিন ফুটানোর ব্যাথা অনুভূত হয়। পেনিস বা লিঙ্গ শরীরের একটি প্রান্তীয় অঙ্গ। দুশ্চিন্তায় এখানে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। লিঙ্গর উত্থানের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। উত্থিত লিঙ্গ যে গরম অনুভূত হয় সেটা উত্থিত অবস্থায় অতিরিক্ত রক্ত ধারণের জন্য। দুশ্চিন্তায় লিঙ্গে তুলনামূলক কম রক্ত প্রবাহিত হয় বলে লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এই নিয়ে গবেষণা কম হয়েছে। অর্থাৎ প্যানিক ডিজঅর্ডারে লিঙ্গোত্থান জনিত সমস্যা কি পরিমানে হয়, কতজনের হয় এরকম কোন জরিপ এখনো করা সম্ভব হয় নি। তবে যারা প্যানিক ডিজঅর্ডারে ভুগছে তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক গবেষণা হয়েছে। প্যানিক ডিজঅর্ডারে ভোগা রোগীদের একটি গ্রুপকে নির্দিষ্ট সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে তাদের মধ্যে শতকরা তেত্রিশ ভাগ রোগী সহঘটমান রোগ হিসেবে লিঙ্গোত্থান জনিত সমস্যায় ভুগছেন। তাই যারা মৃত্যুভীতি রোগে ভুগছেন তারা তাদের যৌন জীবনের প্রতি খেয়াল করুন। মৃত্যুভীতির পাশাপাশী যদি আপনার যৌন জীবনও আক্রান্ত হয় তাহলে দেরী না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিন। নারী হলে খেয়াল করুন বিশেষ সময়ে আপনার বিশেষ অঙ্গ কতটা সিক্ত হচ্ছে। সন্তোষজনক না হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। উল্লেখ্য বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশী মৃত্যুভীতি রোগে ভোগেন।

লিখেছেন: ডা. আতিকুর রহমান

সহকারী অধ্যাপক

মনোরোগবিদ্যা বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous article‘সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে’
Next articleমাথার ভেতর থেকে আওয়াজ আসে, আমি ভয় পাই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here