মানসিক চাপকে গুরুত্ব না দিলে বা প্রতিকার না করলে এটি ধীরে ধীরে আমাদের চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আধুনিক সমাজে ব্যস্ততা এবং মানসিক চাপ যেন প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হয়ে গেছে। মানসিক চাপ নিয়ে বহু সংখ্যক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এসব গবেষণায় মানসিক চাপ থেকে আমাদের শরীর ও মনের উপর কি ধরণের প্রভাব পড়ে সেটি সহ এই মানসিক চাপের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে।
মানসিক চাপ এমন একটি টার্ম যার সাথে উদ্বিগ্নতা এবং অসন্তোষ ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্বিগ্নতা এবং অসন্তোষ ছাড়া যদি কোন কারণে মানসিক চাপ বাড়ে তাহলে সেটি ইতিবাচক ভাবে দেখার কিছুটা সুযোগ থাকে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটি হয়না।
মানসিক চাপের একটি অতি ভয়াবহ রূপ হল উদ্বিগ্নতা। উদ্বিগ্নতা এমন একটি মানসিক অবস্থা যে অবস্থায় ব্যক্তির মনে হয় তার সাথে অবশ্যই খারাপ কিছু ঘটবে বা সে অসফল হবে, কিংবা তাকে অপমানিত, প্রত্যাখ্যাত বা প্রতারিত হতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তির মনে ক্ষয় ক্ষতির আশংকা থাকে, যা তার মাঝে ধীরে ধীরে বিষণ্ণতার সৃষ্টি করে।
আবার ব্যক্তি এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অর্থাৎ মানসিক চাপ কমাতে এমন সব কাজ করে, যাতে তার মানসিক চাপ তো কমেই না বরং উল্টো এটি তার মানসিক চাপকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। আর এই দায় উক্ত ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেবার প্রয়াস করে।
উদ্বিগ্নতার সাথে যখন তিরস্কার যুক্ত হয় তখন ব্যক্তির মনে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। তিরস্কার আমাদের মানসিক অবস্থা এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যখন আমরা ভাবতে থাকি, আমাদের দ্বারা আর কিছুই সম্ভব নয়।
এমন মানসিক অবস্থা সব রকম ভাবে আমাদের শুধুমাত্র সমস্যা বা নেতিবাচক দিক গুলোতেই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে রাখে। একই সাথে আমরা এই মানসিক অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার কোন রকম সমাধান খুঁজে পেতে ব্যর্থ হই।
উপরের আলোচনা থেকে মানসিক চাপের কারণ এবং এটি থেকে কত ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে সে সম্বন্ধে আমরা জেনেছি। তাই আমাদের সবার এই প্রয়াস করা উচিৎ যেন মানসিক চাপ কখনোই এই চরম পর্যায়ে না পৌঁছে যায়।
এ লক্ষ্যে কিছু সহজ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ, যা মনস্তত্ত্ববিদগণ দ্বারা সুপারিশকৃত, গ্রহণ করে মানসিক চাপকে সহনীয় মাত্রায় রাখতে হবে। মানসিক চাপ যেন মানসিক সমস্যায় পরিণত না হয় সে জন্য আমাদের প্রথমত উচিৎ মনের কথা কাউকে খুলে বলা। নিজের মাঝে সবকিছু লুকিয়ে না রেখে নিজের চিন্তা ভাবনা গুলোকে উন্মুক্ত করা।
এর ফলে আমাদের মনের নেতিবাচক দিকগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরা আমাদের চিন্তা ভাবনায় থাকা ত্রুটি গুলো অন্যদের মাধ্যমে বুঝতে পারবো। আমাদের বুঝতে হবে জীবনটা অনেক বড়। এখানে সংকীর্ণতার কোন স্থান নেই।
তাই নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতের ভয়কে বর্তমান থেকে দূর করতে হবে। অকারণ আশংকা এবং উদ্বিগ্নতা থেকে দূরে থাকতে পারলে দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ কখনোই আমাদের অনাগত দিনকে প্রভাবিত করতে পারবে না।
মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে মানসিক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরী। কারণ মানসিক চাপই সেই প্রথমিক পর্যায় যা থেকে ধীরে ধীরে অনেক জটিল মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই মানসিক চাপ থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে আনন্দ ও মানসিক প্রশান্তি নিয়ে থাকতে হবে এবং সুস্বাস্থ্য নিয়ে বাঁচতে হবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে