মানসিকভাবে শান্তিতে থাকাকে আমরা অনেক কষ্ট ভাবি। দেখা যায় মানুষ মানসিকভাবে ভালো থাকতে অনেক কসরত করেন। তবে অবশ্যই যারা সচেতন এটা শুধু তারাই করেন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশের ৯২%-৯৩% মানুষ বুঝতেই পারেন না কেন তাদের মানসিক অশান্তি হচ্ছে! তারা মানসিকভাবে যে ধীরস্থির হতে পারছেন না এই সম্বন্ধে তাদের কোন ধারণা নেই।
স্পোর্টস সায়েন্সেস ফর হেলথ-এ প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে লকডাউন চলাকালীন সময়ে বসে থাকা বৃদ্ধি কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
এই গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ২৮৪ জন অংশগ্রহণকারীকে অনলাইন প্রশ্নপত্র দিয়ে জরিপ করা হয়েছে, যা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, বসার সময় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন করেছে এবং দেখিয়েছে যে ঘরোয়া শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং বাগান করা মানসিক অবস্থার জন্য ভালো ছিল।
গবেষকরা দেখেছেন যে যখন ব্যক্তিরা দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি সময় কাটান, এমনকি সাপ্তাহিক ১৫০ মিনিট মাঝারি থেকে ভারী শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিরূপ প্রভাব পড়ে।
কমিউনিটি সাইকিয়াট্রি ও মাইন্ডপ্যাথ কেয়ার সেন্টারের মনোবিজ্ঞানী জুলিয়ান লাগয় বলেন, “আমাদের যতটা সম্ভব আসনহীন থাকার চেষ্টা করা উচিত এবং যতটা সম্ভব আমাদের হাঁটাচলা করা উচিত, ব্যায়াম করার এবং বাইরে থাকার চেষ্টা করা উচিত। যাতে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। ”
যখন বসে না থাকেন, আপনি সম্ভবত আরো স্বাস্থ্যকর কিছু করছেন, যে কারণে মেজাজ ভালো জন্য আচরণগত অ্যাক্টিভেশন সুপারিশ করা হয়। তিনি বলেন, “আমাদের আরও বাইরে যাওয়া, প্রকৃতিতে ঘুরতে বের হওয়া এবং ব্যায়াম করা প্রয়োজন, যা আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি করবে।”
জুলিয়ান আরও বলেন, “আমি আমার রোগীদের বলি যারা বিছানায় শুয়ে অনেক সময় ব্যয় করে তারা খুব হতাশাগ্রস্থ হয়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করে, বেশি বেশি ব্যায়াম করে এবং এমন কিছু করে যা তাদের খুশি করে। একবার মানুষ যদি নিজেকে এমন কিছু করতে বাধ্য করে ফেলে যেটা তাকে মন ভালো করতে সহযোগিতা করে এবং তাজা বাতাসে সময় কাটায়, তারা তাদের মেজাজে অনেক উন্নতি লক্ষ্য করেন। আমরা যা করি তা আমাদের মেজাজের উপর বিশাল প্রভাব ফেলে। ”
“আপনি কাজের মধ্যে থাকলে আপনার অফিসের ডেস্কগুলোর ফাকা জায়গা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করেন। আমি সবাইকে পরামর্শ দেই কাজের প্রেসারে থাকলেও কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিন কাজ থেকে এবং একটু অফিস করিডোরে হাঁটাহাঁটি করুন। যা আপনাকে একঘেয়েমি থেকে মুক্ত রাখবে। মন ও শরীর দুই আপনাকে সাহায্য করবে।
যেহেতু এই মহামারীটি সবাইকে ঘরের ভিতরে থাকতে বাধ্য করেছে, তাই জুলিয়ান উল্লেখ করেছেন যে এই গবেষণাটি গত দেড় বছরের পরে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। “এটি অনেক চমৎকার ব্যাপার ছিল যে ইংল্যান্ডে লকডাউনের সময় তারা ব্যায়ামের জন্য মানুষকে এক ঘন্টার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয় কারণ তারা বুঝতে পারে যে বাইরের ব্যায়ামের উপর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব রয়েছে”।
জুলিয়ান আরও বলেন, “বসে থাকা পরিপাককে ধীর করে দেয় এবং পেশীর ক্ষয় হতে পারে। যদি আমরা এটি খুব বেশি করি বা খারাপ ভঙ্গি নিয়ে বসে থাকি তাহলেও মেরুদন্ডে সমস্যা হয়। কাজ করার সময় যেনো একটু হলেও দাঁড়াতে পারেন এমন ডেস্কেই বসা উচিত কর্মস্থলে। আর কাজের ফাঁকে অল্প সময়ের জন্য বিরতি নিন আর বিরতিতে হেঁটে সময়টাকে কাজে লাগান। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উপাদান হিসেবে কাজ করবে।
এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বসার সময় বৃদ্ধি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে মহামারীর অনিশ্চয়তার সময় মানসিক স্বাস্থ্যের সুবিধা দেখতে বসার সময় কমানো এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য একটি আসনহীন জীবনধারা মোকাবেলা করা আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা অনেকটা আরামপ্রিয় জাতি। আমরা শুয়ে বসে থাকতেই ভালোবাসি । তবে এই মহামারীকালীন সময়ে আমরা অনেক সময় নবসে থেকেছি, ঘরের ভেতর সময় কাটিয়েছি। যা আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রভাব ফেলেছে। পৃথিবির মতো আমাদের দেশও ধীরে ধীরে এই মহামারীকালীন সংকট কাটিয়ে উঠছে। এই সময়টাতে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নিজেদের সুস্থ রাখতে অনেক ধৈর্য্য ও পরিশ্রম করতে হবে। ছোট ছোট শারিরিক ব্যায়াম আমাদের ভালো রাখতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি আমাদের স্থানীয় একটা কথাও প্রচলিত আছে “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”। সেই কথা মাথায় রাখলেও আমাদের ব্যস্ত হতে হবে। আরামের দিন শেষ পৃথিবীকে সুনদ্র করতে আমাদের সবারই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ শুরু করতে হবে। এই কাজগুলোই আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে করে তুলবে আরও বাসযোগ্য।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে