করোনা কালীন এই দুঃসময়ে অন্যান্য ব্যবস্থার মতো কর্মক্ষেত্রেও নেমে এসেছে চরম বিশৃঙ্খলা, যা নিয়ে তরুণ সমাজ সব থেকে বেশী দুশ্চিন্তায় রয়েছে। আর এর দুস্প্রভাব পড়ছে তাদের মানসিক অবস্থার উপর। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রকম মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।
করোনা মহামারী সব বয়স এবং সব পেশার মানুষকেই তাদের সাধারণ জীবন যাপন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে এবং আইসোলেটেড থাকতে গিয়ে আমরা দীর্ঘ একটা সময় বাইরে না গিয়ে সব কিছু ঘরে থেকেই করার প্রয়াস করছি। এ কারণে যেমন কমেছে বাইরে গিয়ে কাজ করার সুযোগ তেমনি কমেছে বিভিন্ন কাজের পরিধি।
করেনায় কর্ম ক্ষেত্রে সব থেকে বেশী যে অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে সেটি হল তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ যারা চাকরী প্রার্থী তাদের কর্ম জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা। এক দিকে কর্মহীন জীবনে বাড়ছে হতাশা অন্য দিকে সরকারী চাকরীর জন্য নির্ধারিত বয়স ধীরে ধীরে কমে আসায় অনেকের মাঝেই সৃষ্টি হয়েছে চরম দুশ্চিন্তা।
করোনা কালে অনেক মানুষকেই হতে হয়েছে কর্মহীন। নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় এবং চলমান অর্থনৈতিক সমস্যায় এসব কর্মহীন মানুষেরাও হতাশা, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতায় নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এই সব কিছু সার্বিক ভাবে তরুণ সমাজকে এক কঠিন সময়ের সম্মুখীন করেছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
করোনা তরুণ সমাজের মাঝে বেড়ে যাওয়া হতাশা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক জটিলতা সৃষ্টির জন্য দায়ী। এসব মানসিক সমস্যা অনেকের মাঝেই তীব্র একাকীত্ব, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধা মন্দা, ধৈর্য হীনতা ইত্যাদি জটিলতার জন্ম দিচ্ছে।
করোনায় অনেকেই হতাশা এবং একাকীত্বের বিষয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে যে তারা আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই বলা যায়, করোনা শুধু আমাদের শারীরিক ভাবেই ঝুঁকির সম্মুখীন করছে না, বরং এমন সব মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে যা থেকে মহামারীর মতোই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
করোনা মহামারি যেমন ব্যাপক মাত্রায় সংক্রামক এবং প্রভাবশালী, তেমনি আমাদের তরুণ সমাজের মাঝে এই যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলোর হারও অনেকটাই বেশি। যা সত্যিই মহামারির মতোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে উঠেছে।
সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং আবহমানতা সাধারণত তরুণ সমাজের উপরই নির্ভরশীল। তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে, তাহলে সমাজ থেকে নানা অসংগতি ও ব্যাধি সমূহ দূর করা খুব কঠিন হয়ে উঠবে। তাই করোনা কালে কর্মক্ষেত্রে নানা অসংগতি থেকে যে জটিলতা গুলি সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলি নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেবার প্রয়োজন রয়েছে।
করোনাকালে তরুণ সমাজকে হতাশা মুক্ত করতে গতানুগতিক কাজের চিন্তা থেকে বেরিয়ে তাদেরকে স্বনির্ভর হবার অনুপ্রেরণা প্রদান করা প্রয়োজন। এতে যেমন অর্থনৈতিক সমস্যা দূর হবে তেমনি কর্ম জীবন নিয়ে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তাও কমবে।
করোনাকালে অন্যান্য সব কিছু স্বাভাবিক রাখার প্রতি আমাদের যে আগ্রহ, সেটি তরুণ সমাজের ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনের দিকেও দেখানোর সময় এসেছে। এতে করোনাকালে সমাজের একটি বড় অংশকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখা এবং সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ ও করোনা মুক্ত আগামী গড়ে তোলায় তরুণ সমাজের ভূমিকা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।