দেশের ১৪টি সরকারি হাসপাতালে সাইকিয়াট্রিস্টদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩১শে মে সাইকিয়াট্রিস্টদের এই পদগুলো সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) এর উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকারের জনগণবান্ধব মানসিক স্বাস্থ্যনীতির কারণে নতুন ৫২ টি পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব চাইল্ড এ্যান্ড এডোলেসেন্ট মেন্টাল হেলথ (ব্যাকহাম)-এর সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি)-এর সাংগঠনিক ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খান।
উল্লেখ্য, দেশের ১৪টি সরকারি হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য মাত্র ৩২টি পদ ছিল। যা রোগীর তুলনায় একেবারেই সামান্য। তবে নতুন ৫২টি পদ সৃষ্টি হওয়ায় এখন পদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪টি। সর্বশেষ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ (অধ্যাপক ফারুক আলম) অনুযায়ী বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের সংখ্যা- ১৮ বছরের উর্ধ্বে ১৮.৭ শতাংশ আর ১৮ বছর বা তার নীচের ১৬.৩ শতাংশ।
দেশের ১৪টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালে আগে সাইকিয়াট্রি বিভাগে অধ্যাপকের সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচজন। সেখানে আরো আটটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। একই বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা ছিল ১৩জন। এই বিভাগে নতুন করে আরো ১৪টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সাইকিয়াট্রি বিভাগে সহকারী অধ্যাপকের সংখ্যা ছিল ১৪ জন। এই বিভাগে আরো ১৬টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে চাইল্ড এ্যান্ড এডলোসেন্ট সাইকিয়াট্রি বিভাগে কোনো সহকারী অধ্যাপকের পদ ছিল না। এই বিভাগে ১৪টি সহকারী অধ্যাপকের নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খান।
মানসিক রোগীদের সেবার মান নিয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, “খুব মানসম্মত সেবা আমরা দিতে পারছি , তা বলা যাবে না। তবে দেশের মেডিক্যাল কলেজ এ কর্মরত নিবেদিত প্রাণ সাইকিয়াট্রিস্টসগণ তাদের সীমিত জনবল, অবকাঠামো, সহযোগী জনশক্তির অভাব সত্ত্বেও একটি মানসম্মত সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পাবনার মানসিক হাসপাতালেও একই সমস্যা।”
ডা. খান আরো বলেন, “আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ কিন্তু অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়। তবে জনসাধারণের মানসিক রোগ এবং তার চিকিৎসা বিষয়ে আরো সচেতন করতে হবে। তখন আসলে আমরা সবাই এবং বাংলাদেশের সরকার মানসম্মত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বাধ্য হবো। এক্ষেত্রে মনের খবর খুব ভালো কাজ করে যাচ্ছে।”
নতুন পদগুলোর মাধ্যমে রোগীদের মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেবার মান অনেক উন্নত হবে এটুকু নিশ্চিত। তবে আরো অনেক কাজ করতে হবে।”
কতগুলো পদ সৃষ্টি হলে রোগীদের মানসম্মত সেবা দেয়া সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পদ সৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ কিন্তু মানসম্মত সেবা দেয়ার জন্য আমাদের আরো যেসব দাবী আছে সেগুলো যত দ্রুত বাস্তবায়ণ হবে তত বেশি রোগীরা মানসম্মত সেবা পাবে। আমাদের দাবীগুলো হলো-
নবসৃষ্ট পদগুলোতে যতদ্রুত সম্ভব দেশের পাশ করা সাইকিয়াট্রিস্টদের পদোন্নতি বা নিতান্তই না হলে, চলতি দায়িত্ব দিয়ে পদায়ণ করতে হবে। সরকারি সাইকিয়াট্রিস্টদের পদোন্নতি প্রক্রিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে অতিদ্রুত অধ্যাপক পদগুলোকে পূরণ করতে হবে।
দেশের প্রতিটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আবশ্যিকভাবে পূর্ণাঙ্গ মানসিক রোগ বিভাগ চালু করতে হবে। এই বিভাগগুলোতে সাইকিয়াট্রিস্ট এবং চাইল্ড এন্ড এডোল্যাসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট নিয়োগ দান করতে হবে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর মাধ্যমে দেশের পাশ করা বেসরকারি সাইকিয়াট্রিস্টদেরকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আনা যায়।
দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ে একটি মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ চালু করতে হবে। যেটি প্রাইমারি কেয়ার এন্ড রেফারাল সেন্টার হিসাবে কাজ করবে। জেলা পর্যায়ে নবসৃষ্ট মেডিকেল কলেজ গুলোতে অতিদ্রুত সাইকিয়াট্রিস্ট পদায়ন করতে হবে। পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার পদায়ন করে মেডিকেল কলেজগুলোর সাইকিয়াট্রি বিভাগে কার্যকর অন্তবিভাগ ও বহির্বিভাগ চালুর ব্যবস্থা করতে হবে।”
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি ব্যাক্তিগতভাবে আনন্দিত। তবে সাংগঠনিকভাবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব চাইল্ড এ্যান্ড এডোলেসেন্ট মেন্টাল হেলথ (ব্যাকহাম) এর সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) এর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে মনে করি আমাদের একত্রে থেকে আরো অনেক কাজ করতে হবে।”
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে