মাদকাসক্তি একজন মানুষের শরীর ও মন উভয়ের উপরেই প্রভাব বিস্তার করে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি শুধু নিজের জীবনেই নয় বরং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই ব্যক্তি ও সমাজের স্বার্থে মাদকাসক্তি সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।
যে কোন সমস্যা যত দ্রুত সমাধানের প্রয়াস করা যায় তার দুস্প্রভাব ততোটাই কমিয়ে আনা যায়। মাদকাসক্তি এমন এক সমস্যা যা ধীরে ধীরে শরীর ও মনকে গ্রাস করে ফেলে। মাদকাসক্ত একজন মানুষ যেমন ধীরে ধীরে নিজের ব্যক্তিত্ব, বোধ, বুদ্ধি, বিবেক, বিচার ব্যবস্থা অর্থাৎ মানসিক সন্তুলান হারিয়ে ফেলে তেমনি নিজের পরিবার, বন্ধু বান্ধব সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমনকি কর্ম সংস্থান ও হারিয়ে যায়। দিন দিন তার শারীরিক ও মানসিক স্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছতে থাকে যেখান থেকে ভালো কিছু হবার সম্ভাবনা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হতে থাকে। মাদকাসক্ত একজন মানুষের মাঝে ধীরে ধীরে যেমন শারীরিক পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায় তেমনি পরিবার ও বন্ধু বান্ধব তার মাঝে মানসিক পরিবর্তন ও লক্ষ্য করে থাকে যা ধীরে ধীরে জটিল মানসিক সমস্যায় পরিণত হয়। নিচে সেসব সমস্যা এবং সমাধানে কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হল।
১) আসক্তিকে ন্যায্যতা প্রদানের প্রচেষ্টা
একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির মাঝে তার এই আসক্তিকে সব সময় ন্যায্য হিসেবে প্রমাণের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। তাদের মাঝে এই ভুল ধারণা সৃষ্টি হয় যে মাদক ই তাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিতে সক্ষম এবং এটি গ্রহণ যথাযথ এবং ন্যায্য। তাদের মাঝে এই মানসিক প্রবণতা ধীরে ধীরে আরও জটিল রূপ নেয় এবং তারা তাদের এই চাহিদা পূরণে যে কোন সীমা অতিক্রম করতে তৈরি থাকে। এর কোন রূপ ব্যতিক্রম হলে তারা পরিবারের অন্যান্যদের এমনকি নিজের ক্ষতি করতেও পিছপা হয়না।
২) মেজাজ ও ব্যক্তিত্বের আকস্মিক পরিবর্তন
মাদকাসক্ত একজন ব্যক্তির মেজাজ মর্জি সম্পর্কে ধারণা করা খুব কঠিন হয়ে থাকে। কারণ, তাদের মেজাজ মর্জি অত্যন্ত আকস্মিক ভাবে পরিবর্তিত হয়। মাদকাসক্তি যত তীব্র আকার ধারণ করে এই মানসিক সমস্যা ততোই গভীর হয়। তারা যখন তখন রেগে যায়। যে কারও উপর যে কোন সময় ক্ষেপে গিয়ে গৃহস্থালি জিনিসপত্র ভাঙচুর করার মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়।
৩) সম্পর্ক এবং মানসিক শান্তিতে ভাঙ্গন
মাদকাসক্ত একজন ব্যক্তির আচার আচরণে পাহাড় সমান পরিবর্তন পরলক্ষিত হয়। এই পরিবর্তিত বিবেক বুদ্ধি এবং আচার আচরণের কারণে তার পরিবার এবং কাছের মানুষদের সাথে তার মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। সবার সাথেই তার মতের অমিল ধীরে ধীরে এক তীব্র আকার ধারণ করে যা তাকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়। এর ফলে তার মানসিক প্রশান্তি ও ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়। হাজার মানুষের ভিড়েও সব সম্পর্ক থেকে দূরে সে একদম একা হয়ে যায়। অনেকের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতাও দেখা যায়।
একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির এই সমস্যা দূর করতে প্রথমত যে সাহায্য তার প্রয়োজন সেটি হল সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রদর্শন। আমাদের মনে রাখতে হবে মাদকের প্রতি তার এই আসক্তি থেকে তাকে মুক্ত করতে হলে তার মনের মাঝে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে যে তার ইচ্ছা শক্তিই তার এই সমস্যা দূর করতে সব থেকে বেশী প্রয়োজন। তার মাঝে সেই আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে তাকে সর্বোত্তম সহায়তা প্রদান করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে যে এই সমস্যা সমাধানে সবাই তার পাশে আছে। তার মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে তার মন থেকে মাদকের প্রতি আসক্তিকে কমিয়ে আনতে হবে।
মাদকাসক্তি একজন মানুষের মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে যেটি তাকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ করে দেয়। ধীরে ধীরে এই অসুস্থতা এতোটাই বেড়ে যায় যে চরম পর্যায়ে জীবনের ঝুঁকি ও সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির কাছের মানুষদের জীবনেও নেমে আসে চরম বিশৃঙ্খলা। তাই পরিবার ও ব্যক্তি স্বার্থে এই সমস্যার সমধান করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে