করোনা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। তাছাড়া ঘরে থেকে থেকেও আমরা হাপিয়ে উঠেছি। এ অবস্থায় শরীর ও মন ভাল রাখতে পারে আধ্যাত্মিক কাজকর্ম এবং চিন্তাভাবনার বিকাশ।
করোনা মোকাবেলার অন্যতম প্রধান উপায় হল গৃহবন্দী জীবন। এর কোন কার্যকরী টিকা বা ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই প্রতিনিয়ত নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা নিয়ে আমরা সবাই খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। আর এভাবে ঘরে বন্দী থাকতে থাকতে আমাদের মানসিক অবস্থাও এখন বেশ সঙিন। অবিসাদ, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, ভয়, ক্রোধ, বিরক্তি ইত্যাদি নানা মানসিক সমস্যায় আমরা জর্জরিত। কিন্তু এর থেকে পরিত্রাণের ও কোন উপায় সামনে আসছেনা।
কারণ বাইরে গেলেই করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় ঘরে থেকেই কিভাবে আমাদের শরীর ও মন ভাল রাখা যায় সেই প্রচেষ্টা করতে হবে। এ সময়ে আমাদের যার যার আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এমন নয় যে যারা ধর্মে বা একটি সর্বোচ্চ শক্তিতে বিশ্বাস করে তারা স্বাস্থ্য বিধি মেনে জীবন যাপন করেনা। বিজ্ঞান এবং ধর্মের মাঝে কোন বিরোধ নেই। যেখানে বিভিন্ন ধরণের দুশ্চিন্তা আমাদের মন এবং বুদ্ধিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, সেখানে নিজের নিজের আধ্যাত্মিক চিন্তায় মনযোগী হলে হয়তো আমরা শান্তি খুঁজে পেতেই পারি।
আধ্যাত্মিকতা বা ধর্মীয় রীতিনীতির একটি বিশেষ দিক হল এটি মানুষের অভ্যন্তরীণ তাড়না দূর করে অন্তরে শান্তি আনায়ন করে। কোভিড-১৯ আমাদের দেখিয়েছে কিভাবে চোখের নিমিষে চারপাশের চেনা জগতটা বদলে যেতে পারে। আধ্যাত্মিকতা আমাদের শিক্ষা দেয় যে সব কিছুর উপরে এক সর্বোচ্চ শক্তি রয়েছে যা পারিপার্শ্বিক সকল শক্তির ঊর্ধে এবং সেটিই সব থেকে বেশী শক্তিশালী। সেই শক্তির কল্যানে আমরা সকল বিপদ থেকে মুক্তি পাব। আধ্যাত্মিকতা আমাদের মনে বিপদ মুক্তির বিশ্বাস এবং প্রেরণা যোগায়। যে কোন বিপদে আমাদের সাহস বজায় রাখে এবং আমরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। এগুলো মানসিক শান্তি বজায় রাখার জন্য খুবই জরুরী।
আধ্যাত্মিক ধারণায় এমন অনেক গল্প বা ঐতিহাসিক কাহিনী প্রচলিত আছে যেখানে আগের মানুষের এমন অনেক বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং আধ্যাত্মিক চর্চার দ্বারা সব বিপদ কাটিয়ে উঠেছে। এই কাহিনী গুলো আমাদেরকে অনুপ্রেরণা যোগায় যে আমরাও এই করোনা আতঙ্ক থেকে এক দিন মুক্তি পাবো।
এছাড়াও আধ্যাত্মিকতা ভাগ্যে বিশ্বাসী। এই ধারণা অভিব্যাক্ত করে যে আমাদের চারপাশ নিয়ত পরিবর্তনশীল। ভাল এবং খারাপ সময় পর্যায়ক্রমে আসবেই। খারাপ সময়ের পরে ভাল সময় অবশ্যই আসবে। সুখ দুঃখ নিয়েই এই কাল চক্র আবর্তিত হয়। ভাগ্যের সাথে সাথে প্রকৃতির এমন কিছু নিয়ম আছে, ঈশ্বরের ইচ্ছা ব্যতীত যা আমরা ইচ্ছা করলেই বদলে ফেলতে পারিনা। নিজের যে কোন অবস্থার জন্য ঈশ্বরের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এবং নিজের ও পরিবারের সবার কল্যান কামনা করতে হবে।
আধ্যাত্মিকতায় মনযোগী হলে যদি মানুষের মাঝে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা জন্মায়, যদি তাদের আত্মবিশ্বাস এবং সাহস বজায় থাকে এবং মানসিক অশান্তি দূর হয় তাহলে আধ্যাত্মিকতায় ক্ষতি কিছু নেই। তাই নয় কি?
এ সময়ে আমাদের সব থেকে বেশী যেটা প্রয়োজন সেটা হল ধৈর্য এবং বিশ্বাস, যা আধ্যাত্মিক চর্চায় লাভ করা সম্ভব। তাই করোনা থেকে বাঁচতে ঘরে থাকা সহজ করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে আধ্যাত্মিকতার চর্চা করা যেতে পারে। এতে আমাদের শরীর ও মন দুটোই ভাল থাকবে।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/us/blog/return-stillness/202006/when-the-world-is-out-control
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে