করোনা আবহে অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতা বাড়িয়েছে আত্মহত্যা প্রবণতা

0
200
আত্মহত্যা
আত্মহত্যার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অধিকাংশ কারণই মনস্তাত্ত্বিক। কোভিড-১৯ এর বাড়তি মানসিক চাপ করোনা কালীন সময়ে আরও বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে। আর এই সমস্যা ত্বরান্বিত করছে আত্মহত্যার মত অন্যান্য বড় ধরণের সমস্যা।

করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এখন সবাই আমরা গৃহবন্দী। বাইরে না গিয়ে ঘরে বসে বসে অবসাদ, বিষণ্ণতা সহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যায় আমাদের জীবন অতিষ্ঠ। আর মনস্তত্ত্ববিদগণ মহামারীর এই এই বছরটিতে সব থেকে বেশী চিন্তিত রয়েছেন এটি নিয়ে যে, এই ক্রমবর্ধমান মানসিক সমস্যাগুলো সহ অন্যান্য সমস্যা এড়াতে অনেকেই আত্মহত্যার মত চরম পথ বেছে নিচ্ছে।

মহামারী সব বয়সীদের মানসিক অবস্থার উপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকার চিন্তা এখন সবার মাঝে দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সহ সব ধরণের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। এই দুর্ভোগ থেকে যে মানসিক পীড়া উৎপন্ন হয়েছে তা থেকে মুক্তি পাবার জন্য বহু সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যাকে সমাধান হিসেবে বেছে নিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে পূর্বের তুলনায় বর্তমান সময়ে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সব বয়সী মানুষ বিশেষ করে মধ্য বয়সীদের মাঝে এই প্রবণতা বেড়েছে সব থেকে বেশী। করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে আমরা অনেক আলোচনা, গবেষণা করছি, অনেক নিয়ম পালন করছি। আজ সময় এসেছে আত্মহত্যা নিয়েও নতুন করে ভাবার। কিভাবে আমাদের নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশকে এই চরম আঘাত থেকে রক্ষা করা যায় সেটি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবার সময় এসেছে।

করোনায় আত্মহত্যার কারণে মৃত্যু হার কমাতে আত্মহত্যা প্রবণতার পেছনের সুস্পষ্ট কারণগুলো সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জানা আবশ্যক। আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ আমাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা বিশেষত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আত্মহত্যা প্রবণতা বহু গুণ বাড়িয়েছে। আরেকটি বড় কারণ হল স্বাভাবিক জীবনে ক্রমবর্ধমান জটিলতা। স্বাভাবিক জীবনের অত্যন্ত সরল কাজ গুলো এখন জটিলতায় পরিপূর্ণ। বিশ্বাস, ভরসা, আস্থা সব কিছু যেন এক চরম জটিল আকার ধারণ করেছে যা আমাদের আরও বেশী করে আত্মহত্যা ঝুঁকিতে ফেলছে। মানুষের মাঝে  দুর্ভোগ বেড়েছে। সব দিক থেকে মানুষ শুধু ক্ষয় ক্ষতি এবং লোকসানের মুখে পড়ছে যা থেকে বাঁচতে মানুষ আত্মহত্যাকে বেছে নিচ্ছে।

এমন অবস্থায় এই সকল ধরণের কারণ গুলোর যথাযথ নিবারণ করতে পারলে আমরা এই চরম পরিস্থিতি অবশ্যই এড়াতে পারবো। আমাদের খুব গুরুত্বের সাথে এই সমস্যাকে বিবেচনা করে এর সমাধানের কৌশল গুলো অনুসরণ করতে হবে যা আমাদের আত্যহত্যা নামক এই নতুন মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করবে।

১) আত্ম সচেতনতা বৃদ্ধিঃ আত্ম সচেতন ব্যক্তি তার নিজের জন্য ও অন্যান্যদের সুস্থ মানসিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একজন আত্ম সচেতন ব্যক্তি নিজেকে যেমন মানসিকভাবে ভাল রাখতে  পারে তেমনি অন্যদের ভাল রাখার প্রয়াসে ভূমিকা রাখতে পারে। আর ভালো থাকা আত্মহত্যার মানসিকতা প্রতিরোধের মূল অস্ত্র।

২) জীবন যাপনে ইতিবাচক পরিবর্তনঃ জীবনে দুঃসময় নেমে এলে অনেকেই হতাশা গ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, বদ অভ্যাস, মাদকাসক্তি ইত্যাদি নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে পড়ে। যা ধীরে ধীরে  মানসিক স্থিতির উপর থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে। তাই সব ধরণের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং কাজ কর্ম থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে এবং ইতিবাচক জীবন ধারার চর্চা করতে হবে যাতে আমরা ভাল-মন্দ বিচারের মত মানসিক অবস্থা হারিয়ে না ফেলি।

৩) বিভিন্ন সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়াঃ তাদের সাথে অধিক থেকে অধিকতর সময় অতিবাহিত করতে হবে এবং সে সব সম্পর্ককে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে যারা আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও যাদের ভালবাসি। বর্তমানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরেও যারা আমাদের থেকে দূরে আছে তাদের সাথে ভিডিও কল, ফোন কলের মাধ্যমে যুক্ত থাকতে হবে। যোগাযোগ রক্ষা করে ভাবের আদান প্রদান করতে হবে। এতে আপনি কখনোই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়বেন না। এসব সম্পর্কই হবে মনের জোরের প্রধান উৎস।

৪) সহানুভূতিশীল মনোভাবঃ নিজের প্রতি এবং অন্যান্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাবের বিকাশ ঘটাতে হবে। নিজের প্রতি ভালবাসা জন্মালে এবং নিজের কাছের মানুষদের ভালবাসার কথা মনে ধারণ করলে কেউ আত্মহত্যার মত অমানবিক দিকে ধাবিত হতে পারবেনা।

৫) কোভিড-১৯ টোটকা কাজে লাগানঃ কোভিড-১৯ থেকে আমরা যেমন বিভিন্ন ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তেমনি এঁকে আত্মহত্যা রোধে টোটকা হিসেবে আমরা কাজেও লাগাতে পারি। এই মহামারীর জন্যই আমরা আমাদের প্রিয় জনদের সাথে অধিক থেকে অধিকতর সময় অতিবাহিত করতে পারছি। কোয়েরান্টাইন আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা আমাদের মনের ইচ্ছে অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি এবং আগের সেই ব্যস্ত নির্জীব জীবন থেকে ছুটি পেয়েছি। এই সব ইতিবাচক সুযোগকে কাজে লাগালে কারও মানসিক স্থিতি কখনোই নেতিবাচক দিকে ধাবিত হতে পারবেনা এবং আত্মহত্যা সহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা থেকেও সবাই দূরে থাকবে।

বর্তমান সময় অত্যন্ত কঠিন হলেও এই পরিবর্তিত সময়কে আমাদের চোখ কান খোলা রেখেই মোকাবেলা করতে হবে। এটাই নিজেকে আরও ভালবাসার, নিজের পেছনে সময় দেবার উপযুক্ত সময়। আত্মসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের ভেতরকার মানুষকে আমাদের জাগ্রত করতে হবে। আত্মহত্যা  শুধুমাত্র একজন ভীত এবং কাপুরুষ মানুষের পক্ষেই করা সম্ভব। আমাদের এই সামাজিক ও মানসিক ব্যাধির বিরুদ্ধে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে এবং সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের প্রতিজ্ঞা করতে হবে।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleকরোনায় মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে স্বজন বিহীন মৃত্যু এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
Next articleফোন বা টিভির প্রতি শিশুদের অতিরিক্ত ঝোঁক এড়াতে অভিভাবকদের করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here