মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার তুলনায় কোনভাবেই কম গুরুত্ব দিয়ে দেখার সুযোগ নেই। সুস্থ্য জীবন যাপন করতে শরীর ও মন দুটিকেই সুস্থ রাখা প্রয়োজন। তাই শারীরিক সমস্যার মতো, মানসিক সমস্যা নিরাময়েও চাই দ্রুততর ও কার্যকরী পদক্ষেপ।
করোনা মহামারী আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যেমন ক্ষতি সাধন করেছে তেমনি মানসিক চাপ সহ অন্যান্য মানসিক সমস্যাগুলিকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় মানুষ এখন অনেক বেশী হতাশাগ্রস্ত, ভীত, ক্রোধ প্রবণ এবং বিষণ্ণ। এছাড়াও আমরা দেখেছি একাকীত্ব, আত্মহত্যা প্রবণতা, অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা, নির্যাতন সহ নানা সামাজিক সমস্যার উত্থান। এসব বিপর্যয় ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নিয়ে এসেছে চরম বিশৃঙ্খলা যা করোনা মহামারীর মতোই সমান ঘাতক রূপে আঘাত করছে। এক কথায়, আমরা সবাই এখন এক চরম মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যা নিরাময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখনো আমরা নিয়ে উঠতে পারিনি। এবং যার ফলস্বরূপ এই ক্রম বর্ধমান মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করেছে এক নতুন মানসিক সমস্যার মহামারী।
সব সময় আমরা এটাই দেখে এসেছি যে বিশেষ সমস্যা ছাড়া মানসিক রোগের চিকিৎসা সাধারণত করা হয়না। বিশেষ লক্ষ্য নিয়েই এই চিকিৎসায় বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়। সাধারণ মানসিক সমস্যাগুলোকে আমরা দ্রুততর প্রচেষ্টার মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্বারা নিরসনের পথে যেতে চাইনা। বরং গুরুত্ব না দিয়ে সেগুলোকে লুকিয়ে রাখি এবং দুর্ভোগের শিকার হই। কিন্তু এই মহামারী কালীন সময়ে বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, একাকীত্ব, হতাশা, মানসিক চাপ সহ অন্যান্য সাধারণ মানসিক সমস্যা গুলো এত ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে যে যদি পূর্বের ন্যায় আমরা এভাবেই এগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে ফেলে রাখি তাহলে মানব সমাজ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই সাধারণ সমস্যাগুলিকে যদি বাড়তে দেওয়া হয় তাহলে এটি এমন অবস্থায় পৌছাতে পারে যখন এটিকে সামলে নেওয়া এক প্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে এবং যা থেকে বেকারত্ব, দারিদ্র্য, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু, আত্মহত্যা ইত্যাদি সামাজিক সমস্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে।
তাই, করোনা মুক্তির সাথে সাথে আমাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি মোকাবেলার দিকেও বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যারা এই সেবা গ্রহণে অনুৎসাহী এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ততোটা জ্ঞাত নয়। তাছাড়া পর্যাপ্ত মানসিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ কেন্দ্রও প্রস্তুত করতে হবে যেন চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতায় কেউ কষ্ট না পায়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সচেতন করতে হবে যেন তারা দ্রুত সেবা গ্রহণ করতে উৎসাহী হয়। তাছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্পে যথেষ্ট পরিমাণ তহবিল গঠন করতে হবে যেন সেবা প্রদান সহজতর হয়।
করোনা সংকটের এই দুর্যোগ কালীন মুহূর্তে যেহেতু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা গুলি অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দুর্যোগ কালীন তৎপরতায় এই সমস্যাগুলির আশু ও যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা প্রয়োজন, তাই এই ব্যবস্থা গ্রহণে পর্যাপ্ত লোকবল ও নিয়োগ করতে হবে। অধিক মাত্রায় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী কর্মী প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যারা শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের এবং সর্বস্তরের মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করতে পারবে।
সময় এসেছে যখন আমাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে শারীরিক সমস্যা গুলির মতো করেই গুরুত্ব প্রদান করে সেগুলির দ্রুততর চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সুস্থ থাকা বলতে শুধু শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকাই নয় বরং মানসিকভাবেও সুস্থ থাকা, নীরোগ থাকা। তাই মানসিক সমস্যা চেপে না রেখে সেগুলি প্রতিকারের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/the-guest-room/202101/facing-down-mental-health-crisis
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে