করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে হাসপাতালের আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোর ৪৫ শতাংশ আইসিইউ কর্মী পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি), গুরুতর উদ্বেগ বা হতাশা কিংবা মদ্যপানের মতো বিষয়ে জড়িয়েছেন। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
ওকুপেশনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এই সমীক্ষায় গত জুন ও জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যজুড়ে ৯টি নিবিড় পরিচর্যা ওয়ার্ডের ৭০৯ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর জরিপ চালানো হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে,আট জনের মধ্যে একজন বা ১৩ শতাংশ বলেছেন যে, তারা গত দুই সপ্তাহে তারা মৃত্যুকে বেছে নেওয়া কিংবা নিজেকে আহত করার বিষয়ে ঘন ঘন চিন্তাভাবনা করেছেন।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে ইঙ্গিত মিলেছে যে, সংকটের প্রথম ঢেউয়ের সময় চিকিৎসকদের তুলনায় নার্সদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অধিক মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কেসিএল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নীল গ্রিনবার্গ। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) কর্মীদের ওপর মহামারির যে মানসিক প্রভাব পড়েছে সেটি তাদের উচ্চ মানের সেবা দেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এমন আশঙ্কা খুব বেশি।
তিনি বলেন, কোভিড ১৯-এ উচ্চ মৃত্যুর হার এবং হাসপাতালে ভিজিট নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বজনদের সঙ্গেও সাক্ষাতের সুযোগ ছিল না তাদের। এ ধরনের যোগাযোগ চ্যালেঞ্জ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্যে সর্বোচ্চ চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে ভেন্টিলেটরে রয়েছেনে তিন হাজার ৩০০-এরও বেশি রোগী।
কোভিড ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা বিশেষত লন্ডনে যেখানে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি, সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা বলছেন, ভর্তি বাড়তে থাকায় তারা ব্রেকিং পয়েন্টে রয়েছেন।
এর মধ্যেই যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ায় পর হাসপাতালগুলোতে রোগী উপচে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে লন্ডনে দৃশ্যত জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ৮ জানুয়ারি শুক্রবার লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ‘গুরুতর পরিস্থিতি’র (মেজর ইনসিডেন্ট) ঘোষণা দেন, যা জরুরি অবস্থা জারির সামিল। এই সময়ে জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মেয়র সাদিক খান বলেন, ভাইরাসের বিস্তার ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ায় লন্ডনের হাসপাতালগুলোর শয্যা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। ‘আমরা গুরুতর পরিস্থিতির ঘোষণা দিচ্ছি। কারণ, আমাদের শহরে হুমকি হয়ে ওঠা করোনাভাইরাসের প্রকোপ সংকটময় মুহূর্তে পৌঁছে গেছে।’
যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে ফাইজার/বায়োএনটেক এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অনুমোদন করেছে। শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। তৃতীয় টিকা হিসাবে দেশটি শুক্রবার মডার্নার টিকাও অনুমোদন করেছে। তারপরও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না দেশটি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এনএইচএস-এর ওপর চাপ কমাতে এবং করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে লকডাউনের নিয়ম আরও কঠোর করার বিষয়ে বিবেচনা করছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে