কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকার অন্যতম উপায় হিসেবে ঘর থেকে না বের হতে এবং বের হলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এসব বিষয় কি আমাদের একাকীত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে? আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে? চলুন জানা যাক।
সারা বিশ্ব এখন করোনা আতঙ্কে কাপছে। করোনার সাথে সাথে যে বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে সেটি হল একাকীত্ব। কোভিড-১৯ আমাদের জীবনকে দুঃস্বপ্নের মত বদলে দিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব এবং গৃহ বন্দী জীবন আমাদের সামাজিক প্রাণী থেকে অন্যরকম স্বার্থপর কিছুতে পরিণত করেছে। আর এর সাথে বাড়তি মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গৃহ বন্দী জীবনে আমাদের একাকীত্বের অনুভূতি।
অনেক সময় পরিচিত বা কাছের মানুষদের চোখের সামনে দেখতে পাওয়ার পরেও কারও মনে একাকীত্বের অনুভূতি হতে পারে। সমাজ এবং সামাজিকতা থেকে আলাদা থেকে আমাদের মাঝে বিষণ্ণতা এবং একাকীত্বের মত অনুভূতি জন্ম নিয়েছে। কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার জন্য আমাদেরকে সবার থেকে আলাদা বা আইসোলেটেড থাকতে বলা হয়েছে। আইসোলেশন একটি অবস্থা বা পরিস্থিতি কিন্তু একাকীত্ব একটি মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতি। আমরা কতোটা একাকী অনুভব করছি সেটি নির্ভর করে আমাদের বয়স, ব্যক্তিত্ব, আমাদের সামাজিক অবস্থান এবং অন্যান্যদের সাথে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কের ভারসাম্যের উপর। এর মানে হল, একই অবস্থায় এক এক জন ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা এক এক রকম হবে। তাই কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আইসোলেশন এবং সামাজিক দূরত্ব অনেকের মনে যেমন একাকীত্বের নিমিত্ব হয়ে উঠতে পারে তেমনি অনেকের ক্ষেত্রে সেটি নাও হতে পারে।
একাকীত্বের অনুভূতির পেছনে মূলত যে বিষয়টি মুখ্য ভূমিকা পালন করে সেটি হল একজন ব্যক্তির মানসিক স্থিতিশীলতা। যারা মানসিকভাবে বেশী স্থিতিশীল তারা অন্যান্যদের তুলনায় কম বিষণ্ণতায় ভোগে, নিজের সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন, এবং কম একাকীত্বের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। আর যাদের মানসিক স্থিতিশীলতা কম, তাদের মাঝে মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা, হতাশা এবং সবার মাঝে থেকেও একাকী অনুভব করতে দেখা যায়। তাছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের বয়স ৭০ বছর বা এর বেশী তাদের মাঝে একাকীত্বের অনুভব বেশী হয়ে থাকে। আবার, কম বয়সীদের মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত কম মিশুক প্রকৃতির তাদের মাঝেও একাকীত্বের অনুভূতি বেশী পরিলক্ষিত হয় এবং বেশী মিশুকদের মাঝে কম হয়।
তাই, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর এই সময়ে যারা একাকীত্বের ঝুঁকির মাঝে আছে তারা আইসোলেশন, সামাজিক দূরত্ব এসব বিষয়ের জন্য আরও অধিক একাকী অনুভব করতে পারেন। তাদের জন্য কিছু কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখলে এই নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা সম্ভব। যেমন, তারা পরিবারের সাথে অধিক সময় অতিবাহিত করতে পারে, শরীর চর্চা, সখের কাজগুলো করা, মুভি দেখা, জোকস পড়া, এবং বিশেষ সমস্যা হলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফোন বা অন্য কোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কোন মনস্তত্ত্ববিদের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং গৃহ বন্দী জীবন যেখানে কোভিড-১৯ মুক্তির একমাত্র উপায়, সেখানে এসব সুরক্ষা ব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত সমস্যা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতেও আমাদেরকে সচেষ্ট হতে হবে। এসব ঝুঁকির প্রতি গুরুত্বারোপ করেই আমরা কোভিড-১৯ থেকে যেমন রক্ষা পাব, তেমনি নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভাল রাখতে পারব।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে