বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, করোনা সংক্রমণ যেমন দিন দিন বেড়েই চলেছে তেমনি মানুষের মাঝে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে মানসিক স্বাথ্য জটিলতা। আর জটিলতা গুলো ঠিক মহামারীর মতোই প্রভাব রাখছে মানুষের জীবন ব্যবস্থায়।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে অনেকেই এই মহামারীকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখেননি। তারা ভাবতেই পারেনি যে করোনা আমাদের জীবন ব্যবস্থাকে এভাবে এলোমেলো করে দেবে। কিন্তু যতই দিন গেছে, সংক্রমণ যত বেড়েছে, সেসব মানুষই ধীরে ধীরে করোনা সংক্রমণের ভয়ে মুষড়ে গেছেন এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার মত বিষয়গুলোকে মেনে চলেছেন। তবে এগুলো করার পরেও মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। একে প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করার মত কোন ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত না হওয়ায় সমগ্র বিশ্বব্যাপী মানুষ আজ নিজেদের ও পরিবারের সুরক্ষা নিয়ে অত্যন্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত জীবন যাপন করছেন।
তাছাড়া কোভিড-১৯এর ফলে আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনেও ধ্বস নেমে এসেছে। এসব কারণে করোনা সংক্রমণের সাথে সাথে আমাদের সামগ্রিক মানসিক অবস্থারও অবনতি হয়েছে। মানুষের মাঝে দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ বাড়ছে। চিকিৎসক এবং মনস্তত্ত্ববিদ গণ মানুষের মাঝে এই বাড়তি মানসিক সমস্যাগুলোকে ঠিক করোনার মতোই ভয়াবহ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, করোনা হয়তো কার্যকরী প্রতিষেধক আবিষ্কার হলে এক সময় নিয়ন্ত্রণে আসবে কিন্তু মানুষের মাঝে এই বাড়তে থাকা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা গুলো বেশ সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। আসুন দেখা যাক ঠিক কি কি ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতায় আমরা ভুগছি।
১) দুশ্চিন্তা এবং কর্ম জীবনে অস্বস্তি
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের করা গবেষণায় এটা স্পষ্ট যে, মহামারীর এই দুঃসময়ে মানুষের মাঝে মানসিক চাপ এবং কর্মজীবন নিয়ে অস্বস্তি বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকের মাঝেই রয়েছে কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা এবং দুশ্চিন্তা। আর যাদের ঘরে থেকে কাজ করতে হচ্ছে তারা নতুন পরিবেশ এবং ব্যবস্থায় মানিয়ে নিতে চরম অস্বস্তিতে পড়ছেন। মহামারীর কারণে সৃষ্টি হওয়া এই অস্বাভাবিক পরিবেশে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা এবং অস্বাভাবিক পরিবেশে মানিয়ে নিতে অস্বস্তি আমাদের নিত্য দিনের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।
২) মৃত্যু নিয়ে দুর্ভাবনা
সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে, সব রকম ভাবে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার প্রচেষ্টা করার পরেও অধিকাংশ মানুষের মন থেকে করোনা আতঙ্ক এবং দুর্ভাবনা দূর করা সম্ভব হয়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরে থেকেও একজন মানুষের মন থেকে করোনা সংক্রমণের ভয় দূর হচ্ছেনা। প্রতিনিয়ত করোনায় সংক্রমণের উচ্চ হার এবং মৃত্যুর সংবাদ আমাদের সবার মাঝে সারাক্ষণ মৃত্যু ভীতি ও দুর্ভাবনার উদ্রেক করছে এবং প্রতিনিয়ত এই মানসিক সমস্যা বেড়েই চলেছে।
৩) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণ মাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকা
অস্বাভাবিক এই সময়ে আমরা প্রায় সারাক্ষণই ঘরের মধ্যে থাকছি। আর ঘরে থেকে সময় কাটানোর জন্য সারাক্ষণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গন মাধ্যমে নজর রাখছি। তাছাড়া করোনা নিয়ে আতঙ্কিত থাকার কারণে এই সংক্রান্ত সব ধরণের খবরের উপর নজর রাখার প্রতি আমাদের ঝোঁকও সৃষ্টি হয়েছে। আর সারাক্ষণ করোনা নিয়ে এসব মাধ্যমে প্রচারিত নেতিবাচক সংবাদ আমাদের মধ্যে মানসিক অশান্তি এবং ভয় সৃষ্টি করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য গণ মাধ্যম এক্ষেত্রে আমাদের মানসিক চাপের উৎস হিসেবে কাজ করছে।
৪) প্রাত্যহিক জীবনে অনিয়ম
আমাদের সবার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই করোনা আবহে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। এই অস্বাভাবিক অবস্থা আমাদের আহার, ঘুম, স্বাভাবিক অন্যান্য সব কাজে অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। এসব অনিয়ম আমাদের শারীরিক দুরবস্থার কারণ হওয়ার সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি সাধন করছে । অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, দুশ্চিন্তা, উৎসাহ হীনতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব সহ নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে।
করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি আমাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্যের এই অবনতিকে রোধ করার প্রয়াস ও করতে হবে যেন এটি আমাদের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখে যাবার সুযোগ না পায়। আর এই লক্ষ্যে বাড়তে থাকা মানসিক চাপ নিরসনে আমাদের সকলের সচেষ্ট হতে হবে। পরিবর্তিত অবস্থায় ঘাবড়ে না গিয়ে নিজেদেরকেও এই অবস্থার সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়াস করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। করোনার সাথে লড়াই করে আমাদের টিকে থাকতে হবে আর এজন্য প্রয়োজন মানসিক শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস। তাই সংক্রমণের সাথে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা গুলোও যেন না বেড়ে যায় সেদিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও সুস্থ থাকতে হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে